সজীব ওয়াজেদ জয় : ডিজিটাল বাংলাদেশের’ রূপকার!

বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যখন নিজের উন্নতির’ ভিত মজবুত করতে প্রযুক্তির নির্ভরতা বাড়াচ্ছিল তখন তৃতীয় বিশ্বের এক জননেত্রী সব অন্ধকার’ ঠেলে নানা বাধা ডিঙিয়ে নিজের মাতৃভূমিকেও উন্নতদের সাথে শামিল করার স্বপ্ন দেখেন। তার দূরদর্শিতা তাগিদ দিচ্ছিল প্রযুক্তি নির্ভর ভবিষ্যত’ বিনির্মাণের।

বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে’ এমন স্বপ্ন দেখা সে সময় ছিল দুঃসাহসিক কাজ। এ স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ কন্যা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী’ ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০০৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ একটি’ শ্লোগানে জনগণের আস্থা অর্জন করেছিলেন। শ্লোগানটি হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ।

অর্থাৎ সর্বক্ষেত্রে প্রযুক্তির’ ব্যাপক ব্যবহার। সরকারি-বেসরকারি সকল ক্ষেত্রে সেবা প্রদান এবং গ্রহণ উভয়ই হবে সহজলভ্য। জনবহুল এদেশে শিক্ষা স্বাস্থ্য আর্থিক’ লেনদেন থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজকর্ম থাকবে ডিজিটাল পরিকাঠামোয়। সহজ হয়ে যাবে শিল্প-বাণিজ্যের’ কর্মযজ্ঞ।

প্রত্যন্ত গ্রামের সাধারণ মানুষও ডিজিটাল যোগসূত্রে স¤পর্ক গড়ে তুলবে পৃথিবীর সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী’ শেখ হাসিনার এ স্বপ্নের সারথী হয়ে উঠেছিলেন তারই পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। মূলত তিনিই মূল পরিকল্পনাকারী নেপথ্য নায়ক। প্রধানমন্ত্রী’ নিজেই বলেছেন জয় আমার ক¤িপউটার শিক্ষক। তার কাছ থেকে আমি ক¤িপউটার’ চালানো শিখেছি। অন্যদিকে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত করতে জয়ের অনেক অবদান রয়েছে। যে কারণে আমি তার মা হিসাবে’ নিজেকে ধন্য মনে করি এবং গর্ববোধ করি।
সজীব ওয়াজেদ জয় ব্যাঙ্গালুরু বিশ্ববিদ্যালয়ে ক¤িপউটার সায়েন্সে পড়াশোনা শেষে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক¤িপউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনেডি স্কুল অব গভর্নমেন্ট থেকে লোক প্রশাসন বিষয়ে করেছেন স্নাতকোত্তর। শিক্ষাজীবন শেষে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিতে নিজেকে একজন সফল আইটি প্রফেশনাল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। হয়ে ওঠেন একজন সফল আইটি উদ্যোক্তা। জীবন থেকে শিক্ষা এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, এই দুইয়ের মাধ্যমে নিজেকে করে তুলেছেন অনন্য। দৃঢ় মানসিকতা আর অবিচল নেতৃত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন প্রতিনিয়ত। পিতামাতার অনুপ্রেরণা, দেশপ্রেম আর বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের আদর্শের প্রতি দৃঢ় ও অকৃত্রিম আনুগত্য জয়কে যেন প্রস্তুত করছে আগামীর জন্য।

ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে কাজ করছে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ টু আই প্রকল্পসহ একাধিক মন্ত্রণালয় ও সংস্থা। এর মূল প্রবক্তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা, ক¤িপউটার বিজ্ঞানী সজীব ওয়াজেদ জয়। তার সরাসরি তত্ত্বাবধানের কারণেই ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ বাস্তব রূপ লাভ করেছে। সাবমেরিন কেবল থেকে মহাবিশ্বের স্যাটেলাইট যুগে বাংলাদেশ। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, সারাদেশে হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি, আইসিটি ইনকুবেটর, ক¤িপটার ভিলেজ স্থাপনের কাজ চলছে। দেশের জনগণকে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা, প্রতিটি নাগরিকের জন্য কানেক্টিভিটি নিশ্চিত করা, সরকারের স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিতে নাগরিক সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো ও তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের প্রয়োজনীয় সুবিধাদানে সমন্বিতভাবে কাজ করছে শেখ হাসিনার সরকার।

প্রযুক্তির উন্নয়নের স্বাদ বিশেষভাবে পাওয়া গেছে করোনার মহামারির সময়। মহামারিতে যখন গোটা বিশ্ব টালমাটাল, মুখ থুবরে পড়ছিল বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি, পরিস্থিতি মোকাবেলায় উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছিল, তখন বাংলাদেশে ডিজিটাল উদ্যোগ মানুষকে দেখিয়েছে নতুন পথ, জুগিয়েছে প্রেরণা। দেশব্যাপী লকডাউনে শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম যেন থেমে না যায় সেজন্য প্রাথমিক, মাধ্যমিক, মাদরাসা ও কারিগরি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করা হয়। সংসদ, টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে দেশব্যাপী সম্প্রচার করা হয়। করোনা মহামারি থেকে দেশের জনগণকে সুরক্ষিত রাখতে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম, ভ্যাকসিনেশনের তথ্য সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা এবং সনদ প্রদানের লক্ষ্যে ভ্যাকসিন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ‘সুরক্ষা’ ওয়েবসাইট চালু করা হয়েছে, যা সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে এবং দেশের জনগণ এর সুবিধা পাচ্ছে

প্রযুক্তি খাতে ২০০৮ সালের ৫০ হাজারেরও কম লোকবল এখন ১৬ লাখে উন্নীত হয়েছে। ২০০৮ সালে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিলো মাত্র ৫৬ লাখ, এখন প্রায় ১৩ কোটি। সরকারি ওয়েবসাইট ছিলো ৫০টিরও কম, এখন ৫১ হাজারেও বেশি। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের বাজার ছিলো ২৬ মিলিয়ন ডলার, এখন ১ বিলিয়নের বেশি। সজীব ওয়াজেদ জয়ের নিজ উদ্যোগে প্রথমবারের মতো বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) সামিটের আয়োজন করা হয়। প্রথম সফল আয়োজনের পর দশ মাসের মাথায় অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় বিপিও সামিট। একজন দূরদৃষ্টিস¤পন্ন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ বলেই তিনি বিপিওতে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ দেখেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে ডিজিটাইজেশনের পথে অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে। দেশে অনেক কাজই এখন প্রথাগত কাগুজে পদ্ধতিতে হয় না। সচিবালয় থেকে ইউনিয়ন পরিষদ, এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের স্কুলেও পৌঁছে গেছে ডিজিটাল বাংলাদেশের ছোঁয়া। এর মূল কৃতিত্ব সজীব ওয়াজেদ জয়ের। তিনি ২০১৪ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবৈতনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত থেকে ডিজিটাল দেশ গড়ার পথে এগিয়ে চলছেন। দেশের ৪ হাজার ৫০১টি ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) থেকে গ্রামীণ জনপদের মানুষ খুব সহজেই তথ্য ও প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছেন। বর্তমানে পৌরসভা, সিটি করপোরেশন, গার্মেন্টকর্মী ও প্রবাসী নাগরিকদের জন্য আলাদা ডিজিটাল সেন্টার চালু হয়েছে। এসব ডিজিটাল সেন্টার থেকে জমির পর্চা, নামজারি, ই-নামজারি, পাসপোর্টের আবেদন ও ফি জমাদান, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, হজ রেজিস্ট্রেশন, সরকারি সেবার ফরম, টেলিমেডিসিন, জীবন বিমা, বিদেশে চাকরির আবেদন, এজেন্ট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, বাস-বিমান-লঞ্চ টিকেটিং, মেডিক্যাল ভিসা, ডাক্তারের সিরিয়াল নেয়া, মোবাইল রিচার্জ, সিম বিক্রি, বিভিন্ন ধরনের ক¤িপউটার ও কারিগরি প্রশিক্ষণ, ই-মেইল, ক¤েপাজ-প্রিন্ট-প্রশিক্ষণ, ফটো তোলা, ফটোকপি, সরকারি ফরম ডাউনলোড করা, পরীক্ষার ফলাফল জানা, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন করা, অনলাইনে ভিসার আবেদন করা, কৃষি পরামর্শ ও তথ্য সেবাসহ ২৭০-এর বেশি ধরনের সরকারি-বেসরকারি সেবা পাচ্ছে জনগণ। সারাদেশে ৮ হাজার শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করেছে সরকার এবং আরও ৫ হাজার ল্যাব স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সজীব ওয়াজেদ জয় অসাধারণ উদ্ভাবনী চিন্তার অধিকারী। তিনি তরুণ সমাজকে তাদের দক্ষতার সর্বোচ্চ ব্যবহার এবং প্রথাগত ছকের বাইরে গিয়ে সফল হতে উৎসাহী করে চলেছেন। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম তাকে ইয়াং গ্লোবাল লিডারদের একজন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এছাড়াও বহির্বিশ্বে তার গ্রহণযোগ্যতা দেশীয় যুবাদের অনুপ্রেরণা দেয়। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে হয়েও সজীব ওয়াজেদ জয় ক্ষমতার মোহগ্রস্থ নন। মাতা, পিতা এবং মাতামহের মতোই দেশ, জাতি ও উন্নয়ন নিয়ে ভাবেন। হয়তো চাইলেই তিনি বড় দলীয় পদ কিংবা সরকারের বড় চেয়ার নিজের দখলে রাখতে পারতেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর সক্রিয় রাজনীতিতে নাম লেখান ২০১০ সালে। ওই বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিতৃভূমি রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ দেওয়া হয় তাকে। এর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন তিনি।

রবার্ট কে. গ্রিনলিফ তার ‘দ্য সার্ভেন্ট অ্যাজ লিডার’ গ্রন্থে একজন নেতার রূপকল্পের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, ‘রূপকল্প হচ্ছে এমন কিছু যা একজন নেতাকে নেতৃত্ব দেয়, একজন নেতাকে পথ দেখায়।’ আসলে সকল মহান নেতারই একটি করে রূপকল্প ছিল, যা তারা স¤পন্ন করেছেন। সেই রূপকল্পই তাদের প্রতিটি চেষ্টার পিছনে শক্তি জুগিয়েছে। তাদেরকে অন্য সব সমস্যা অতিক্রম করার শক্তি দিয়েছে। একজন নেতা একটি রূপকল্প সাথে নিয়ে সব জায়গায় যান এবং এটি একটি সংক্রামক চেতনার মতো যা সকলকে ¯পর্শ করে। তারপর সকলে সেই একই চেতনা নিয়ে নেতার পাশে দাঁড়ায় এবং এগিয়ে যায়। সজীব ওয়াজেদ জয়ও ঠিক ডিজিটালাইজেশন নামক এক রূপকল্প এ দেশে ফেরি করে বেড়িয়েছেন। তা ছড়িয়ে পড়েছে দেশবাসীর মাঝে। এবার শুধু তার কাজ সামনে থেকে নির্দেশনা দেওয়া।
আজ ২৭ জুলাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য দৌহিত্র, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র, ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের শুভ জন্মদিন। তার সাফল্য আর দীর্ঘায়ু কামনা করি। লেখকঃ উপ তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিষয়ক স¤পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *