বাংলাদেশকে বাংলাদেশ না বলে যা বলে চীন.

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত হ্যাংঝু নগরীর মতো চীনারাও বেশ আন্তরিক, বিশেষ করে এশিয়ান গেমসের মেইন মিডিয়া সেন্টার থেকে শুরু করে ভেন্যুগুলোতে দায়িত্ব পালন করা ভলান্টিয়ারদের আতিথেয়তায় মুগ্ধ অতিথিরা।

একটা সমস্যা নিয়ে গেলেই সমাধানে এগিয়ে আসেন চার থেকে পাঁচজন। ব্যর্থ হলে ফোন করে বাইরে থেকে নিয়ে আসেন আরও কয়েকজনকে। মোটকথা, সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত লেগে থাকেন তারা। কিন্তু সমস্যার সমাধান পেতে গেলে পড়তে হচ্ছে ভাষা বিড়ম্বনায়। ‘সেলফ ডিপেন্ডেবল’ বলে চীনাদের অন্য ভাষার প্রতি অনীহা। হাতেগোনা কয়েকজন ইংরেজি জানলেও তাদেরটা যেমন বুঝতে সমস্যা, তেমনি বোঝাতে গিয়েও পার হয় ৩০ মিনিটের মতো। নিজ দেশের পরিচয় দিতে গেলে পড়তে হয় বেকায়দায়।

বাংলাদেশ থেকে এসেছি বললেই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন চীনারা। যেন এই প্রথম লাল-সবুজের দেশটির নাম শুনেছেন। তাদের বিস্ময় চেহারা দেখে বুঝতে বাকি নেই, সমস্যাটা ভাষাগত। মোবাইলে ইংরেজিতে বাংলাদেশ লেখার পর তারা বলে ‌ওঠে– ওহ ‘মুনজালাগুয়ো’। চায়নিজ ভাষায় ‘মুনজালাগুয়ো’র বাংলা অর্থ হলো বাংলাদেশ। চায়নিজরা যেমন বাংলাদেশ শুনে অবাক হয়ে যান, তেমনি করে গেমস কাভার করতে আসা বাংলাদেশিরা‌ও ‘মুনজালাগুয়ো’ কথাটি শুনে এর মানে বোঝার চেষ্টা করেন। প্রচেষ্টায় সফল হওয়ার পর বাংলাদেশিদের মুখেও ‘মুনজালাগুয়ো’ কথাটি উচ্চারিত হচ্ছে বেশি। যদি‌ও এর সঠিক উচ্চারণ হচ্ছে ‘মেংজিয়ালাগুয়ো’। কিন্তু চায়নিজরা এত দ্রুত উচ্চারণ করেন, তাতে মনে হয় যে এটা ‘মুনজালাগুয়ো’।

ফুটবল ইভেন্ট দিয়ে এবারের এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের মিশন শুরু হয়। জিওশান স্পোর্টস সেন্টার স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের ফুটবল ম্যাচ কিংবা জিয়েজায় ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি গ্রাউন্ডে নারী ক্রিকেটের ম্যাচের সময় সাউন্ডবক্সে দুই ভাষায় বাংলাদেশের নাম উচ্চারণ করতেন ধারাভাষ্যকাররা। একজন ইংরেজিতে ‘বাংলাদেশ’ বলার পর আরেকজন চায়নিজ ভাষায় বলেছেন ‘মুনজালাগুয়ো’। এর অর্থ দুই রকমের। ‘মুনজালা’ মানে বাংলাদেশি, আর ‘মুনজালাগুয়ো’ মানে বাংলাদেশ।

হ্যাংঝু শহরের বিভিন্ন জায়গায় যা‌ওয়ার পর গলায় ঝোলানো গেমসের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেখে হেসে অনেক চীনাকে বলতে দেখে গেছে ‘মুনজালাগুয়ো’। এবারের গেমসে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি চোখে পড়েছে, সংবাদ সম্মেলনে কখনোই নিজ ভাষায় প্রশ্ন কিংবা উত্তর দিতে পারেন না সংবাদকর্মী ও অ্যাথলেটরা। সংবাদ সম্মেলনটি শুধু ইংরেজি ও চায়নিজ ভাষায় হয়। বাংলাদেশের কোনো অ্যাথলেটকে বাংলায় প্রশ্ন করতে চাইলে আগে থেকেই ‘নো, নো’ বলে দৌড়ে আসেন ভলান্টিয়াররা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *