যেসব কারণে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে জড়াবে না আরব বিশ্ব

ফিলি’স্তিনের স্বাধীনতা’কামী গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরা’য়েলের যুদ্ধ শুরুর পর পেরিয়ে গেছে প্রায় দুই সপ্তাহ। এই ক’দি’নে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে সাড়ে ৩ হাজার ফি’লিস্তি”নি। মাত্র দুই দিন আগেও ইসরায়েলি হামলায় গা’জার একটি ‘হাসপাতালে প্রায় ৫০০ লোক নিহত

 

হয়েছে। যদিও ‘ইসরায়েল এ’ই হামলার দায় অস্বীকার করেছে। কিন্তু তা’তেই বা কী ‘আসে-যায়। প্রাণহানি, হতাহত যা হওয়া’র তা হয়েই গেছে।’গাজাবাসীর ওপর ইসরায়েলের এই বর্ব’রতার প্রতিবাদে উত্তা’ল হয়ে উঠেছে পশ্চিম তীর থেকে ‘শুরু করে জর্ডান, সি’রিয়া থেকে সুদূর তিউনিসিয়াও।

 

আজও’ আরব বিশ্বের ক’য়েক কোটি মানুষ ফিলিস্তিনিদের প্রতি স’হানুভূতিশীল।’ কিন্তু ২০১৪ সালে হামাস-ইসরায়েলের মধ্যকার ৫০ দিনের’ যুদ্ধের সময় আরব বিশ্ব যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল’, তার থেকে বর্তমানে বেশ কিছু বিষয় আলাদা।প্রথম যে বিষয়’টি ভিন্ন সেটি হলো আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক’ প্রেক্ষাপট।

 

২০২০ সালে চারটি আ’রব দেশ বাহরাইন, মরক্কো, সুদান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত’ একসময়কার বৈরী ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক ক’রেছে। সৌদি আরবও উল্লিখিত চারটি দেশের পথেই হাঁটছে’। এর আগে মাত্র দুটি দেশ মিসর ও জর্ডান ইসরায়েলকে স্বীকৃ’তি দিয়েছিল।

 

এই সম্পর্ক স্বাভাবিকী’করণের ফলে এসব দেশের গণমাধ্যমেও বর্তমান হা’মাস-ইসরায়েল সংকট কভার করার ধরন বদলে গেছে।হামাসে ‘র অন্যতম দাতা দেশ কাতারের সংবাদমাধ্যম আল-জাজি’রা হামাস-ইসরায়েল সংকটকে

 

বেশ প্রাধান্য দি’চ্ছে।’ সেখানে গাজাবাসীর খবর প্রাধান্য পাচ্ছে। কিন্তু সৌদি ‘আর’বের গণমাধ্যমগুলোকে গ্রহণ করতে হয়েছে কৌশলী’ অব’স্থান। সৌদি গণমাধ্যমগুলো গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাস’ন-ধ্বংসযজ্ঞ তুলে ধরলেও হামাসকে

 

কভারেজ দিচ্ছে না। কি’ন্তু প্রায়ই আরবিভাষী ইহুদিদের আলোচনায় ডেকে’ আনছে। এর পাশাপাশি ফিলিস্তিনের প্রেক্ষাপটে ইস’রায়েলি সশস্ত্র বাহিনীকে দখলদার বাহিনী বলা হবে কি না, তা নিয়েও সৌদি আরবের গণমাধ্যমগুলোতে

 

বিতর্ক রয়েছে।দ্বিতীয় আরেকটি বিষয় হলো বড় আকারের সংঘাতের আশঙ্কা। ২০১৪ সালের যুদ্ধ ফিলিস্তিনে সীমাবদ্ধ থাকলেও এবার তা আশপাশের দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ার তীব্র আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলোতে।

 

যেমন—যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মিসরকে উদ্বাস্তু গাজাবাসীদের আশ্রয় দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে মিসরীয়দের প্রতিক্রিয়া আগের মতো নয়।মিসরীয় সমাজের বড় একটি অংশ চায় না গাজার উদ্বাস্তুদের গ্রহণ

 

করতে। এ বিষয়ে মিসরের সরকারপন্থী রাজনীতি বিশ্লেষক ইব্রাহিম ঈসা হামাসকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনারা কেন আপনাদের যুদ্ধ আমাদের ওপর চাপিয়ে দিতে চাইছেন?’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা কেন আপনাদের স্বার্থে ১০

 

কোটি মিস’রীয়র জীবন বিপন্ন করতে চান?’ মিসরীয় সমাজের অন্যান্য’ পণ্ডিতও প্রায় একই ধরনের মনোভাব পোষণ করে’ছেন। অনেকে হয়তো বলতে পারেন, এটি মিসর সরকারের অব’স্থান। কিন্তু বাস্তবতা হলো, মিসরের জনগণের

 

বড় একটি অংশই এ’মন মনোভাব পোষণ করে।একই পরিস্থিতি লেবাননেও। বি’গত চার বছর ধরে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে থাকা’ লেবাননবাসী আশঙ্কা করছে,দশের সবচেয়ে শ’ক্তিশালী গেরিলা গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ হয়তো

 

ইসরায়েলের সঙ্গে যু’দ্ধে জড়িয়ে পড়বে। ফলে রাষ্ট্র হিসেবে লেবানন ২০০৬ সা’লের মতো আবারও দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে। ”এ বিষয়ে লেবাননের জনপ্রিয় কলামিস্ট ও ফিলিস্তি’নপন্থী সাংবাদিক দিমা সাদেক

 

হামাসকে উদ্দেশ্য” করে বলেন, ‘আমাদের এই নরকে প্রবেশ করতে বাধ্য করবে’ন না।’তৃতীয় যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, এই অঞ্চল” আগের চেয়ে অনেক বেশি বিভক্ত। উদাহরণ হিসেবে সিরি’য়ার কথাই ধরা যাক। দেশটিতে

 

ইসরায়েল’বিরোধী মানুষের অভাব নেই। আবার হামাসবিরোধী ‘মানুষেরও অভাব নেই। এর বাইরেও বিগত কয়েক দিনে বিভি’ন্ন আরব দেশের অনেকেই গাজা ও হামাস সম্পর্কে এমন কিছু ‘কথা বলেছেন, যা কেবল কট্টর ডানপন্থী

 

ইসরায়েলি’দের পক্ষ থেকেই শোনা যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁ’রা জানিয়েছেন, হামাসের জন্য তাঁদের কোনো সমর্থন নেই। কিন্তু’ তাঁরা খোলা খোলাখুলি বিষয়টি প্রকাশ করতে সাহস পান না।’ বিপরীত চিত্রও আছে।

 

যেমন—ফিলি’স্তিন ইস্যুতে আলোচনার আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যা’ন্টনি ব্লিঙ্কেনকে কয়েক ঘণ্টা বসিয়ে রেখেছিলেন মো’হাম্মদ বিন সালমান। তিনি এমনটা করেছেন, কারণ তার দেশের সা’ধারণ জনগণ এখনো ফিলিস্তিনের

 

স্বাধীনতার’ পক্ষে কথা বলে। জনরোষ কমাতে তিনি হয়তো এ ধরনের ‘আচরণের আশ্রয় নিয়েছেন।আবার জর্ডান ইসরায়েলকে স্বীকৃ’তি দিলেও গাজার আল আহলি আরব হাসপাতালে ইসরায়ে’লি বোমা হামলার তীব্র নিন্দা করেছে।

 

এর প্রতি’ক্রিয়ায় দেশটির বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ হামাস-ইসরায়েল ‘যুদ্ধ ইস্যুতে বাইডেন ও মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফা”ত্তাহ আল-সিসির সঙ্গে যে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল তা বাতিল ক’রেন। এর কারণও একটি। ফিলিস্তিন

 

ইস্যুতে জর্ডানের রা’জতন্ত্রের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণের ক্ষোভ প্রশমন।আরব’ বিশ্বের জনসাধারণের মনে চলমান যুদ্ধ নিয়ে ইতিবাচক মনো’ভাব পোষণের একটি কারণ হলো ইসরায়েলের গোয়েন্দা’ ব্যর্থতা। অনেক বিশ্লেষকই ৭

 

অক্টোবর ইসরায়েলে হামা’সের আক্রমণকে ১৯৭৩ সালের ইয়াম কিপ্পুরের যুদ্ধের ‘সঙ্গে তুলনা করেছেন। সর্বশেষ সেবারই ইসরায়েল ব্যা’পক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছিল।তবে ১৯৭৩ সালে আরব দেশ’গুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যে

 

আক্রমণ চালিয়েছিল, তা ‘দেশটির জন্য অস্তিত্বের সংকট ছিল। সে সময় ইসরায়েল আ’রব দেশগুলোর বিরুদ্ধে পারমাণ’বিক অস্ত্র ব্যবহা’রেরও চিন্তাভাবনা করেছিল। সেই ঘটনার ৫’০ বছর পর সে’ই ইসরায়েলকেই যুদ্ধে টেনে

 

নামিয়েছে কোনো দেশ’ নয়; স্রেফ একটি সশস্ত্র সংগঠন, যার প্রধান পৃষ্ঠপোষক একটি অনারব দে’শ। ফলে এই সংকটের প্রকৃতি কোনোভাবেই ইয়া’ম কিপ্পুরের যুদ্ধের সময়কার ঘটনার মতো নয়।ইসরায়ে’লের জন্য এই যুদ্ধ হয়তো

 

অস্তিত্বের সংকট নয়, কিন্তু অনেক আরব দেশের বিদ্যমান ‘ভঙ্গুর’ রেজিমের জন্য হানিকর হয়ে উঠতে পারে এই যুদ্ধ। এ বিষয়ে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি বলেন, যুদ্ধে লেবানন জড়িয়ে পড়বে কি না, সেবিষয়ক সিদ্ধান্ত আসলে

 

তাঁর হাতে নে:ই। মিসর ও জর্ডানের শাসকেরা চাইবেন না এই যুদ্ধে তাদে’র দেশ জড়িয়ে পড়ুক। কারণ তাতে তাঁদের ক্ষমতার তখ’ত কেবলই নাজুক হয়ে উঠবে। আবার উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোও চাইবে না হামাসের প্রধান

 

পৃষ্ঠপোষক ইরানকে চ’টাতে। সে ক্ষেত্রে ইরানের হয়ে সৌদি আরব ও আরব আমিরা’তে আশপাশের অনেক গোষ্ঠীই তাদের বিরুদ্ধে প্রক্সি’ যুদ্ধে জড়িয়ে যাবে। সব মিলিয়ে এই যুদ্ধ আরব রাষ্ট্রগুলো:র জন্য এক উভয়সংকট নিয়ে হাজির হয়েছে।

 

দ্য ইকোনমিস্টের নিবন্ধ :অনুবাদ করেছে আব্দুর রহমান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *