গোপন অভিযান দেখে ফেলায় ফিলিস্তিনি কিশোরকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী

ইসরায়েলি বিশেষ বাহিনী ১৫ বছরের এক ফিলিস্তিনি কিশোরকে তাড়া করে হত্যা করেছে। একটি মানবাধিকার সংগঠন বলছে, অধিকৃত পশ্চিম তীরে একটি সামরিক অভিযানের সময় ইসরায়েলের বিশেষ বাহিনীর সদস্যদের জেনিন শরণার্থীশিবিরে লুকিয়ে থাকতে দেখেছিল ওই কিশোর। এ কারণেই তাকে হত্যা করা হয়েছে।

জেনেভা ভিত্তিক ডিফেন্স ফর চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনালের (ডিসিআইপি) ফিলিস্তিন চ্যাপটার গত বুধবার এক প্রতিবেদনে বলেছে, রাফাত ওমর আহমদ খামায়েসেহ গত মঙ্গলবার জেনিন শরণার্থীশিবিরে তার দাদার বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় নিহত হন।

ডিসিআইপি বলেছেন, বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় রাফাত দেখে, ইসরায়েলি বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা তিনটি ফিলিস্তিনি লাইসেন্সধারী গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসছে। এরপর তারা একজন ফিলিস্তিনির বাড়ি ঘিরে রাখে। তারা এক ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তারের জন্য এসেছিল। ওই ব্যক্তির বাবাকে সে জন্য শাসাচ্ছিল তারা। এ সময় রাফাত ‘বিশেষ বাহিনী! বিশেষ বাহিনী!’ বলে চিৎকার করে। তখন একজন ইসরায়েলি সেনা রাফাতকে ধাওয়া করে এবং ১০ মিটার (৩৩ ফুট) দূর থেকে পেটে গুলি করে।

একজন ফিলিস্তিনি সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলে ইসরায়েলি বাহিনী রাফাতকে আবার গুলি করে। মানবাধিকার গ্রুপটি একমাত্র মানবাধিকার সংস্থা যেটি ফিলিস্তিনের শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করে।

ফিলিস্তিনি ওই ব্যক্তি রাফাতের ওপর শুয়ে পড়ে তাকে রক্ষার চেষ্টা করেন। এরপর তিনিই রাফাতকে তাঁর বাড়ির দিকে নিয়ে যান। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জেনিন শরণার্থীশিবিরে অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশে বাধা দেওয়ায় ব্যক্তিটি ও তাঁর পরিবার রাফাতকে প্রায় দেড় ঘণ্টা বাড়িতে রেখে সেবাশুশ্রূষা দেন। একটি অ্যাম্বুলেন্স জোগাড় করে জেনিনের ইবনে সিনা হাসপাতালে নেওয়ার আগেই রাফাতের মৃত্যু হয়।

ডিসিআইপি জানিয়েছে, একটি বুলেট রাফাতের পেটে প্রবেশ করে বুকের ওপরে ডান দিক থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। অ্যাম্বুলেন্সের জন্য অপেক্ষা করার সময় তার মুখ ও নাক দিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল।

ডিসিআইপি বলছে, তাদের নিয়মিতভাবে সংগৃহীত তথ্য, তদন্ত এবং প্রমাণগুলো নির্দেশ করে, ইসরায়েলি বাহিনী এমন পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনি শিশুদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে যা বিচারবহির্ভূত বা ইচ্ছাকৃত হত্যার সমান।

ইসরায়েলি বাহিনী চলতি বছরের শুরু থেকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে এবং গাজা উপত্যকায় ৪৬টি শিশুসহ অন্তত ২৪০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সর্বশেষ ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে জেনিন, জেরিকো এবং গাজায় গত মঙ্গলবার ছয় ফিলিস্তিনি নিহত হয়।

আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয় অধিকার সংগঠনগুলো ২০০৫ সালের পর অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের জন্য চলতি বছরকেই ‘সবচেয়ে প্রাণঘাতী’ বছর হিসেবে বর্ণনা করেছে।

‘মে আউটবার্স্ট’ নামে পরিচিত একটি জনপ্রিয় ফিলিস্তিনি বিদ্রোহের পর ২০২১ সালের জুন থেকে ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি শহর ও গ্রামে সামরিক অভিযান, গ্রেপ্তার এবং হত্যাকাণ্ড জোরদার করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *