নির্বাচনের প্রস্তাব কে দিয়েছেন খালেদাকে

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার আবেদন নাকচ করে তাকে জেলে গিয়ে আবার আদালতে আবেদন করার কথা জানিয়েছে সরকার। তবে ওই আবেদন বাতিল হওয়া নিয়ে ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা। সরকার বলছে, আইন অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি বলছে, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিএনপিকে শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনে যাওয়ার শর্ত দেওয়া হয়েছিল। খালেদা জিয়া সেই শর্ত না মানায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। ফলে এই ইস্যুতে তৈরি হয়েছে এক ধরনের ধোঁয়াশা। কোনো পক্ষই বিবৃতি নিশ্চিত করেনি। খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিনিময়ে নির্বাচনে যাওয়ার শর্তটি সরকারপক্ষ কীভাবে কার মাধ্যমে বিএনপি বা খালেদা জিয়ার কাছে প্রস্তাব করেছে, তা স্পষ্ট করা যায়নি। যদিও এই ইস্যুতে দুটি দলের নেতারাই বরাবর একে অপরের বিরুদ্ধে কথা বলে চলছেন। দুই দলের পক্ষ থেকেই বলা হচ্ছে, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে রাজনীতি চলছে।

Pause

Unmute
Unibots.in
গত রোববার খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার আবেদন বাতিল হওয়ার পর ওইদিন রাতে কিশোরগঞ্জে বিএনপির রোডমার্চের সমাপনী সমাবেশে দলটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল দাবি করে বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে শর্ত দেওয়া হয়েছিল—তিনি যদি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে চান, তাহলে বিএনপিকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আসতে হবে। বিএনপি থেকে উত্তর দেওয়ার আগেই অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতাল থেকে খালেদা জিয়া তা প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন—তার জীবনে গণতন্ত্রের জন্য কোনো শর্ত নেই। ভোটের অধিকারের জন্য, এ দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য কোনো শর্ত নেই। কোনো শর্ত খালেদা জিয়ার নামের সঙ্গে যায় না এবং আমরাও তা মানি না।’ তবে খালেদা জিয়াকে কোথায়, কীভাবে, কোন মাধ্যমে নির্বাচনে যাওয়ার ওই শর্ত দেওয়া হয়েছিল—এ ব্যাপারে কোনো কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন আলাল।

এদিকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ইস্যুতে বিএনপিকে দেওয়া সরকারের এমন শর্ত সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান। এ প্রসঙ্গে তিনি গতকাল সোমবার কালবেলাকে বলেন, ‘উনি (আলাল) আইনের লোক। হয়তো উনি এ ব্যাপারে জানেন। এ সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। তাছাড়া উনার এই বক্তব্য আমি শুনিও নাই। কাজেই এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করব না।’

খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিএনপিকে নির্বাচনে যাওয়ার শর্তের কথা নাকচ করেছে সরকার। এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল কালবেলাকে বলেন, ‘বাজে কথা, ভুয়া কথা। এ ধরনের প্রস্তাবনা কেউ কাউকে দিয়েছে কি না, তা তার জানা নেই। প্রধানমন্ত্রী আইনের বাইরে কোনো কথা বলেননি। খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

গত ২৫ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার বোনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ আবেদন মতামতের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। গত রোববার খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার আবেদন নাকচ করে আইন মন্ত্রণালয় জানায়, বিদেশ যেতে হলে খালেদা জিয়াকে জেলে গিয়ে আবার আদালতে আবেদন করতে হবে; কিন্তু বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি। বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের দাবি, সরকার চাইলে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ করে দিতে পারে। ফলে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার বিষয়টি এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।

লিভার জটিলতা ছাড়াও ৭৮ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ফুসফুস, কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। গত ৯ আগস্ট গুলশানের বাসা ফিরোজায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে তাকে বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৫৩ দিন ধরে তিনি ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বর্তমানে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছে।

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, ‘বোর্ডের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, উনার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। সেজন্য তাকে দ্রুত বিদেশে উন্নত মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে পাঠানো দরকার।’

এদিকে বিএনপিকে আগামী নির্বাচনে আনতে সরকার ‘অসুস্থ’ খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসা ইস্যুকে ‘ঘুঁটি’ হিসেবে ব্যবহার করছে বলে দাবি করছে দলটি। সরকারের এই ধরনের চিন্তা বা পরিকল্পনা কোনো কাজে আসবে না বলেও দাবি তাদের। দলটির নেতারা বলছেন, তারা এ ধরনের কোনো ফাঁদে পা দেবে না। বিএনপি শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড়। এ ব্যাপারে খালেদা জিয়ারও স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছেন। কোনো অবস্থায় শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়া যাবে না এবং এ ব্যাপারে কোনো ধরনের সমঝোতাও হবে না। সাম্প্রতিক সময়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে দেখতে গেলে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের এমন নির্দেশনা দেন খালেদা জিয়া।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, চলমান একদফার আন্দোলনের সঙ্গে এখন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসা ইস্যুটি জোরালোভাবে সম্পৃক্ত হতে পারে। ফলে সরকারবিরোধী আন্দোলন বড় ধরনের মোড় নিতে পারে।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসার আবেদন বাতিল হওয়ায় বিএনপির করণীয় সম্পর্কে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা তো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকার পতনের আন্দোলনে আছি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার ব্যাপারে সরকার নতুন করে যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে, তাতে দেখা যায়, আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *