বন্ধুর বই পড়ে সহকারী জজ হলেন আসাদুজ্জামান নূর

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান নূর। মাস্টার্স শেষ না হতেই বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের (বিজেএসসি) নিয়োগ পরীক্ষায় সহকারী জজ পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। সারাদেশে উত্তীর্ণ ১০৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে হয়েছেন ৪০ তম। নূরের এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে সংগ্রামী এক গল্প।

পঞ্চগড় জেলার সদর উপজেলার মৃত মো. নূর বাদশার দ্বিতীয় সন্তান নূর। এসএসসিতে জিপিএ ফাইভ এবং এইচএসসিতে ৪.৩৩ জিপিএ পেয়ে উত্তীর্ণ হয় ২০১৬ সালে। এরপর মা মোছা. রশিদা পারভীনের অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে ২০১৭ সালে ভর্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা ভর্তি হোন। নূর বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।

নূরের সংগ্রামী জীবনে ২০১২ সালে বাবাকে হারান। সবেমাত্র তখন এসএসসি পাশ করেছেন। তখন থেকেই মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রম আর প্রচেষ্টায় এতদূর নিয়ে আসে তাকে। নূর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার পর শুরুর দিকে তেমন পড়াশুনায় মনোযোগী ছিলাম না। করোনার সময় জীবন সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি। অনিশ্চয়তার জীবনে নিজেকে বদলানোর প্রয়াসে নামাজ এবং পড়াশোনায় মনোযাগী হই।

বই কেনার তেমন সামর্থ ছিলো না আমার। কারণ প্রথম বর্ষ থেকেই উপবৃত্তির টাকায় পড়াশোনা চালিয়ে যেতাম। পরবর্তীতে আমার বন্ধু হোসনে মোবারক সাগর এবং মোহাম্মদ নাজ্জাসির বই নিয়ে আমি পড়াশোনা শুরু করি। বিজেএসসির প্রিলি হতে লিখিত পুরোটা সময় আমি তাদের বই পড়েছি। বিষয়টি আমার বন্ধু -সহপাঠী ও কাছের মানুষজন জানে। এছাড়াও জুডিশিয়ারীর দিক নির্দেশনায় আমি সবথেকে বেশি সহায়তা পেয়েছি সাকিব আহমেদ ইমন ভাইয়ের কাছ থেকে। যিনি ১৫তম বিজেএসসি পরীক্ষায় সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশ প্রাপ্ত। আজীবন ভাইয়ের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো ৷

নূর আরও বলেন, ইমন ভাই আমাকে মানসিকভাবে অনুপ্রাণিত করতো। বলতো নূর তুমি পারবে। ভাই আমার আপন ভাইয়ের মতো সহযোগিতা করেছেন। সবথেকে বেশি কৃতজ্ঞ থাকবো আমার মায়ের কাছে, সেই ছোট থেকেই আমার প্রতিটা সিদ্ধান্তে তিনি সব সময়ই আমার পাশে ছিলেন, সাহস জুগিয়েছেন ৷ আমার আজকে যা অর্জন তার পুরোটাই আমার মায়ের অর্জন বলে আমি মনে করি৷ অনেক বছর অপেক্ষায় ছিলাম মাকে একটা সুসংবাদ জানাবো, মায়ের হাসিমাখা মুখটা দেখবো৷ অনেক দিন মাকে হাসিমুখে দেখিনি। আল্লাহ তা আলা আমার ফরিয়াদ কবুল করেছেন আলহামদুলিল্লাহ ৷

আজ আমার এই অর্জনে যে মানুষটা সবচেয়ে বেশি খুশি হতো, সে মানুষটা হচ্ছে আমার বাবা। যিনি গর্ব করে বলতো আমার ছেলে বিচারক হিসেবে মনোনিত হয়েছে, সেই মানুষ টা নেই ৷ এটাই আমার সবচেয়ে বড় দুঃখ। এছাড়া আমার কোনো দুঃখ নেই ৷ আপনাদের সকলের কাছে আমার বাবার জন্য দোয়া চাই, আল্লাহ তা আলা যেন আমার বাবাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করেন, আমিন ৷

পড়াশোনার বিষয়ে নূর বলেন, আমি ফজরের নামাজ পড়ে পড়াশুনা শুরু করতাম। যতক্ষণ ক্লান্ত না হতাম ততক্ষণ পড়ার চেষ্টা করতাম। সবসময় চেষ্টা করেছি বুঝে পড়ার জন্য। একটা বিষয় কয়েকবার পড়ার চেষ্টা করেছি। সর্বোপরি মায়ের ইচ্ছে পূরণে নিজের সাথে যুদ্ধ করেছি। আর আল্লাহ কাছে সাহায্য চেয়েছি। সবার দোয়া আর নিজের প্রচেষ্টার সম্মিলিত প্রয়াস আজকের আমার এই সফলতা।

আমার সফলতার পিছনে আমার বিভাগের শিক্ষকরা অনেক ভূমিকা রেখেছেন। এজন্য তাদের প্রতি আমি চির কৃতজ্ঞ। নূরের সফলতায় উচ্ছ্বসিত সহপাঠী, শিক্ষক ও বড় ভাইয়েরা। এ বিষয়ে নূরের আবাসিক হলের বড় ভাই শাহজালাল ইসলাম সোহাগ বলেন, নূর কঠোর পরিশ্রমী ছেলে ছিলো। আমি তাকে পড়তে দেখে ঘুমিয়ে যেতাম, সকালে ঘুম থেকে উঠে তাকে পড়তে দেখতাম। এছাড়াও নূরের বড় গুণ বিনয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *