বিএনপির লবিস্ট মিয়ান আরেফির মিশন ফাঁস

ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপি আয়োজিত মহাসমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কথিত উপদেষ্টা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক মিয়ান আরেফির। কিন্তু গত শনিবারের ওই সমাবেশটি নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শেষ হওয়ায় তা আর সম্ভব হয়নি। তবে সন্ধ্যায় ঠিকই বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হাজির হন তিনি। সেখানে ‘সংবাদ সম্মেলন’ করে বক্তব্যও দেন। এর পরই তাকে নিয়ে শুরু হয় তোলপাড়।

 

মার্কিন প্রেসিডেন্টের এক উপদেষ্টা বাংলাদেশে এলেন; কিন্তু আগে থেকে সে খবর কেউ জানলই না? অবশ্য অল্প সময়ের মধ্যেই জানা যায়, মিয়ান আরেফির দেওয়া পরিচয়টি আসলে ভুয়া! এতসব কাহিনির পর গতকাল রোববার বিকেলে বাংলাদেশ ছাড়তে চেয়েছিলেন তিনি। তবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আরেফিকে আটক করেন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। এরপর তার কাছ থেকেই বিএনপির মহাসমাবেশে বক্তৃতার পরিকল্পনার তথ্য পান তারা।

 

আটকের পর বিমানবন্দরেই বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মিয়ান আরেফিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তিনি জানান, তার পুরো নাম মিয়া জাহিদুল ইসলাম আরেফি। তিনি আমেরিকান পাসপোর্টধারী। জন্ম সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়ায় এবং বেড়ে উঠেছেন সেখানেই। তার বাবা রওশন আলী রাজশাহী বিভাগের শিক্ষা কর্মকর্তা ছিলেন।

 

 

আটকের পরও তিনি নিজেকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের একজন উপদেষ্টা হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি জানান, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী হিসেবে তিনিসহ আরেক বিদেশি নাগরিকের বিএনপির মহাসমাবেশে বক্তৃতা দেওয়ার কথা ছিল। তা সম্ভব না হওয়ায় সংঘর্ষের পর সন্ধ্যায় তিনি দলটির কার্যালয়ে হতাহতদের খবর নিতে যান।

 

গোয়েন্দারা তার কাছে জানতে চান, ওই সংঘাতে পুলিশের এক সদস্য নিহত এবং অনেকে আহত হয়েছেন, মানবাধিকার কর্মী হিসেবে তাদের বিষয়ে কোনো খোঁজখবর নেননি? মিয়ান আরেফি এ প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি।

 

আরেফি নিজেকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিচয় দিলেও ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস তা নিশ্চিত করেনি। শনিবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তার দেওয়া বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে গণমাধ্যমকর্মীরা মার্কিন দূতাবাসে যোগাযোগ করেন। দূতাবাস থেকে জানানো হয়, মার্কিন সরকারের পক্ষে কোনো ব্যক্তির বিএনপির কার্যালয়ে যাওয়ার বিষয়ে যে গুজব তৈরি হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভুল।

 

ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র স্টিফেন ইবেলি বলেন, ‘ওই ভদ্রলোক যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হয়ে কথা বলেন না। তিনি একজন বেসরকারি ব্যক্তি।’

 

গতকাল রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা কালবেলাকে জানান, মিয়ান আরেফিকে ডিবি কার্যালয়ে হেফাজতে রাখা হয়েছে। আজ সোমবার তাকে আদালতে হাজির করা হবে। বিষয়টি এরই মধ্যে ডিবির পক্ষ থেকে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসকে অবহিত করা হয়েছে।

 

গতকাল ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা (মিয়ান আরেফি) আটকের বিষয়টি অবগত আছি এবং যথাযথভাবে কনস্যুলার অ্যাক্সেসের অনুরোধ করার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।’

 

মিয়ান আরেফিকে আটকের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক মিয়ান আরেফি মূলত বিএনপির লবিস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। সরকারের পতন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনা ও বিএনপিকে ক্ষমতায় নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তিনি কাজ করছিলেন। মিশন বাস্তবায়নে তিনি ঘন ঘন দেশে আসতেন।

 

কী উদ্দেশ্য ছিল মিয়ান আরেফির: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানায়, বিএনপির নিয়োগ করা লবিস্ট মিয়ান আরেফি বিএনপি নেতাদের কাছে নিজেকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিচয় দিতেন। শুধু তাই নয়, তিনি তাদের দেখাতেন যে, জো বাইডেনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে নিয়মিত বার্তা আদান-প্রদান হয়। তার মেসেজের উত্তরও দেন।

 

একমাত্র তিনিই পারবেন বিএনপির চাওয়া পূরণ করতে। বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন আদায় করতে তিনি জো বাইডেন প্রশাসনের মাধ্যমে কাজ করছেন। বিএনপির চাওয়া অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।

 

ওই সূত্রটি জানায়, আমেরিকান সরকারের সঙ্গে শেখ হাসিনা সরকারের দূরত্ব তৈরিতে মিয়ান আরেফি কাজ করেছেন—এমন তথ্যও দিতেন বিএনপি নেতাদের। তার জন্যই আমেরিকা আওয়ামী লীগের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বলেও প্রচারণা চালাতেন। পাশাপাশি শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে মার্কিন নাগরিকদের কাছে তিনি নানা অপপ্রচার চালাচ্ছিলেন।

 

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, মিয়ান আরেফি মূলত সাবেক সেনা কর্মকর্তা চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর মাধ্যমে বিএনপির লবিস্ট হিসেবে নিয়োগ পান। তার হয়ে বিমানবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ ভূঁইয়া দেশে ওই ব্যক্তির সঙ্গে কাজ করে আসছিলেন। সারওয়ার্দীর মাধ্যমে ওই ব্যক্তি বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন।

 

দায়িত্বশীল এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেছেন, মিয়ান আরেফি বিএনপির পক্ষে মিশন বাস্তবায়নের জন্য বড় অঙ্কের টাকা নিয়েছেন। কত টাকা নিয়েছেন, কারা এ টাকার জোগান দিয়েছেন, তা জানার চেষ্টা চলছে।

 

আটকের পর গোয়েন্দাদের যা বলেছেন মিয়ান আরেফি: বিমানবন্দর থেকে আটকের পর গতকাল সন্ধ্যায় মিয়ান আরেফিকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে গোয়েন্দারা তার কাছ থেকে নানা বিষয়ে তথ্য নেন। দায়িত্বশীল গোয়েন্দা সূত্র কালবেলাকে জানায়, মিয়ান আরেফিকে আটকের পর তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা দাবি করলেও ডিবি হেফাজতে

 

নেওয়ার পর সে দাবি থেকে সরে এসেছেন। তার বাংলাদেশ মিশনের পেছনে চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর নাম বলছেন। দাবি করেছেন, সারওয়ার্দী তাকে ভুল তথ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া হারুন অর রশীদ ভূঁইয়া, ইশরাক হোসেন ছাড়াও বেলাল আহমেদ নামে এক ব্যক্তি তাকে বিএনপি সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়েছেন।

 

মিয়ান আরেফি বলেন, তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের ব্যবস্থা করতে পারলে হাসান সারওয়ার্দী ওই সরকারের একজন উপদেষ্টা হবেন বলে তাকে বলা হয়েছিল।

 

বিএনপির মহাসমাবেশে বক্তৃতার পরিকল্পনা! : গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গত শনিবার বিএনপির সমাবেশ শুরুর আগে সকাল থেকেই নয়াপল্টন এলাকায় ছড়ানো হয় যে, ‘মার্কিন প্রশাসনের’

 

গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও আরেকজন বিদেশি নাগরিক সমাবেশে যোগ দেবেন। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বার্তা দেবেন সমাবেশ থেকে। বিএনপি নেতা হারুন অর রশীদ ভূঁইয়া বিএনপির কয়েক নেতাকে এ বার্তা দেন।

 

ওই সূত্রটি জানায়, সে অনুযায়ী হাসান সারওয়ার্দী মিয়ান আরেফিকে নিয়ে সমাবেশের উদ্দেশে গুলশানের একটি হোটেল থেকে যাত্রা শুরু করেন। তবে সংঘর্ষের খবর পেয়ে শান্তিনগরে একটি শপিংমলে অবস্থান নেন দুজন। সংঘর্ষ শেষ হলে বিএনপি নেতাদের সবুজ সংকেত পেয়ে সেখানে যান তারা। এরপর সংবাদ সম্মেলনের নামে বক্তব্য শুরু করেন। সেখানে হাসান সারওয়ার্দী ও ইশরাক উপস্থিত ছিলেন।

 

বিএনপি কার্যালয়ে দেওয়া মিয়ান আরেফির বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে তাকে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতে শোনা যায়। পাশাপাশি তিনি ধর্মীয় বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য দেন।

 

সেখানে তাকে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের সঙ্গে বসে কথা বলতে দেখা যায়। ওই সময় তিনি দাবি করেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার সম্পূর্ণ পক্ষে।’

 

মিয়ান আরেফি বাইডেন ছাড়াও মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং বাংলাদেশে দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার ‘প্রতিনিয়ত যোগাযোগের’ বিষয়েও কথা বলেন। তিনি দাবি করেন, ‘মার্কিন সরকারের সব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বিরোধীদের আন্দোলনকে সমর্থন করে।

 

’ ১৮ মিনিটের বক্তব্যে মিয়ান আরেফি বলেন, ‘বাংলাদেশ ভারতের অঙ্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে।’ তিনি পাবনা ও সিরাজগঞ্জ ঘুরে আসার অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘সেখানে বিভিন্ন অফিসে ভারত থেকে আসা হিন্দুরা কর্মকর্তা হিসেবে রয়েছেন।’

 

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, দলীয় নেতারা বিএনপি অফিসে বসে থাকা মিয়ান আরেফিকে ঘিরে রেখেছেন। তিনি চলে যাওয়ার পরই দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে চাউড় হয় যে, ‘বাইডেন এর পক্ষ থেকে’ তাদের সমর্থন জানানোর জন্য বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে এসেছিলেন আরেফি।

 

এসব বিষয়ে সাবেক সেনা কর্মকর্তা চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী এবং হারুন অর রশীদ ভূঁইয়ার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন গত শনিবারই বলেছিলেন, আহত অবস্থায় নেতাকর্মীরা কার্যালয়ে অবস্থান নিয়েছেন শুনে তাদের খোঁজখবর নিতে তিনি সেখানে ছুটে যান। তার পরপরই

 

হাসান সারওয়ার্দী দুজন ব্যক্তিকে নিয়ে কার্যালয়ে আসেন। তার (সারওয়ার্দীর) সঙ্গে আসা একজন নিজেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা বলে পরিচয় দেন। আহতদের সঙ্গে কথাও বলতে চান। আহতরা সে সময় কার্যালয়ের নিয়মিত ব্রিফিং কক্ষেই অবস্থান করছিলেন। তাই তাদের সঙ্গে কথা বলার পর সেখানে থাকা সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। ওই সময় তাদের সঙ্গে তাকে বসতে বললে সে পরিস্থিতিতে তাদের সঙ্গে অংশ নেন। এর বাইরে ওই ব্যক্তি সম্পর্কে আর তেমন কিছু জানেন না বলে দাবি ইশরাকের।

 

ভিসা ছাড়াই বাংলাদেশে আসার অনুমতি ছিল আরেফির:

 

সূত্র জানায়, মিয়ান আরেফির বেড়ে ওঠা সিরাজগঞ্জে হলেও তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট নেই। তিনি মার্কিন পাসপোর্ট ব্যবহার করেন। ‘টি’ ক্যাটাগরির ভিসা নিয়ে তিনি ঘন ঘন বাংলাদেশে আসতেন।

 

পরে তিনি ঢাকায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নো ভিসা রিকোয়ার্ড (এনভিআর) আবেদন করেন। সরকার গত ১ অক্টোবর ‘টি’ ক্যাটাগরির ভিসার পরিবর্তে এনভিআর অনুমোদন করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের বহিরাগমন-৫ শাখা থেকে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে ভিসার ক্যাটাগরি পরিবর্তন করে চিঠিও দেওয়া হয়।

 

ইমিগ্রেশন সূত্র জানায়, মিয়ান আরেফি ২০২২ সালে দুবার বাংলাদেশে আসেন। শেষবার গত বছরের জুলাইয়ে তিনি বাংলাদেশ হয়ে দুবাই ও মালদ্বীপ ভ্রমণ করেন। এক সপ্তাহ পর ফের ঢাকায় ফেরেন।

 

এরপর দুই মাস ঢাকায় থেকে আমেরিকায় ফিরে যান। গত মে থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করে আমেরিকায় ফিরে যান। সর্বশেষ ২৬ অক্টোবর বাংলাদেশে এসে গুলশানের একটি হোটেলে ওঠেন। গতকাল তিনি আমেরিকায় ফিরে যাওয়ার আগে বিমানবন্দরে আটক হন।

 

জানা গেছে, আমেরিকায় তার মার্কিন নাগরিক স্ত্রী-সন্তান রয়েছে। তবে গত বছর তিনি বাংলাদেশে এসে রায়হান ফারহানা নামে গোপালগঞ্জের এক নারীকে বিয়ে করেন। ফারহানার পরিবার খুলনায় স্থায়ী হয়েছেন। তবে তিনি বর্তমানে ঢাকার বারিধারায় বাস করেন।

 

কে এই মিয়ান আরেফি: সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় জন্ম নেওয়া মিয়ান আরেফি নিজেকে শুধু আমেরিকার প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টাই পরিচয় দেননি, তার ফেসবুকে ‘মেম্বার অব ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক কমিটি’ পরিচয় লেখা রয়েছে। তবে তা ভুল বানানে। অবশ্য লিংকডইন প্রোফাইলে তার পরিচয় লেখা, ‘Store Team Lead at Big Lots Stores’। অর্থাৎ তিনি যুক্তরাষ্ট্রের রিটেইল চেইন শপ বিগ লটস স্টোর-এর একটি স্টোরের টিম লিড।

 

কালবেলার সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মিয়ান আরেফি সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি বিএনপি নেতা আকবর আলীর ঘনিষ্ঠ ছিলেন। হাটিকুমরুল ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি কাওসার আলী জানান, আকবর আলী আমেরিকায় গেলে আরেফির বাসাতেই উঠতেন। এ বিষয়ে কথা বলতে আকবর আলীকে বারবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

 

স্থানীয়রা জানান, উল্লাপাড়ার হাটিকুমরুলের মানিকদিয়ার গ্রামের রওশন মণ্ডল প্রায় ৪০ বছর আগে আমেরিকায় গিয়ে সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা হন। রওশন মণ্ডল আমেরিকাতেই মারা যান। মিয়ান আরেফিসহ তার ছয় ছেলে ও চার মেয়ে আমেরিকায় থাকেন। সলঙ্গা থানার ওসি এনামুল হক জানান, জাহিদুল ইসলাম আরেফি এলাকায় বেল্লাল নামে পরিচিত। তিনি ছাত্রাবস্থাতেই পরিবারের সঙ্গে আমেরিকায় যান। গ্রামে এলে তিনি নিজেকে জো বাইডেনের উপদেষ্টা হিসেবে পরিচয় দেন।

 

মানিকদিয়ার গ্রাম বা উল্লাপাড়ায় তার কোনো বাড়ি নেই। দাদা-দাদির জন্য দোয়া মাহফিল করতে গত জুলাইয়ে এলাকায় এসেছিলেন। তখন তিনি উল্লাপাড়া ডাকবাংলোয় অবস্থান করেন। মিয়ান আরেফিকে আটকের বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ওই ব্যক্তিকে বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবির হেফাজতে দিয়েছে।

 

তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য উদ্ধৃত করে ডিবিপ্রধান বলেন, তিনি আমেরিকার নাগরিক, ওয়াশিংটন ডিসিতে থাকেন। গত বছর দেশে এসে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এরপর ৬ মাস ধরে বারিধারায় দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে ছিলেন। সেখানে হাঁটতে গিয়ে অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল হাসান সারওয়ার্দীর সঙ্গে তার পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা হয়। তিনি তাকে বলেছিলেন, ২৮ অক্টোবর বিএনপির বড় র্যালি হবে। শনিবার বিএনপির পার্টি অফিসে তিনিই তাকে নিয়ে যান।

 

বিএনপির কার্যালয়ে বক্তব্য দেওয়ার বিষয়ে মিয়ান আরেফি তথ্য দিয়েছেন জানিয়ে গোয়েন্দা কর্মকর্তা হারুন বলেন, মিয়ান আরেফি জানিয়েছেন, হাসান সারওয়ার্দী, বিএনপি নেতা ইশরাক ও অ্যাডভোকেট বেলাল বিএনপি পার্টি অফিসে তাকে যেভাবে উপস্থাপন করেছেন, তাকে যে জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দেওয়া হয়েছে, এটা সত্য নয়। তারা মিথ্যাভাবে তাকে উপস্থাপন করেছেন।

 

হারুন আরও জানান, মিয়ান আরেফি বলেছেন, সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাসান সারওয়ার্দী তাকে শিখিয়ে দিয়েছেন, বিএনপি পার্টি অফিসে বক্তব্য দেওয়ার সময়ে যাতে বলা হয়, র্যাবের বিরুদ্ধে স্যাংশন দিতে তিনি সহায়তা করেছেন। এখন পুলিশ, আনসার, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্যাংশন দেওয়া হবে। তাকে বলা হয়েছিল,

 

এ কথা বললে পুলিশের মনোবল ভেঙে যাবে এবং বাংলাদেশের মানুষের মনোবলও ভেঙে যাবে। এই কথা বলার পর সেখানে বিএনপি নেতাকর্মীরা উৎসাহী হয়েছে বলেও ডিবিকে জানান মিয়ান আরেফি; কিন্তু তিনি জানতেন না যে, ওইদিন পুলিশ মারা গেছে, শত শত মানুষ আহত হয়েছে এবং প্রধান বিচারপতির বাসভবন আক্রান্ত হয়েছে।

 

এক প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, আমরা এখন মিয়ান আরেফির দ্বিতীয় স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করব। তাকেও (মিয়ান আরেফি) জিজ্ঞাসাবাদ করব—টাকার বিনিময়ে এসব করেছেন কি না। এরপর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *