পাখিরা মানুষের মতো কথা বলে কীভাবে

ঠোঁট না নাড়িয়ে এই বাক্যটা জোরে জোরে পড়ুন তো! কী বললেন? নাহ, হলো না। কিছুই বুঝতে পারিনি। আচ্ছা, বাংলা বাদ। পৃথিবীর যেকোনো ভাষায় একটি বাক্য স্পষ্ট করে বলুন। শর্ত একটাই, ঠোঁট নাড়ানো যাবে না। নাড়ানো যাবে না মানে একচুলও না। পারছেন? দুশ্চিন্তার কিছু নেই। অনেক চেষ্টা করেও যদি না পারেন, সেটা খুব স্বাভাবিক ব্যপার। ঠোঁট নাড়ানো ছাড়া মানুষের পক্ষে স্পষ্ট করে কথা বলা খুব কঠিন।

ভেন্ট্রিলোকুইস্ট বা মায়াস্বরীরা কাজটা পারেন। ঠোঁট প্রায় না নাড়িয়েই মুখ গহ্বরের মধ্যে স্পষ্ট শব্দ তৈরি করেন তাঁরা। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ চেষ্টা ও অনুশীলন।

স্বাভাবিকভাবে আমাদের জন্য ঠোঁট না নাড়িয়ে কথা বলা প্রায় অসম্ভব বিষয়। মজার ব্যাপার হলো, এই প্রায় অসম্ভব বিষয়টি টিয়া, ময়না বা তোতা পাখির কাছে খুব সহজ ও স্বাভাবিক কাজ। মাত্র কয়েকদিন শুনেই হুবহু নকল করতে পারে তারা মানুষের বলা শব্দ। কিন্তু ওদের আমাদের মতো ঠোঁট নেই। শক্ত যে ঠোঁট আছে, তার কোনো ভূমিকা নেই কথা বলার ক্ষেত্রে। নেই ভোকাল কর্ড। তারপরও কীভাবে এত চমৎকারভাবে শব্দ তৈরি করে তারা?

পাখির গলায় ভোকাল কর্ড না থাকলেও আছে সিরিঙ্কস। সিরিঙ্কস হলো, পাখির শরীরে ইংরেজি ওয়াই (Y) আকৃতির ফাঁপা একধরনের বিশেষ অঙ্গ। ফুসফুস ও শ্বাসনালীর মধ্যে এর অবস্থান। পাখি যখন শ্বাস নেয়, তখন বাতাস শ্বাসনালী থেকে সিরিঙ্কসের মধ্য দিয়ে গিয়ে পৌঁছায় ফুসফুসে। শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় সিরিঙ্কস কাঁপলে তৈরি হয় শব্দ। স্থিতিস্থাপক পেশি ও নরম রিং বা আংটার মতো হাড়ের সাহায্যে সিরিঙ্কসের এ কম্পন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে পাখিরা। ফলে ঠোঁট ছাড়াই তারা গান গাইতে পারে। নিয়ন্ত্রণ আরও বেশি থাকায় মানুষের মতো শব্দ উচ্চারণ করতে পারে টিয়া, ময়না, তোতা বা কাকাতুয়ার মতো পাখিরা। আমাদের মতো ওদের শব্দ মুখে নয়, তৈরি হয় গলায়। ফলে ঠোঁটের সাহায্য ছাড়াই এরা মীনা কার্টুনের সেই মিঠুর মতো স্পষ্ট করে বলতে পারে, ‘আমার নাম মিঠু!’ বলতে পারে আরও নানা শব্দ।

লেখক: শিক্ষার্থী, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা
সূত্র: সায়েন্স ফোকাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *