তানিয়া জানত না বাবা বেঁচে আছে, ২৪ বছর পর খুঁজে দিল ফেসবুক

এক জেলায় থেকেও ২৪ বছর ধরে বাবার দেখা পাননি মোছা. তানিয়া আক্তার (২৪)। কারণ তিনি জানতেনই না যে, তার বাবা জীবিত আছেন। অবশেষে ফেসবুকের কল্যাণে বাবা মো. আলমগীর হোসেনের দেখা পেলেন তানিয়া। একটি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে বাবার সন্ধান পান তিনি।

শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে তারা হবিগঞ্জ শহরের একটি রেস্টুরেন্টে বসে দুই ঘণ্টার আলাপচারিতায় তারা গোটা জীবন ধরে জমানো অনেক কথা বলেন একে অন্যকে। এ সময় তাদের দুজনের চোখেই ছিল অশ্রু। তবে তা আনন্দের।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তানিয়ার বাবা আলমগীর হোসেন হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার দত্তপাড়া মহল্লার বাসিন্দা।

আর তানিয়ার ২৪ বছর কেটেছে পার্শ্ববর্তী মাধবপুর উপজেলার খান্দুরা গ্রামে তার নানাবাড়িতে। তানিয়ার জন্মের অল্পদিন পরেই তার বাবা আলমগীর হোসেন ও মা আফরোজা বেগমের বিচ্ছেদ হয়। এরপর দুজন নতুন সংসারে গেলে তানিয়া বেড়ে ওঠেন তার নানা মাজুম খানের তত্ত্বাবধানে।
তানিয়া আক্তার বলেন, ‘বাবা-মা আলাদা হওয়ার পর মায়ের সঙ্গে প্রায়ই দেখা হতো।

কিন্তু বাবা জীবিত আছেন কি না তা জানতে পারিনি নিয়মের যাঁতাকলে পরে। নিজের মতো করে বাবাকে খুঁজেছি হন্যে হয়ে। কিন্তু পাইনি।’
তানিয়া আরো বলেন, “দুই সপ্তাহ আগে ‘ভবঘুরে’ পেজের অ্যাডমিন ইকবাল আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং আমার কাছে থাকা বাবার যানবহনে বিনামূল্য চলাচলের একটি কার্ড দিই। সেই সূত্র থেকে ওই ভাইটি আমার বাবার সন্ধান বের করে দিয়েছেন।

শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বাবা-মেয়ের এই দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়েছেন ‘ভবঘুরে’ নামে ফেসবুক পেজের অ্যাডমিন ইকবাল আহমেদ। এদিন দুপুরে তানিয়া ও তার বাবা আলমগীর হোসেনের দেখা হয় হবিগঞ্জ শহরের কালিবাড়ি রোডে সৌদিয়া রেস্তোরাঁয়। ‘ভবঘুরের’ অ্যাডমিন ইকবাল আহমেদ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

এখন থেকে বাবার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবেন কি না জানতে চাইলে তানিয়া বলেন, ‘আমার স্বামী ও দুই সন্তান রয়েছেন। স্বামীর অনুমতি নিয়ে বাবার সঙ্গে দেখা করেছি। আগামীতেও স্বামীর সঙ্গে কথা বলে তারপর সিদ্ধান্ত নেব।’

এ সময় নানার সহযোগিতায় দাখিল পাস করেন জানিয়ে তানিয়া তার নানা ও স্বামীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তবে মায়ের বিষয়ে কোনো কিছু বলেননি তিনি।

আলমগীর হোসেন বলেন, নিজের মেয়েকে বৃদ্ধ বয়সে দেখতে পেয়ে অনেক আনন্দিত হয়েছি। এই আনন্দের বিষয়টি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।

‘ভবঘুরে’ পেজের এডমিন ইকবাল বলেন, ‘রেস্তোরাঁর কেবিনে বাবা-মেয়ে দুই ঘণ্টা সময় ধরে আলাপচারিতায় মগ্ন ছিলেন। তারা সেখানে খাওয়া-দাওয়া করেছেন। বার বার কেঁদে দিয়েছেন একে অন্যের দিকে তাকিয়ে। পরে তানিয়া মাধবপুর উপজেলায় তার স্বামীর বাড়ি ও আলমগীর হোসেন তার নিজের বাড়ি চলে যান।’

বাবা-মেয়ের এই দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটানোর মধ্য দিয়ে ইকবাল নিজেও আনন্দিত হয়েছেন বলে জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *