ভিসা নীতি নিয়ে দুশ্চিন্তায় দরপতন শেয়ারবাজারে

যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতি বাস্তবায়ন শুরু করেছে গত শুক্রবার থেকে। নির্দিষ্ট পেশার কথা উল্লেখ করা হলেও কোনো ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেনি দেশটি। তবে এ নিয়ে দেশে চলছে ব্যাপক আলোচনা। এর মধ্যে রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় ব্যবসায়ী নেতাদের নাম থাকতে পারে—এমন গুঞ্জন সব থেকে বেশি। এর প্রভাবে গতকাল দেশের শেয়ারবাজারে ব্যাপক দরপতন হয়েছে।

সম্প্রতি বীমা খাতের শেয়ার এককভাবে দাপট দেখালেও গতকাল রোববার ছিল ভিন্ন চিত্র। এদিন বীমাসহ সব খাতের শেয়ারের দরপতন হয়েছে। এর মধ্যে শীর্ষে ছিল পেপার ও প্রিন্টিং, পাট, বীমা, খাদ্য, আইটি, বিবিধ, ওষুধ শিল্প খাত। টেলিযোগাযোগ, সিরামিক ও সরকারি বন্ডের কোনো শেয়ারের লেনদেন হয়নি গতকাল। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচক হারিয়েছে প্রায় ২৯ পয়েন্ট। ৩১০ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট অংশগ্রহণ করেছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ১২টির, কমেছে ১৪৮টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ১৫০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজারের লেনদেনের বিধিনিষেধ ও অর্থনৈতিক মন্দার সঙ্গে যোগ হয়েছে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন। তাই দেশের বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন দিক চিন্তা করছেন। ফলে শেয়ারবাজার নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। এর মধ্যে ভিসা নীতির প্রয়োগের ঘটনায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক কাজ করছে।

জানা গেছে, গতকাল শেয়াবাজারের বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি। এ বিষয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও কালবেলাকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির প্রভাব এই খাতেও পড়ছে। খবরটি জানার পর থেকে বিনিয়োগকারীরা এ নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে, যা আজকের (গতকাল) বাজারকে প্রভাবিত করেছে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান বলেন, শেয়ারবাজারে গুজব একটি প্রচলিত বিষয়। এটি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করে। এর আগে শ্রীলঙ্কার অস্থিরতার প্রভাব আমাদের শেয়ারবাজারে পড়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাব এখনো রয়েছে। বিশ্বের অনেক বিষয়কে আমাদের বিনিয়োগকারীরা ইস্যু হিসেব দাঁড় করিয়ে নিজেরাই বিপদে পড়ছেন। এটা শেয়ারবাজারের জন্য ক্ষতিকর। ভিসা নীতির বিষয়ও তেমনই গুজব তৈরি করা হয়েছে। আমার কথা হলো, ভিসা নীতির সঙ্গে শেয়ারবাজারের কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ শেয়ারবাজার নির্বাচন বা রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত না।

তবে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, দেশের অর্থনীতি অনেকদিন থেকে খরাপ যাচ্ছে। শেয়ারবাজার অনেক ছোট হয়ে গেছে। নতুন কোনো বিনিয়োগ নেই। কেউ আসতে চাচ্ছে না। এর মধ্যে যারা আছে তাদের কাছে রাজনৈতিক বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নির্বাচনকেন্দ্রিক বিনিয়োগকারীরা পর্যবেক্ষণের ভূমিকায় রয়েছে। এখন এর সঙ্গে ভিসা নীতির বাস্তবায়ন যুক্ত হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন চিন্তা যোগ হতে পারে। আজকের (গতকাল) বাজারে যে বিষয়টি কাজ করেছে, তাকে রাজনৈতিক বা ভিসা নীতির প্রভাব বলা যায়। এ ছাড়া বাজারে যে প্লেয়ার রয়েছে, তারাও এখন নিষ্ক্রিয়। এর মধ্যে কিছু জুয়াড়ি বীমা নিয়ে কিছুদিন নাড়াচাড়া করেছে। এখন বীমারও অবস্থা খারাপ। শেয়ারবাজার যে অবস্থায় রয়েছে, সেখানে ভিসা নীতি বা অন্য নীতি যাই হোক, সেটি নিয়ে অবাক হওয়ার কিছু নাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *