বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করতে চান বাইডেন

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের কোনো টানাপোড়েন নেই জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করতে চান।

নিউইয়র্ক স্থানীয় সময় সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় এক ব্রিফিংয়ে ড. এ কে আব্দুল মোমেন এ কথা জানান।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে মোমেন বলেন, আমরা একটা অবাধ ‍ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। সেজন্য আন্তরিকতা দরকার। বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকলে উপদেশ দেওয়া যায়। শত্রু হলে কেউ উপদেশ দেয় না। আমরা বন্ধু হিসেবে তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) অনেক উপদেশ গ্রহণও করেছি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অনেক মিডিয়া বলে যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের টানাপোড়েন রয়েছে। কিন্তু না, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুব মধুর। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী ও বলিষ্ঠ করতে চান।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু করতে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ একযোগে কাজ করবে বলেও উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এর আগে স্থানীয় সময় দুপুরে জাতিসংঘ সদর দফতরের দ্বিপাক্ষিক বৈঠককক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রস অ্যাধানম গ্যাব্রিয়াস। বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকের ভূয়সী প্রশংসা করে গ্যাব্রিয়াস বলেন, কোভিড মহামারি মোকাবিলায়ও বাংলাদেশ দারুণ সাফল্য দেখিয়েছে।

বৈঠকে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের থিম্যাটিক অ্যাম্বাসেডর এবং অটিজম ও নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ উপস্থিত ছিলেন।

বিকেলে জাতিসংঘে জার্মানির সদস্যপদ লাভের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে দেশটির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের আয়োজনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন সরকারপ্রধান। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর নাতনি সায়মা ওয়াজেদ।

এ বিষয়ে ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক বাংলাদেশের সার্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নতকরণ এবং সবার জন্য সহজ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য গৃহীত পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে গতকাল সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন।

প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচি অনুযায়ী, ১৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দেবেন এবং ২২ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় দুপুর ১টা থেকে দুপুর ২টার মধ্যে তিনি ভাষণ দেবেন। এর আগে ১৯ সেপ্টেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আয়োজিত নৈশভোজেও প্রধানমন্ত্রী যোগ দেবেন।

এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সংকট এবং জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি), সর্বজনীন স্বাস্থ্য ও অর্থসহ বেশ কয়েকটি উচ্চপর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় ও সৌজন্যমূলক বৈঠকে অংশ নেবেন।

১৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সদর দপ্তরের সিআর-১৬-এ স্পেনের প্রধানমন্ত্রী এবং ইউরোপীয় কাউন্সিল ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সভাপতি কর্তৃক ‘টুওয়ার্ডস এ ফেয়ার ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল আর্কিটেকচার’ শীর্ষক একটি উচ্চপর্যায়ের গোলটেবিল বৈঠকেও ভাষণ দেবেন।

২০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য আন্তর্জাতিক পাবলিক ফাইন্যান্সিং বৃদ্ধি এবং দক্ষতা নিশ্চিতকরণ’ শিরোনামে উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন (এফএফডি) বিষয়ে ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিল চেম্বারে একটি উচ্চপর্যায়ের বিতর্কে প্রধান বক্তা হিসেবে ভাষণ দেবেন।

একই দিনে তিনি মহাসচিবের ক্লাইমেট অ্যামবিশন সামিট, মহামারি প্রতিরোধ, প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া সংক্রান্ত উচ্চপর্যায়ের বৈঠক, নারী নেতাদের ইউএনজিএ প্ল্যাটফর্মের বার্ষিক সভা, ক্লাইমেট অ্যামবিশন উচ্চস্তরের জলবায়ু উচ্চস্তরের বিষয়ভিত্তিক সম্মেলনের পাশাপাশি ন্যাশনাল জুরিসডিকশনের বাইরের এলাকার সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য আইনের ওপর জাতিসংঘের কনভেনশনে যোগ দেবেন।

এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন এবং শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের সঙ্গে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের দ্বিপাক্ষিক বুথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।

আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনে এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘বিশ্বাস পুনর্গঠন ও বিশ্ব সংহতির পুনরুদ্ধার : ২০৩০ এজেন্ডা বাস্তবায়নে ত্বরান্বিত পদক্ষেপ, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে শান্তি, সমৃদ্ধি, অগ্রগতি এবং সবার জন্য স্থায়িত্বের দিকে।’

২৯ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে (বিএ-২৯২) রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে (ওয়াশিংটন সময়) লন্ডনের উদ্দেশে ওয়াশিংটন ডিসি ত্যাগ করবেন এবং ৩০ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানাবেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম।

এরপর ৩ অক্টোবর রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে (লন্ডন সময়) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের (বিজি ২০৮) একটি ফ্লাইটে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন সরকারপ্রধান। পরের দিন দুপুর সাড়ে ১২টায় (বাংলাদেশ সময়) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *