হামাস-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলা নিয়ে এখন পর্যন্ত যা জানা গেল

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের দিকে একের পর এক রকেট হামলা চালিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামীদের সংগঠন

হামাস। এসব হামলায় ৪০ ইসরায়েলি নিহত এবং আরও সাত শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। হামাসের রকেট হামলার জবাবে

গাজায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর পাল্টা বিমান হামলা চালালে ১২১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। খবর আলজাজিরা ও বিবিসির।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলেছেন, শনিবারের নজিরবিহীন রকেট হামলায় অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছে। এ ছাড়া ৭৫০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছে।

শনিবার সকালে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে এসব রকেট হামলা শুরু করে হামাস। হামলার প্রথম ২০ মিনিটেই ৫ হাজার রকেট ছোড়ার

কথা জানিয়েছে হামাস। ফিলিস্তিনিদের এমন মুহুর্মুহু হামলার পরিপ্রেক্ষিতে দেশে যুদ্ধ পরিস্থিতি ঘোষণা করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা ইসরায়েলি সামরিক যান জব্দ করে তা গাজার

দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া প্রায় ৪০ জনের মতো ইসরায়েলি সেনাকে গ্রেপ্তার করেছে ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা। এই অভিযানে

হামাসের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে ফিলিস্তিনের আরেক স্বাধীনতাকামী সংগঠন ইসলামিক জিহাদ।

হামাসের অব্যাহত হামলার পরপর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘ইসরায়েলের জনগণ, আমরা যুদ্ধের মধ্যে

রয়েছি। আমরা জিতব।’ হামাসের হামলার পাঁচ ঘণ্টা পর শনিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া বিবৃতিতে এসব কথা বলেছেন নেতানিয়াহু।

তিনি বলেন, ‘শত্রুদের এ জন্য এমন মূল্য দিতে হবে, যে সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই।’

এদিকে হামাসকে পাল্টা জবাব দিতে গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর

হামলায় গাজায় অন্তত ১২১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও প্রায় এক হাজার মানুষ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে

ইসরায়েলি বিমান হামলার মাত্রা বাড়ছে বলে জানিয়েছে আলজাজিরা।

এদিকে হামাসের এ হামলার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র নিন্দা জানিয়েছে। ফিলিস্তিনবিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের কার্যালয় সামাজিক মাধ্যম এক্সে

জানিয়েছে, সন্ত্রাস ও সহিংসতায় কোনো কিছুর সমাধান হয় না।
তবে ইসরায়েলে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় হামলার ঘটনায়

ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের অভিবাদন জানিয়েছে ইরান। ইরানের গণমাধ্যম আইএসএনএ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলি খামেনির এক উপদেষ্টা শনিবার ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সবচেয়ে বড় এই হামলা করায় অভিবাদন

জানান। রাহিম সাফাভি নামের ওই উপদেষ্টা বলেন, আমরা ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের অভিবাদন জানাই। যতক্ষণ পর্যন্ত ফিলিস্তিন

ও জেরুজালেমের স্বাধীনতা অর্জন হচ্ছে না, আমরা ফিলিস্তিনিদের যোদ্ধাদের পাশে থাকতে চাই।

হঠাৎ এত বড় হামলা

হামাসের মুখপাত্র খালেদ কাদোমি আলজাজিরাকে বলেছেন, দশকের পর দশক ইসরায়েলি দখলদাররা ফিলিস্তিনিদের ওপর

নৃশংসতা চালাচ্ছে। এসব নৃশংসতার পাল্টা জবাব হিসেবে তারা এ সামরিক অভিযান শুরু করেছে।

তিনি বলেন, আমরা চাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেন গাজায় নৃশংসতা বন্ধ করে। ফিলিস্তিনি জনগণ ও আল-আকসার মতো

আমাদের পবিত্র স্থানে নৃশংসতা বন্ধ করে। এসব কারণেই এবারে যুদ্ধ শুরু হলো।

ইহুদিদের সুকট উৎসবের ছুটির দিনে সম্প্রতি আল আকসা মসজিদে হাজারো ইসরায়েলি সেটেলার ঢুকে পড়ে। এ ছাড়া সম্প্রতি

ইসরায়েলি সেটেলারদের আগ্রাসন আরও বেড়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, বছরের প্রথম আট মাসে প্রতিদিন অন্তত ৩ জন করে

ফিলিস্তিনি নিপীড়নের শিকার হয়েছে। এসব কারণেই এ হামলা চালিয়েছে হামাস।

ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে এ পর্যন্ত ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের পাল্টাপাল্টি হামলায়

কমপক্ষে ২৪৭ ফিলিস্তিনি, ৩২ ইসরায়েলি এবং দুজন বিদেশি নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে বেসামরিক নাগরিকও আছেন।

বদলে যাবে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি

শনিবারের কয়েক ঘণ্টার ঘটনা পুরো মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহজুব জাওয়েইরি বলেছেন, গত কয়েক ঘণ্টায় যা ঘটেছে তা এ অঞ্চলের রাজনীতিতে গেম চেঞ্জার হিসেবে কাজ করবে।

তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো (ইসরায়েলি) দখলদার ও সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফিলিস্তিনিরা

স্বাধীনতাকামীরা। আমার মনে হয়, নিজেদের ভাবমূর্তি রক্ষা নিয়ে এবার প্রকৃত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ইসরায়েল। এ ছাড়া

আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক কুশীলবদের নিয়ে হামাস যে ব্যাখ্যা দিয়েছে তা-ও বেশ আকর্ষণীয়।

  • ইসরায়েলি হামলায় ১৬০ ফিলিস্তিনি নিহত
  • Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *