রাজনীতি এখন ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গত নির্বাচনে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী। এ ছাড়া তিনি দলটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির সদস্য। অভিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ মেয়র সাদেক হোসেন খোকার পুত্র।

স্কলাস্টিকা স্কুল থেকে ও-লেভেল এবং এ-লেভেল শেষে উচ্চশিক্ষার জন্য যান ইউনিভার্সিটি অব হার্টফোর্ডশায়ারে (যুক্তরাজ্য)। সেখানে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আন্ডারগ্র্যাজুয়েশন। তরুণ রাজনীতিক হিসেবে দেশের বর্তমান রাজনীতি, আগামী নির্বাচন, বিএনপির আন্দোলন, বিদেশিদের ভূমিকা প্রভৃতি নিয়ে কথা বলেছেন।

  • সায়মা ওয়াজেদকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক পদে মনোনয়ন
  • বাংলাদেশ সুস্থ রাজনীতির জায়গায় এখন আর নেই। তাই বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই। এক-এগারোর পর থেকে আমরা এক ধরনের বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়ার মধ্যে ঢুকে গেছি।

    দীর্ঘমেয়াদে এর ক্ষতিকর প্রভাবগুলো এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি। নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশে দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মহোৎসব চলছে। সব প্রতিষ্ঠানকে নষ্ট করে ফেলা হয়েছে।

    গত ১৫ বছরে আমরা একটি স্বাভাবিক নির্বাচন হতে দেখিনি। মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। ২০১৪ ও ’১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। এখন এটি ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে।

    গত ১৪ বছর ধরে দেশে গণতন্ত্র নেই। মাফিয়ারা এখন দেশ নিয়ন্ত্রণ করছে। রাজনীতিক হিসেবে না হলেও দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমরা চাই সংকট থেকে উত্তরণ ঘটুক। সে চেষ্টাই আমরা করছি।

    নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। আপনারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন কি?

    ইশরাক হোসেন : নির্বাচন কমিশন সরকারের সিদ্ধান্ত এবং নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা করেছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন যে স্বাধীন নয়, তার প্রতিফলনই আমরা দেখতে পাচ্ছি। নির্বাচন কমিশনেরও সরকারের আজ্ঞা পালন করা ছাড়া অন্য কিছু করার নেই। কারণ তাদের হাত-পা বাঁধা। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রধান স্থানীয় নির্বাচন এবং উপনির্বাচনসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে কিছু ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সরকারের চাপে অতি দ্রুতই তাকে তার স্টেটমেন্ট পরিবর্তন করতে হয়েছে। সরকার যেভাবে নির্দেশনা দিচ্ছে, তারা সেই অনুযায়ী কাজ করছেন। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট সম্পূর্ণ আলাদা। বাংলাদেশে মাঠের রাজনীতি এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে ধরনের আন্দোলন গড়ে উঠেছে, তাতে সবকিছুই সরকারের শিডিউল অনুযায়ী হবে এর কোনো বাস্তবতা নেই। আমরা অতীতেও দেখেছি, রাজনীতির মাঠে দুদিনের মধ্যে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে যায়। জনগণের ইচ্ছানুযায়ী পরিবর্তন আসবে বলে আমি মনে করি।

    বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল একটি গণতান্ত্রিক রাজনীতির দল। আমরা যদি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যেতে চাই, তাহলে অবশ্যই একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এর বিকল্প কোনো পথ নেই। ২০১৪ ও ’১৮ সালে প্রহসনের নির্বাচন আমরা আর চাই না। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ যাদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবে, তারাই রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। অবশ্যই নির্বাচন হতে হবে এবং সেটা কোনো প্রহসনের নির্বাচন হবে না।

    রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহাবস্থানের জায়গাটা নেই কেন?

    ইশরাক হোসেন : এ বিষয়টা আলোচনা করতে গেলে অতীতের অনেক ঘটনা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। যে ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করে মূলত দুই দলের মধ্যে দূরত্ব এবং বৈরিতা তৈরি হয়েছে। দিনে দিনে এই বৈরিতা বাড়তে বাড়তে এমন একটি পর্যায়ে চলে গেছে, যার ফলাফল খুবই তিক্ত। অনেক ক্ষেত্রে এটা ব্যক্তিগত শত্রুতার পর্যায়েও চলে গেছে। কিন্তু অতীতে যে ঘটনাই ঘটেছে, তার জন্য আমরা বর্তমান প্রজন্ম এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম কেন ভুক্তভোগী হব? এসব ঘটনার পেছনে আমাদের কোনো ভূমিকাই ছিল না।

    আমি যখন রাজনীতিতে আসি, তখন কখনোই ভাবিনি যে এরকম একটি পরিবেশে আমাকে রাজনীতি করতে হবে। আমি হয়তো ছোটবেলা থেকেই রাজনীতির ইচ্ছা পোষণ করেছি। কিন্তু যখনই রাজনীতিতে প্রবেশ করি, তখন সংকটময় রাজনৈতিক পরিবেশ দেখতে পাই। যেখানে সব রাষ্ট্রীয় যন্ত্রকে বিরোধী দল দমনে ব্যবহার করা হচ্ছে। হামলা, মামলা, গুম, খুন, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দিনদুপুরে গুলি—এ ধরনের সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হয়ে রাজনীতি করতে হচ্ছে। এ সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া।

    সরকার যদি এবারও একটি নির্বাচন আয়োজন করে তাহলে বিএনপি কী করবে?

    ইশরাক হোসেন : আমরা কোনোদিন ধরে নিইনি যে, আমরা দাবি করব আর আওয়ামী লীগ সেটা মেনে নেবে। আমরা এমনটা ভাবছিও না। আমরা আমাদের আন্দোলনে অটল রয়েছি এবং অবশ্যই জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। আমরা জানি আওয়ামী লীগ নির্বাচন করার চেষ্টা করবে। তারা নির্বাচন করে ফেলার জন্য সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করবে, সেটাও আমরা জানি। তারা আমাদের ওপর গুম, খুন, হামলা, মামলা, জেল-জুলুম, অত্যাচার চালাবে—সেটাও আমরা জানি। আমরা আমাদের জীবনকে বাজি রেখেই আন্দোলনে নেমেছি।

    পাতানো নির্বাচন বৈধতা দেওয়ার জন্য বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং এই সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় আমরা কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব না—এটা আমাদের ফাইনাল অবজারভেশন, যেটা আমি দলীয় চেয়ারম্যান থেকে পেয়েছি।

    আওয়ামী লীগ বলছে, আপনাদের আন্দোলনে শুধু কর্মীরা রয়েছে, জনগণ নেই। আপনি কী বলবেন?

    ইশরাক হোসেন : এটা একেবারেই ভ্রান্ত কথা। আমাদের আন্দোলন আজকের জায়গায় পৌঁছেছে শুধু জনগণের জন্য। আমাদের বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটেছে। একটা রাজনৈতিক দলের কর্মীসংখ্যা কখনো এত হতে পারে না। আমাদের আন্দোলনে ব্যাপক জনসম্পৃক্ততা রয়েছে। বিভাগীয় সমাবেশগুলোর আগে আমরা ঢাকার বিভিন্ন জোনে সমাবেশ করেছি। সেখানেও ব্যাপক জনসমাগম ঘটেছে। আমরা নিজেরাও আশা করিনি আমাদের সমাবেশগুলোতে এত জনসমাগম ঘটবে।

    আওয়ামী লীগই এখন শুধু কর্মীনির্ভর, তাও ভাড়াটে কর্মী। ভাড়াটে কর্মী নিয়েই তাদের সমাবেশগুলো চলছে। দেয়াল টপকে কীভাবে তাদের সমাবেশ থেকে লোকজন পালিয়ে যাচ্ছে, সেটা অতীতে আপনারা দেখেছেন। বিভিন্ন মিল, কলকারখানাগুলোতে চিঠি লিখে সেগুলো বন্ধ রেখে কর্মীদের বাধ্য করা হয়েছে তাদের জনসমাবেশ বা প্রোগ্রামগুলোতে আসার জন্য। আওয়ামী লীগ নিজেদের দুর্বলতা ঢাকার জন্য বলছে, বিএনপির সমাবেশে জনসম্পৃক্ততা নেই।

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *