সৌদিতে যৌথ সম্মেলনে যা বললেন আরব-মুসলিম নেতারা

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান অবিলম্বে বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে মুসলিম বিশ্বের ৫৭ দেশের শীর্ষ সংগঠন ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) ও আরব বিশ্বের দেশগুলো। শনিবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে ওআইসি ও আরব বিশ্বের দেশগুলোর সম্মেলনে এই আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সংঘটিত ‘অপরাধের’ দায় ইসরায়েলের উল্লেখ করে

এর নিন্দা জানানো হয়েছে। সৌদি আরবের ডি-ফ্যাক্টো নেতা যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান রিয়াদে শীর্ষ এই সম্মেলনের আয়োজন করেছেন। সম্মেলনে আরব ও মুসলিম বিশ্বের নেতারা অংশ নিয়েছেন। গাজায় চলমান ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞ বন্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ওপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টায় এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে সৌদি

আরব। ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি এবং সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদসহ কয়েক ডজন মুসলিম নেতা সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। যুবরাজ মোহাম্মদ বলেছেন, ফিলিস্তিনে আমাদের ভাইদের বিরুদ্ধে এই বর্বর যুদ্ধ স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান এবং এর নিন্দা জানায় সৌদি আরব।

সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, ‘‘আমরা একটি মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছি; যা আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট ইসরায়েলি লঙ্ঘন। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতার প্রমাণ দেয় এই বিপর্যয়।’’সম্মেলনে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেন, ফিলিস্তিনিরা ‘‘গণহত্যা যুদ্ধের’’ মুখোমুখি হয়েছে। ইসরায়েলি ‘‘আগ্রাসন’’ বন্ধ করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

আর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের প্রশংসা করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তেল ও পণ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে ইসলামিক দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।রাইসি বলেন, ইসরায়েলকে প্রতিরোধ করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলায় আমরা হামাসের হাতে চুম্বন করি।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা চালায় গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাস। হামাসের হামলার জবাবে যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েল। এক মাসের বেশি সময় ধরে চলমান এই যুদ্ধ গাজা উপত্যকা ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে। ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় প্রত্যেক দিন শত শত মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানির সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। নিহতদের ৪০ শতাংশই শিশু।

• বিভক্ত আরব বিশ্ব
ফিলিস্তিনের কর্মকর্তারা বলেছেন, গাজা শহরের বৃহত্তম আল-শিফা হাসপাতালের কাছে শনিবার রাতভর তীব্র সংঘর্ষ হয়েছে। জ্বালানি ফুরিয়ে হাসপাতালের জেনারেটর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ইনকিউবেটরে থাকা ৩৯ শিশুর মধ্যে অন্তত দুজন নিহত হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ইসরায়েলের গোলার আঘাতে একজন রোগী নিহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

হামাস-ইসরায়েলের যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের চিরাচরিত সব জোটকে উড়িয়ে দিয়েছে। এই যুদ্ধের ফলে ইরানের আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে রিয়াদ এবং হামাসের নিন্দা জানাতে মার্কিন চাপের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে। একই সঙ্গে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পরিকল্পনা স্থগিত রেখেছে।আর গত এক দশকের বেশি সময়ের মধ্যে ইরানের প্রথম কোনো

রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ইব্রাহিম রাইসি সৌদি আরব সফরে গেছেন। গত বছরের মার্চে চীনের মধ্যস্থতায় কয়েক বছরের বৈরীতার অবসান ঘটিয়ে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেয় রিয়াদ ও তেহরান।রিয়াদে যৌথ সম্মেলনে অংশ নিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের বিরোধের স্থায়ী সমাধানে আন্তর্জাতিক শান্তি

সম্মেলনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘গাজায় আমাদের যা দরকার তা কয়েক ঘণ্টার বিরতি নয়, বরং আমাদের স্থায়ী যুদ্ধবিরতি দরকার।’’কাতারের আমির বলেছেন, তার দেশ— যেখানে কয়েকজন হামাস নেতা রয়েছেন— ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির জন্য মধ্যস্থতা করতে চাইছে। শিগগিরই গাজায় মানবিক যুদ্ধবিরতি হবে বলে

আশাপ্রকাশ করেছেন তিনি। শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি বলেন, ‘‘ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইনের ঊর্ধ্বে— বিশ্ব সম্প্রদায় এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি কতদিন পোষণ করবে?’’ওআইসি এবং আরব লীগের নেতাদের নিয়ে শনিবার ও রোববার পৃথকভাবে দুটি শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন পরিকল্পনা করেছিল সৌদি আরব। পরে সৌদি আরবের

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘গাজার নজিরবিহীন পরিস্থিতির আলোকে যৌথভাবে শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের ঘোষণা দেয়।হামাস সৌদির এই শীর্ষ সম্মেলনে ঐতিহাসিক ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং অবিলম্বে ইহুদিবাদী আগ্রাসন বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। সম্মেলনে আলজেরিয়ার নেতৃত্বে কিছু দেশ ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুরোপুরি ছিন্ন করার

আহ্বান জানালেও আরব পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এতে ভিন্নমত পোষণ করেন বলে সম্মেলনে অংশ নেওয়া দুটির দেশের প্রতিনিধিরা রয়টার্সকে জানিয়েছেন।তারা বলেছেন, অন্যান্য আরব দেশ— যারা ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে, তারা নেতানিয়াহুর সরকারের সাথে আলোচনার চ্যানেল খোলা রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে আলজেরিয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।

সূত্র: রয়টার্স।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *