৩২ লাখ মানুষের দেশে ৪০ লাখ ঘোড়া!

পৃথিবীতে দিন দিন বাড়ছে জনসংখ্যা। কিন্তু পৃথিবীতে এমন একটা দেশ আছে যেখানে জনসংখ্যার চেয়ে ঘোড়ার সংখ্যা বেশি! দেশটি হলো মঙ্গোলিয়া, যেখানে মানুষের থেকে ঘোড়ার সংখ্যা বেশি। সম্প্রতি সেখানে ঘুরতে গিয়ে এমন দাবিই করেছেন এক ভ্লগার।

১৫ লাখ ৬৪ হাজার ১১৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকার একটি দেশ মঙ্গোলিয়া। পৃথিবীর ১৯তম বৃহত্তম দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা থেকে সামান্য ছোট। ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গোলিয়ার মোট জনসংখ্যা মাত্র ৩১ লাখ ৯৮ হাজার ৯১৩ জন। জনসংখ্যার নিরিখে পৃথিবীতে ১৩৪তম স্থানে রয়েছে দেশটি। সেখানে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে মাত্র দুইজন করে লোক বাস করেন।

বলা হয়, মঙ্গোলিয়ায় জনঘনত্ব গোটা দুনিয়ায় সবথেকে কম। সারা দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক বাস করেন রাজধানী উলানবাতারে। জনসংখ্যার নিরিখে তার পরেই রয়েছে উত্তরের ডারহান শহর। বাকি দেশের বহু অংশ মাইলের পর মাইল ফাঁকা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪০০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত মঙ্গোলিয়া। দেশের বেশির ভাগ জমি চাষযোগ্য নয়। হয় বালিতে ঢাকা মরুভূমি, নয়তো দুর্গম। সে কারণে চাষবাস প্রায় হয় না বললেই চলে।

মঙ্গোলিয়ার নাগরিকরা তাই সবজি বা শস্যের বদলে খাওয়ার জন্য মাংস এবং দুগ্ধজাত খাবারেই বেশি ভরসা করেন। তারা বিভিন্ন রকম চিজ তৈরি করতে পারেন। সেগুলো সংরক্ষণ করাও সুবিধাজনক। ফলে দেশের বেশির ভাগ নাগরিকের জীবিকাও পশুপালন। দুধ, দুগ্ধজাত খাবার, মাংস বিক্রি করেই চলে তাদের সংসার।

মঙ্গোলিয়ার অন্যতম বৈচিত্র্য হলো ঘোড়া। সেখানে প্রায় ৪০ লাখ ঘোড়া রয়েছে। অর্থাৎ মানুষের থেকেও দেশে ঘোড়ার সংখ্যা বেশি। হাজার হাজার বছর ধরে দেশটিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে প্রাণীটি। বলা হয়, মঙ্গোল সম্রাট চেঙ্গিস খানকে বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল এই দুর্ধর্ষ ঘোড়ার দল।

মঙ্গোলিয়ান ঘোড়ার উচ্চতা কম। কিন্তু বিভিন্ন প্রজাতির ঘোড়ার থেকে এরা জোরে ছোটে। দুর্গম এলাকায় যুদ্ধ বা শিকারে এরা পারদর্শী। এই ঘোড়া হিমাঙ্কের ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস নিচে থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উষ্ণতাতেও অনায়াসে মানিয়ে নিতে পারে। এদের বিশেষ কোনো খাবারেরও প্রয়োজন নেই। মাঠের ঘাস আর মাঝেমধ্যে পানি পেলেই চলে যায়। না থেমে টানা ১০ কিলোমিটার দৌড়াতে পারে মঙ্গোলিয়ার ঘোড়া। প্রকৃতির সঙ্গে এমন খাপ খাইয়ে নেওয়ার কারণে দুর্গম দেশে তাদের সংখ্যা বেড়েছে সহজে।

মঙ্গোলিয়ায় জনঘনত্ব কম হওয়ার অন্যতম কারণ দুর্গমতা, চাষবাসের অসুবিধা, চরম আবহাওয়া, দারিদ্র, স্বাস্থ্য পরিষেবার অভাব। দেশের ৩৬ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। আর এসব প্রতিকূলতার সঙ্গে সহজেই মানিয়ে নিয়েছে ঘোড়াকুল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *