যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি (টিকফা)-র সপ্তম কাউন্সিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার ভারপ্রাপ্ত সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডান লিঞ্চ ও বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ। সভায় অংশ নেওয়া উভয় দেশের প্রতিনিধি দলে বাণিজ্য, শ্রম, মেধা সম্পদ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থার কর্মকর্তারা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম অ্যাগ্রিমেন্ট (টিকফা) কাউন্সিলের সপ্তম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
টিকফা কাউন্সিলের বৈঠকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ককে প্রভাবিত করে এমন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে। বিশেষ করে শ্রম সংস্কার, সেইসঙ্গে জলবায়ুতে বিনিয়োগ এবং ডিজিটাল বাণিজ্যকে প্রভাবিত করে এমন নীতি, মেধা সম্পত্তি সুরক্ষা ও প্রয়োগ এবং কৃষি খাতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উল্লেখ করে, একটি ত্রিপক্ষীয় শ্রম আইন পর্যালোচনা কমিটি বাংলাদেশের শ্রম আইন (বিএলএ) সংশোধনগুলো পর্যালোচনা করছে। একই সঙ্গে দেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) এবং রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) সংগঠনের স্বাধীনতা এবং সম্মিলিত আলোচনার সুযোগ প্রসারিত করতে বাংলাদেশকে উৎসাহিত করেছে।
বাংলাদেশে ইউনিয়ন নিবন্ধন করার সময় শ্রমিকদের যে বাধার সম্মুখীন হতে হয় তা দূর করতে কিছু প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও স্বীকার করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে আইনি সময়সীমার মধ্যে আবেদনগুলোকে সহজে নিবন্ধিত করা এবং নিরপেক্ষ ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছে মার্কিন সরকার। এ ছাড়াও, বাংলাদেশকে শ্রম পরিদর্শন এবং প্রয়োগের জন্য আরও সম্পদ উৎসর্গ করার আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্র গত এক বছরে বাংলাদেশের তথ্য সুরক্ষা আইন (ডিপিএ) নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের ধারাবাহিক সংলাপের প্রশংসা করেছে। উভয় পক্ষই ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা এবং ডিজিটাল অর্থনীতিতে আস্থা নিশ্চিত করার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের ডিজিটাল সেক্টরের উন্নতি অব্যাহত রাখার বিষয়ে তাদের অঙ্গীকার নিশ্চিত করেছে। ডিপিএ খসড়ার বাংলাদেশের নতুন সংস্করণে আগের সংস্করণগুলোর উন্নতিগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ফৌজদারি দণ্ড অপসারণ, ব্যক্তিগত তথ্যে ডিপিএ’র সুযোগ সীমাবদ্ধ করা এবং বাংলাদেশের ভূখণ্ডের মধ্যে ব্যক্তিগত তথ্য প্রক্রিয়া করে এমন সংস্থাগুলোর আবেদন সীমিত করা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা রপ্তানির ক্ষেত্রে তুলা জীবাণুমুক্ত করতে রাসায়নিক ধোঁয়া দেওয়ার বিষয়টি বাতিল করায় বাংলাদেশের পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই নিয়ম চলে আসছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ কৃষি জৈবপ্রযুক্তি সংলাপে সহযোগিতা করেছে। উভয় দেশ চলতি বছর তাদের সম্পৃক্ততা আরও বাড়াতে আগ্রহী। উভয় দেশই অর্থনীতিতে উদ্ভাবন রক্ষার জন্য মেধা সম্পত্তির (আইপি) সুরক্ষা ও প্রয়োগের গুরুত্ব স্বীকার করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কপিরাইট আইন সংশোধন, শিল্প নকশা আইন, পেটেন্ট বিল ও বাস্তবায়ন প্রবিধান এবং আইপিআর এনফোর্সমেন্ট (আমদানি ও রপ্তানি) বিধিসহ আইপি-সম্পর্কিত আইন ও বিধিমালার সংশোধনের জন্য চলমান প্রক্রিয়াগুলোতে বাংলাদেশের সঙ্গে জড়িত থাকার আগ্রহের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।
এ ছাড়া ইউএসটিআর-এর ২০২৩ সালের বিশেষ ৩০১ নম্বর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী নকল পোশাকের শীর্ষ পাঁচটি দেশের একটি হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি এসব নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
ওয়াশিংটন ডিসিতে ২০২৪ সালে আগামী টিকফা কাউন্সিলিং বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে উভয় প্রতিনিধিদল এই গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে।