ভিসা নিষেধাজ্ঞ বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে নিশ্চিত?

বাংলাদেশের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে কি না, এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান।

শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) তিনি এই সংশয়ের কথা জানান।

তিনি লিখেন, ‘ভারত-কানাডা দ্বন্দ্ব নিয়ে সব বোধগম্য দৃষ্টির মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার আরেকটি বড় ঘটনা উপেক্ষা করা সহজ। দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে নতুন নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে।

কুগেলম্যান লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্র গত মে মাসে ভিসা নিষেধাজ্ঞার পরিকল্পনা ঘোষণার পর গত শুক্রবার অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করা ব্যক্তিদের (আইন প্রয়োগকারী সদস্য, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দল) ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার ঘোষণা আছে। যুক্তরাষ্ট্র এর আগে যে দেশগুলোর ক্ষেত্রে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে, সেটা প্রয়োগ করেছে নির্বাচনের পর। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নির্বাচনের আগেই তা প্রয়োগ করা হলো।

যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞার যে ঘোষণা দিয়েছিল, তার গুরুত্ব প্রমাণ করতেই প্রয়োগের ঘোষণা দিয়ে থাকতে পারে।

কুগেলম্যান লিখেছেন, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি প্রয়োগে গত শুক্রবারের ঘোষণা আরো একটি কারণে উল্লেখযোগ্য। এখানে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী—উভয় দলের সদস্যদেরই টার্গেট করা হয়েছে। স্পষ্টতই যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করতে চায়, তাদের উদ্যোগকে যেন বিরোধী দলের পক্ষ নেওয়া মনে করা না হয়।

যুক্তরাষ্ট্র প্রায়ই বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা করে থাকে। এর ফলে অনেকের মতে হতে পারে, যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী দলের পক্ষ নিচ্ছে।

২০২১ সালে র‌্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কথা তুলে ধরে কুগেলম্যান লিখেছেন, “আমার সাম্প্রতিক ঢাকা সফরের সময়, আমি সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্ন শুনেছি তা হলো, কেন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের বিষয়ে এত চাপ দিচ্ছে? বিশেষ করে, আপাতদৃষ্টিতে যুক্তরাষ্ট্র মূল্যবোধভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতির জন্য বাংলাদেশকে একটি ‘পোস্টার চাইল্ড’ বানিয়েছে। অথচ ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র এটি করতে পারছে না।”

কুগেলম্যান লিখেছেন, ‘ওই প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর হলো দেশভেদে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ভিন্ন। দীর্ঘ উত্তর আরও জটিল। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দ্যে ওই ঝুঁকি নিতে পারে এবং সম্ভবত সফল হবে বলেও মনে করতে পারে। সম্প্রতি মার্কিন কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞার পরে র‌্যাবের ক্ষমতার অপব্যবহার কমেছে।’

কুগেলম্যান প্রশ্ন তুলেছেন, ‘কিন্তু ভিসা বিধিনিষেধ কি বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারবে? আমার এ বিষয়ে সন্দেহ আছে। হ্যাঁ, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অভিজাতদের মধ্যে অনেকের পরিবার যুক্তরাষ্ট্রে আছে। তবে ক্ষমতাসীন দল যদি শেষ পর্যন্ত যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় থাকতে চায়, তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি জোরালো প্রতিবন্ধকতা হবে কি না আমি নিশ্চিত নই।’

শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার এক বিবৃতিতে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *