খালেদা জিয়ার মূল ঝুঁকি লিভারে, ‘বিদেশে নেয়া ছাড়া সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা সম্ভব নয়’

তৃতীয়বারের মতো দীর্ঘসময় ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গত কয়েক বছরে আটবার হাসপাতালে যেতে হলেও তার মূল ঝুঁকি এখন লিভার নিয়ে। বিএনপির চিকিৎসক নেতারা বলছেন, দুই বছর আগে মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী বিদেশে নেয়া গেলে অবস্থা এমন ঝুঁকিপূর্ণ হতো না।

বিদেশে নেয়া ছাড়া সম্পূর্ণ ও সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা সম্ভব নয় খালেদা জিয়ার। ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশীদ বলেন, সম্ভব হলে আজকেই উনাকে বিদেশ নেয়া উচিত। প্রত্যেকটি মুহূর্তই গুরুত্বপূর্ণ। লিভারকে অ্যাড্রেস করলে কিডনি খারাপ হয়, কিডনি অ্যাড্রেস করলে ব্লাড প্রেশারের সমস্যা হয় অথবা হার্টের সমস্যা হয়। প্রতি মুহূর্তে উনার অবস্থা ঝূঁকিপূর্ণ। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৮ সালে কারাগারে যান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

পরে নির্বাহী আদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে গুলশানের বাসা ফিরোজায় ফেরেন ২০২০ এর ২৫ মার্চ। এরপর ধারবাহিক বিরতিতে হাসপাতাল আর বাসায় যাওয়া আসা করতে হয় বিএনপি নেত্রীকে। এরমধ্যে কোভিড আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তিও ছিলেন খালেদা জিয়া। ডায়াবেটিস, আর্থাইটিস, কিডনি, লিভারসহ নানা রোগ ও জটিলতায় তাকে সবসময়ই চিকিৎসকের নজরদারিতে থাকতে হয়।

এছাড়া, ২০২১ এর ২৫ অক্টোবর তার শরীরে অস্ত্রোপচার হয়। দীর্ঘ ৮১ দিন হাসপাতালে চিকিৎসার পর বাসায় ফেরেন ২০২২ এর ১ ফেব্রুয়ারি। এরপর তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডও বিদেশে চিকিৎসার বিকল্প নেই বলে জানায়। সবশেষ গত ৯ আগস্ট থেকে হাসপাতালে ভর্তি খালেদা জিয়া।
বিএনপি বলছে, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে খালেদা জিয়া। হাসপাতাল সংক্রান্ত রোগের ঝুঁকি নিয়েই তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, কোনো উপসর্গ দেখা দিলে তখন সে উপসর্গের চিকিৎসা করা হয়। অনেকটা ভাঙা দেয়ালে বাঁশ দিয়ে ঠেক দেয়ার মতো চিকিৎসা এটা।

তার চিকিৎসাটা সুনির্দিষ্ট হওয়া দরকার। বিএনপির চিকিৎসক নেতাদের অভিযোগ, মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ মেনে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ সৃষ্টি হলে বর্তমান জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। বোর্ড, পরিবার ও বিএনপি এখনও খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর আহ্বান জানাচ্ছে। তাদের দাবি, এ ধরনের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত অনেকের বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার উদাহরণ আছে। ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, পূর্বে আমরা দেখেছি আ স ম আব্দুর রব কিংবা সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম বা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অথবা সংসদ সদ্য হাজী সেলিম আছেন, তারা চিকিৎসার জন্য বিদেশে গিয়েছেন। খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার সুযোগ যদি সরকার প্রথম থেকে করতেন তাহলে উনার এই অবস্থা হতো না।খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিও জানাচ্ছেন বিএনপির নেতারা। বলছেন, মুক্ত বাতাসে চলাফেরার সুযোগ পেলে, কিছুটা হলেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *