চাকরি না করেও ২৩ বছর যাবৎ মৃতদেহ গোসল করাচ্ছেন মজিবুর

চাকরি না করেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে দীর্ঘ ২৩ বছর যাবৎ মৃতদেহ গোসল করিয়ে জীবিকা অর্জন করছেন মো. মজিবুর রহমান নামে এক ব্যক্তি। তিনি চাঁদপুর জেলার মতলব (উত্তর) উপজেলার মিঠুরকান্দি গ্রামের মৃত আব্দুল করিম এর ছেলে। বর্তমানে পরিবার নিয়ে থাকেন পুরান ঢাকার নিমতলী এলাকায় একটি ভাড়া বাসায়।

মজিবুর জানান, তিনি ২০০০ সাল থেকে মরদেহ গোসলের কাজ করে আসছেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে।

তিনি হাসপাতাল বা কলেজের কোনো স্টাফ নন। এভাবেই কাজ করে আসছেন, বর্তমানেও করছেন। তিনি বলেন, “মরদেহ গোসল করিয়ে বিনিময়ে লাশ প্রতি কিছু টাকা পেয়ে থাকি। ২০০০ সালের প্রথম দিকে পেতাম ১০০ শত টাকা, এখন তা পর্যায়ক্রমে বর্তমানে তা বাড়তে বাড়তে ৪০০ শত টাকা পেয়ে থাকি।
কোনো সময়ে বেশি আবার কোনো সময়ে কম, আবার কোনো সময়ে গরিব মানুষের ক্ষেত্রে ফ্রিও করে থাকি। প্রতিদিন গড়ে ৩/৪টি কাজ করতে হয়। পুরুষদের গোসলের কাজ করি আমি, আর নারীদের জন্য আলাদা নারী রয়েছে। নারীদের কাজ হলে তাদের কে সংবাদ দেয়া হয়।
পুরুষদের ক্ষেত্রে আমাকে সংবাদ দেয়া হয়।”
তিনি বলেন, “আগে অনেক কাজ করতে হতো, বর্তমানে তা কমে গেছে।”

মরদেহ গোসল করানোর সময়ে আপনার কাছে কেমন লাগে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “প্রথম প্রথম খুবই কষ্ট লাগতো। আবার ভয়ও করতো। মনে হতো একদিন আমারও মরতে হবে, আমাকেও গোসল করাবে আরেকজন।

তাই কাজটাকে আপন করে নেই। ভালোভাবে গোসল করাই।”
এ কাজ করতে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন? জবাবে বলেন, “আমার আর সমস্যা কি! মাঝে মধ্যে পচা দূর্গন্ধ মরদেহ আসে, সে লাশের কাছে মৃতের স্বজনরাও যায় না। কিন্তু আমরা ঠিকই পয়-পরিস্কার করে সুন্নাহভিত্তিক গোসল করিয়ে থাকি।”

মজিবুর রহমান অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন। তবে আরবি কেরাত লাইনে পড়াশোনা করেছেন তিনি কারী ইউসুফ রহমতুল্লাহর অধীনে। তিনি মারা যাওয়ার পর, তার ছেলে আহমদ বিন ইউসুফ এর অধীনে জ্ঞান অর্জন করেছেন বলে জানান তিনি। মজিবুর ছেলে মেয়েদেরকে মাদ্রাসার লাইনে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করিয়েছেন।

এ কাজ করতে গিয়ে এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে, যা এখনো মাঝে মধ্যে মনে পড়ে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “জি হ্যাঁ! মনে পরে। এখন থেকে ৫/৬ বছর আগের ঘটনা। একটি মরদেহ মৃত্যুর প্রায় দুই মাস পর কবর থেকে উত্তোলন করে মর্গে আনা হয়। ময়নাতদন্ত করা হয়। পরে গোসলের জন্য নেওয়া হয়। মরদেহটি দেখে আমি আশ্চর্য হই, সাধারণত কোনো মানুষ মারা গেলে দুই দিনের মধ্যে পচন ধরে। কিন্তু এই মরদেহটির ক্ষেত্রে দেখলাম কোনো পচন ধরেনি। স্বাভাবিক মনে হলো। মনে হলো লোকটি আজকেই মারা গিয়েছিলেন। এ রকম আরও একটি মরদেহ পাই। এক সপ্তাহ আগের কিন্তু তার ক্ষেত্রেও দেখেছি মরদেহটির কোনোরকম কিছুই হয়নি। কৌতুহল হয়, পরে মরদেহটির স্বজনদের কাছ থেকে শুনেছি তিনি একজন মাওলানা ছিলেন।”

ঢামেক মর্গের মরদেহ গোসল করার বাহিরেও কি গোসল করান কিনা? উত্তরে তিনি বলেন, “কেউ যদি ডাকেন, তাহলে যাই। বাকি যতদিন আছি এভাবেই কাছ করে যাবো।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *