সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি শস্য উৎপাদনকারী অঞ্চল (World’s breadbaskets) ডুবে যাচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ অধিবেশনের সভাপতি ডেনিস ফ্রান্সিস।
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সাধারণ অধিবেশনের একটি বিশেষ সভায় এ কথা বলেন ডেনিস ফ্রান্সিস। তিনি বলেন, যদিও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে ছোট ছোট দ্বীপরাষ্ট্র ও উপকূলবর্তী অঞ্চল সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে, তথাপি শস্য উৎপাদনকারী অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার প্রভাব হবে অনেক বেশি।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বের যেসব অঞ্চলে খাদ্যশস্য যেমন ধান, গম, ভুট্টা ইত্যাদি বেশি উৎপাদন হয় এবং নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করে, সেসব অঞ্চলকে বলা হয় ব্রেডবাস্কেটস বা শস্যভাণ্ডার। এই শস্যভাণ্ডারগুলো বৈশ্বিক খাদ্য সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে এরই মধ্যে অনেক দেশ বিশেষ করে ছোট দ্বীপরাষ্ট্র অস্তিত্ব সংকটে। এটা আর কোন জল্পনা-কল্পনা বা অতিরঞ্জন নয় বলেও জানান ডেনিস ফ্রান্সিস।
জাতিসংঘের ইন্টারগভার্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ-আইপিসিসি বলছে, বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ বৈশ্বিক সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে ২৯ সেন্টিমিটার এবং ২০৭০ সাল নাগাদ ৭০ সেন্টিমিটারে। আর যে ভয়াবহ সামুদ্রিক বিপর্যয় শত বছরে একবার হতো তা প্রতিবছর সংঘটিত হতে পারে বলে আশঙ্কা আছে।
বিশ্বের সমুদ্র উপকূলবর্তী নিম্নাঞ্চলের ৯০ কোটি মানুষ বাস্তুহারা হওয়ার ঝুঁকিতে আছে উল্লেখ করে ডেনিস ফ্রান্সিস বলেন, এর প্রভাব অন্যদের ওপরও পড়বে। উর্বর মিসিসিপি, মেকং ও নীল অববাহিকার মতো শস্যভাণ্ডার যখন ডুবে যাচ্ছে তখন বিশ্বের কেউই বিপদমুক্ত নয়।
ঝুঁকিতে বাংলাদেশেও। ২০৫০ সাল নাগাদ সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটার বাড়লেই বাংলাদেশের ১৭ শতাংশ ভূমি তলিয়ে যাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের ১৯ জেলার ৭০ উপজেলার ৪ কোটি মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা আছে। বাংলাদেশে প্রতি বছর সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে ৬-২১ মিলিমিটার হারে। ফলে সময় যত গড়াচ্ছে সমুদ্রের নোনা পানি ধীরে ধীরে উজানের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের ১৯টি উপকূলীয় জেলার ১৫৩ উপজেলায় প্রায় ৫ কোটি মানুষের বসবাস। যার মধ্যে ১০ থেকে ৩৫ শতাংশ মানুষ অতি দরিদ্র। লবণাক্ততা বাড়ায় উপকূলের প্রায় ৩ কোটি ৫০ লাখ মানুষ তীব্র খাবার পানি সংকটে ভুগছেন। বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য বলছে, লবণাক্ততার প্রভাবে ২০৫০ সাল নাগাদ ৩০ থেকে ৫০ লাখ দরিদ্র ও ২০ থেকে ৩০ লাখ অতিদরিদ্র মানুষ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
এই সংকট মোকাবিলায় অতি শিগগিরই যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের সভাপতি ডেনিস ফ্রান্সিস।