বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আবারও অবস্থান স্পষ্ট করল যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে কোনো নির্দিষ্ট দলকে সমর্থন করে না এবং নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করতে চায় না বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। গতকাল সোমবার (২ অক্টোবর) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক ম্যাথিউ মিলারের কাছে বাংলাদেশে গণমাধ্যমকর্মী বা সাংবাদিকদের ওপর ভিসা নীতি কার্যকরের বিষয়ে রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের একটি বিবৃতি সম্পর্কে জানতে চান। তিনি দাবি করেন, বিরোধী নেতাদের পাশাপাশি বাংলাদেশকে তালেবান-স্টাইলের ভূমিকার পক্ষে থাকা কট্টরপন্থি গোষ্ঠীগুলো ইতোমধ্যেই মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের হুমকি দিচ্ছে, এমনকি উগ্র মতবাদের সমালোচনাকারী সাংবাদিকদের তালিকাও প্রচার করছে। অন্যদিকে, নাগরিক ও মানবাধিকার কর্মী, যুদ্ধাপরাধ বিরোধী কর্মী, সম্পাদক, সাংবাদিক, লেখক, সংখ্যালঘু নেতারা গণমাধ্যমে সম্ভাব্য ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়ে রাষ্ট্রদূতের বিবৃতিকে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার প্রতি অবমাননা হিসেবে দেখছেন যা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মূল ভূমিকা রাখে। তারপরও মিলার রাষ্ট্রদূতের বিবৃতিকে সমর্থন করেন কিনা এবং ধর্মনিরপেক্ষ জাতি সমর্থনকারী উদারপন্থি এই বৃহৎ গোষ্ঠীর তোলা উদ্বেগকে এড়িয়ে যাবেন কিনা প্রশ্ন করা হয়।

জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমি গত সপ্তাহে যা বলেছিলাম তা একটু ভিন্ন ভাষায় আবারও বলি। বাংলাদেশিরা নিজেরাই যা চায় যুক্তরাষ্ট্রও সেটিই চায়: আর তা হচ্ছে- অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের সরকার, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এবং মিডিয়া সকলেই তাদের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে যে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হোক – ঠিক যেমনটা আমরাও চাই

তিনি আরও বলেন, আমরা যে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের নীতি ঘোষণা করেছি তা এই উদ্দেশ্য এবং বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনভাবে তাদের নেতা নির্বাচনের আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করে। এবং আমি শুধু বলব – যুক্তরাষ্ট্র কোনও বিশেষ দলকে সমর্থন করে না এবং নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করতে চায় না। বাংলাদেশের জনগণ যেন স্বাধীনভাবে তাদের নেতাদের নির্বাচন করতে পারে, যুক্তরাষ্ট্র শুধুমাত্র এটাই নিশ্চিত করতে চায়।

গত ২৪ জুলাইও সংবাদ সম্মেলনে ম্যাথিউ মিলার বলেছিলেন, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া উচিত; বাংলাদেশে আলাদা করে কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে অবস্থান নেবে না যুক্তরাষ্ট্র।

এ বছরের মে মাসের শেষে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। তখন জানানো হয়েছিল, বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দেশটির ভিসা দেওয়া হবে না।

ওই ঘোষণার প্রায় চার মাসের মাথায় ২২ সেপ্টেম্বর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক বিবৃতিতে জানান, তার দেশ ভিসানীতির প্রয়োগ শুরু করেছে।

পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে ম্যাথু মিলার বলেছেন, আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই তালিকায় রয়েছেন- আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের সদস্য। বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র।

গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের পাশাপাশি তাদের পরিবারের সদস্যরাও এ ভিসানীতির আওতায় পড়তে পারেন।

এ ছাড়া বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত ব্যক্তিরা ভবিষ্যতে এই ভিসানীতির আওতায় মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারেন। এই তালিকায় থাকতে পারেন বাংলাদেশের বর্তমান ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।

তিনি আরও বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন আয়োজন নিয়ে বাংলাদেশের যে লক্ষ্য তাকে সমর্থন করতেই আজকের এই পদক্ষেপ।

এ ছাড়া যারা বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।

এমন ঘোষণার পর একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পিটার হাস জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের গণমাধ্যমকর্মীদেরও ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *