কোরিয়া থেকে পরীক্ষা দিতে এসে জানলেন ফরম পূরণ হয়নি

নান্দাইলের সমূর্ত্ত জাহান মহিলা ডিগ্রি কলেজের নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে ২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় বিএম শাখা থেকে অংশ নেন ফারিয়া আক্তার। কিন্তু অসুস্থতার কারণে এক বিষয়ে পরীক্ষা দিতে পারেননি। ফলে এক বিষয়ে অকৃতকার্য হন। চলতি বছর (২০২৩) শুধু ওই বিষয়ে পরীক্ষা দিতে তার পক্ষে কলেজে ফরম পূরণের টাকা জমা দেওয়া হয়। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষের ‘গাফিলতির’ কারণে শেষ পর্যন্ত তার ফরম পূরণ হয়নি। তাই প্রবেশপত্র না আসায় সুদূর দক্ষিণ কোরিয়া থেকে স্বামীসহ দেশে এসেও মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ক্ষুদ্র ব্যবসা ব্যবস্থাপনা বিষয়ের পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি ফারিয়া আক্তার।

ফারিয়া আক্তার নান্দাইল উপজেলার রাজগাতী ইউনিয়নের বনাটি গ্রামের রমজান মিয়ার মেয়ে। এ ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষের ‘গাফিলতিকে’ দায়ী করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ফারিয়া।

অভিযোগপত্র থেকে জানা গেছে, নান্দাইল উপজেলার সমূর্ত্ত জাহান মহিলা ডিগ্রি কলেজের নিয়মিত ছাত্রী হিসেবে ২০২২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় বিএম শাখা থেকে অংশ নেন ফারিয়া আক্তার। পরীক্ষা চলাকালে অসুস্থ হয়ে পড়ায় ক্ষুদ্র ব্যবসা ব্যবস্থাপনা (বিষয় কোড-২৪২৮) বিষয়ের পরীক্ষায় বসতে পাড়েননি। এর পর স্বামীর সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়া চলে যান। কিন্তু ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় সেই বিষয়ের পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য নিজে বিদেশে থেকেই এক মামার মাধ্যমে কলেজে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেন।

গত ২৬ জুলাই ফারিয়া আক্তার তার মামা সাদেক হোসেন ভূঁইয়ার মাধ্যমে ফরম পূরণ বাবদ কলেজের রশিদমূলে ২ হাজার ১০০ টাকা জমা দেন। পরবর্তী সময়ে ৩০ আগস্ট কলেজ কর্তৃপক্ষের কথা মতো প্রবেশপত্র আনতে কলেজে যান সাদেক হোসেন। কিন্তু প্রবেশপত্র না দিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাঁকে (মামাকে) কয়েক দিন পর আসতে বলেন। কয়েক দিন পরে গেলেও প্রবেশপত্র আসেনি বলে জানানো হয়। এর পর জানানো হয়, ফারিয়ার ফরম পূরণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে, তাই ঢাকা থেকে করিয়ে আনতে আরও চার-পাঁচ দিন সময় এবং আরও ১০ হাজার টাকা লাগবে। ভাগ্নির পরীক্ষার কথা চিন্তা করে চাহিদা মতো ১০ হাজার টাকাও দেন সাদেক। কিন্তু ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্তু ফারিয়ার প্রবেশপত্র দিতে না পেরে ১০ হাজার টাকা ফেরত দেন। পরীক্ষার রুটিন অনুযায়ী, আজ ক্ষুদ্র ব্যবসা ব্যবস্থাপনা বিষয়ের পরীক্ষা হয়। কিন্তু প্রবেশপত্র না আসায় পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি ফারিয়া।

ফারিয়া আক্তারের মামা সাদেক হোসেন ভূঁইয়ার ভাষ্য, কলেজ কর্তৃপক্ষকে বারবার বলেছেন ফরম পূরণ নিশ্চিত হলে বিষয়টি যেন জানান। কিন্তু কর্তৃপক্ষ পরিষ্কার করে কিছু বলেনি। ফারিয়া ও তার স্বামী দুই-আড়াই লাখ টাকা খরচ করে গত ৮ আগস্ট দেশে এলেও পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হয়নি। কলেজ কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে কোনোভাবেই মানতে পারছেন না তাঁর ভাগনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সমূর্ত্ত জাহান মহিলা ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জ্যোতিষ চন্দ্র সাহা রায় জানান, ফরম পূরণের জন্য একটি নির্দিষ্ট কমিটি থাকে। ফারিয়া আক্তারের লোকজন ওই কমিটিকে পাশ কাটিয়ে অন্যদের মাধ্যমে ফরম পূরণের টাকা জমা দিয়েছেন। পরে বিষয়টি জানতে পেরে তার (ফারিয়ার) ফরম পূরণের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়েছে; কিন্তু নানা জটিলতায় সেটি আর সম্ভব হয়নি।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ত্রুটি হচ্ছে, বিষয়টি তাদের যথা সময়ে জানিয়ে দেওয়া হয়নি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুণ কৃষ্ণ পালের দাবি, অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাখখারুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *