চেন্নাইতে দুই সন্তান হা’রানোর ম’র্মান্তিক দুঃখের কথা বলতে গিয়ে কাঁদলেন ইরফান সাজ্জাদ

আগামী জুলাই মাসে ঘরে আসার কথা ছিল ফুটফুটে দুই যমজ ছেলে–মেয়ের। এই খবরে অসুস্থ স্ত্রীও মানসিকভাবে শক্তি পাচ্ছিলেন। অনাগত সন্তানের পথ চেয়ে প্রস্তুতিই নিচ্ছিলেন অভিনেতা ইরফান সাজ্জাদ ও তাঁর স্ত্রী শারমিন সাজ্জাদ। দুজন মিলে অনাগত ছেলের নাম রেখেছিলেন প্রিয়, মেয়ের নাম মায়া। ৫ মে ভারতের চেন্নাই থেকে দেশে ফেরার সব ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সুখের ফেরা হলো না। ফেরার আগে তাঁর স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। করতে হয় অস্ত্রোপচার। কিন্তু অস্ত্রোপচার করে দুই সন্তানকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। স্ত্রীর অবস্থাও আশঙ্কাজনক ছিল। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অনেক গল্পের শেষটা অন্য রকম দেখেছেন। কিন্তু সেসব গল্পকে যেন হার মানিয়েছে তাঁর বাস্তব জীবনের গল্প। সেই জীবনের গল্প বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন ইরফান।

২০২১ সালের শেষের দিকের কথা। ইরফান তখন জানিয়েছিলেন, স্ত্রী জটিল রোগে আক্রান্ত। তাঁকে নিয়েই ছুটতে হচ্ছে ভারতের চেন্নাইয়ের একটি হাসপাতালে। গত বছরের প্রথম দিকে শুরু হয় স্ত্রীর চিকিৎসা। কিন্তু শুরুতেই চিকিৎসকদের কথা শুনে ভয় পেয়ে যান ইরফান, ‘আমার স্ত্রী জটিল রোগে আক্রান্ত। আমরা বুঝতে পারি বিষয়টা এতটা জটিল। পরে চিকিৎসকেরা আশ্বস্ত করেন। কিছুটা আশা পাই। তাঁরা পরামর্শ দিলেন, অস্ত্রোপচার করতে হবে।’
চিকিৎসক ও স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করেন এই অভিনেতা। সব ঠিকঠাক ছিল। অনাগত সন্তানের বয়স হয়েছিল ছয় মাস। চিকিৎসক একটা সময় পরামর্শ দেন, আপাতত দেশে ফিরে যেতে পারবেন। ৫ মে ফেরার দিন ধার্য হয়। উড়োজাহাজের টিকিটও কেনেন। স্ত্রীর শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় চিকিৎসকদের পরামর্শে দুই মাস পর অস্ত্রোপচার করে দুই সন্তানকে পৃথিবীতে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু শেষটা আর পরিকল্পনামতো হলো না।

চেন্নাই থেকে ইরফান বলেন, ‘ফেরার দিন ভোরে আমার স্ত্রীর শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। জরুরি ভিত্তিতে সার্জারি করাতে হয়। সার্জারির এই ছয়–সাত ঘণ্টা যেন আমাদের জীবনের সবকিছু ওটল–পালট করে দিল। আমার সন্তানদের বাঁচানো গেল না।’ কথাগুলো বলার সময় ভেঙে পড়েন এই অভিনেতা, গলাটা ভারী হয়ে আসে। কিছুটা সময় নিয়ে তিনি বলতে থাকেন, ‘অবস্থা এতটাই খারাপ হয় যে একসময় চিকিৎসকেরা জানান, আমার স্ত্রীও বাঁচবে কি না, নিশ্চয়তা নেই। একের পর এক রক্ত ঝরছে। ১০ ব্যাগ রক্ত লাগে। সবকিছু আমার কাছে দুঃস্বপ্ন মনে হচ্ছিল। অপারেশনের পর চিকিৎসকেরা জানান, আমার স্ত্রীকে বাঁচানো যাবে। এটাও তাঁদের কাছে মিরাকল মনে হয়েছে।’

  • পরিবারসহ সড়ক দুর্ঘটনার কবলে বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানি ডেপুটি হাইকমিশনার
  • ৫ মে সেই অস্ত্রোপচারের পর থেকেই চিকিৎসাধীন এই অভিনেতার স্ত্রী। এখন দেশে ফিরে আসাও সম্ভব নয়। তাই সিদ্ধান্ত নিয়ে মৃত দুই সন্তানকে চেন্নাইতেই কবর দেন। স্ত্রী কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর থেকেই শারীরিক মানসিকভাবে খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। সাজ্জাদ বলেন, ‘এখানে থাকলে আমরা আরও বেশি খারাপ থাকব। আর থাকতে চাচ্ছি না। স্ত্রীর বাকি চিকিৎসা বাংলাদেশে করাব। চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করে সেভাবেই ব্যবস্থা নিয়েছি। মাঝেমধ্যে চেন্নাইয়ে আসতে হবে।’ দু–এক দিনের মধ্যেই তাঁদের দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

    স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য দীর্ঘ দেড় বছর কাজ থেকে দূরে এই অভিনেতা। চেয়েছিলেন দেশে ফিরে আবার কাজে ফিরবেন। সবশেষে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে শুধু একটা জিনিসকে মানুষ তার একান্ত নিজের বলতে পারে। সেটা তার নিজের সন্তান। আল্লাহ আমাদের একসঙ্গে দুজনকে দিয়েছিলেন, আবার নিয়েও গেলেন। অনেক গল্পে অভিনয় করেছি আমি। কিন্তু কখনো ভাবিনি, কল্পনা করিনি, নিজের জীবনের গল্প এমন মর্মান্তিক হবে। হয়তো জীবনটাই এমন যেখানে বাস্তবতা কল্পনাকে হার মানায়।

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *