জাতীয় পতাকার আদলে ধানক্ষেত

সবুজ রঙের ধান গাছই দেখে এসেছে বাংলার কৃষক। তবে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ধানশাইল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূরে আলম সিদ্দিকী তার নিজ ফসলের মাঠে সবুজ ও বেগুনি রঙের (পার্পল লিফ রাইস) ধানের চারা দিয়ে তৈরি করেছেন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার প্রতিকৃতি। সবুজ ও বেগুনি রঙের সংমিশ্রণে ব্যতিক্রমী এ ধান চাষ দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছে শত শত মানুষ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দিগন্ত মাঠ জুড়ে সবুজ আর সবুজ। আর সেই সবুজের মাঝেই বেগুনি রঙ। সবুজ ধানের বেষ্টুনির কাছে গেলে মনে হবে বেগুনি রঙের জায়গাটুকু কোনো আগাছা বা বালাই আক্রান্ত ধান। কিন্তু না, এটি এমন একটি ধানের জাত যার পাতা ও কান্ডের রংই বেগুনি।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, দেশে প্রথম বেগুনি রঙের ধানের আবাদ শুরু হয় গাইবান্ধায়। সৌন্দর্য ও পুষ্টিগুণে ভরপুর থাকায় দিন দিন দ্রুত সময়ের মধ্যে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় এ ধানের আবাদ ছড়িয়ে পড়ছে। এ ধানের নাম মূলত পার্পল লিফ রাইস। এই ধান গাছের পাতা ও কান্ডের রঙ বেগুনি হয়। এর চালের রঙও হয় বেগুনি। এটি বিদেশি জাত নয়, দেশীয় শুক্রাণু প্রাণরস (জার্মপ্লাজম)।

শিক্ষক নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি গত বছর ইউটিউবের মাধ্যমে এই বেগুনি রঙের “পার্পল লিফ রাইস” নামের ধান চাষের একটি ভিডিও দেখি। এরপর আমার মাঝে আগ্রহ জাগে এটি চাষ করার। পরে আগ্রহ থেকেই গত বছর আমি অল্প জমিতে বেগুনি ধানের বীজ রোপন করি। আলহামদুল্লিাহ ধানও খুব ভালো হয়। তাই এবারও মোট দশ কাঠা জায়গায় ধান রোপন করেছি। এর মাঝে বেগুনি ধানের বীজও রোপন করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‌‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব বর্ষে আমি জাতীয় পতাকার আকৃতিতে দুই জাতের ধান রোপণ করেছি। যা দেখার জন্য মানুষ প্রতিদিনই আসছেন, দেখছেন, ছবি তুলছেন কেউবা আবার বীজ নেওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছেন। আমার ইচ্ছা আছে, আগামীতে বেগুনি ধানের আবাদ বাড়ানোর।’

উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী ঝিনাইগাতী উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘খুবই সুন্দর হয়েছে ধানক্ষেতটি, দেখতে আমাদের জাতীয় পতাকার মতো হয়েছে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘ধানক্ষেতের মাঝখানে এমন বেগুনি ধান লাগানোর জন্য ক্ষেতের সৌন্দর্য বৃদ্ধি হয়েছে। যা দেখতে উৎসুক মানুষ আসেন ক্ষেত দেখতে। দিন দিন বেগুনি ধান চাষাবাদ বৃদ্ধি হচ্ছে। এর আগেও ঝিনাইগাতী উপজেলায় বেগুনি ধান চাষ হয়েছে। তবে এবার গতবারের তুলনায় একটু বেশি। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মুহিত কুমার দে বলেন, ধানক্ষেতের মধ্যে বেগুনি ধান দিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার আদলে ক্ষেত করেছেন যা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। পাশাপাশি এই বেগুনি ধান পুষ্টিগুণ বেশি। তাই দিন দিন বেগুনি ধান চাষাবাদ হচ্ছে। যে সকল চাষিরা বেগুনি ধানের আবাদ করেছেন তাদের সঙ্গে আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। যদি প্রাকৃতিক কোন সমস্যা না হয় তাহলে এবার ধানের বাম্পার ফলন হবে আশা করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *