কেনার সামর্থ্য ছিল না, বন্ধুদের বই পড়েই সহকারী জজ হলেন নূর

শিক্ষক কিংবা হলের শিক্ষার্থীরা তাকে ভালোবাসেন, কারণ সে খুবই বিনয়ী। ক্যাম্পাস-বিভাগের বড় ভাই কিংবা বন্ধুরাও তাকে বেশ সমীহ করতেন, কারণ সবাই তার কঠোর পরিশ্রমের কথা জানতেন। তাকে পড়তে দেখে ঘুমিয়ে যেতেন রুমমেটরা, আবার সকালে ঘুম থেকে উঠেও তাকে পড়তে দেখতেন সবাই। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান নূরের পরিশ্রমের গল্পটা এমন। এমন পরিশ্রমের উপহারও মিলেছে। স্নাতকোত্তর শেষ না হতেই বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের (বিজেএসসি) নিয়োগ পরীক্ষায় সহকারী জজ পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি। সারাদেশে উত্তীর্ণ ১০৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪০তম তিনি।

পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার মৃত মো. নূর বাদশার দ্বিতীয় সন্তান নূর। এসএসসিতে জিপিএ ফাইভ এবং এইচএসসিতে ৪.৩৩ জিপিএ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর ২০১৭ সালে ভর্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে ইবির আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভর্তি হন।

২০১২ সালে নূর বাবাকে হারান। সবেমাত্র এসএসসি পাস করেছেন। তখন থেকেই মা মোছা. রশিদা পারভীনের অনুপ্রেরণায় এই পর্যায়ে আসা নূরের। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার পর শুরুর দিকে পড়ালেখায় তেমন মনোযোগী ছিলাম না। করোনার সময় জীবন সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি। অনিশ্চয়তার জীবনে নিজেকে বদলানোর প্রয়াসে ধর্ম পালন এবং পড়াশোনায় মনোযোগী হই।

তিনি বলেন, বই কেনার তেমন সামর্থ্য ছিল না। কারণ প্রথম বর্ষ থেকেই উপবৃত্তির টাকায় পড়াশোনা চালিয়ে যেতাম। পরবর্তীতে আমার বন্ধু হোসনে মোবারক সাগর এবং মোহাম্মদ নাজ্জাসির বই নিয়ে আমি পড়াশোনা শুরু করি। বিজেএসসির প্রিলি হতে লিখিত পুরোটা সময় আমি তাদের বই পড়েছি। এছাড়াও জুডিশিয়ারীর দিক নির্দেশনায় আমি সব থেকে বেশি সহায়তা পেয়েছি সাকিব আহমেদ ইমন ভাইয়ের থেকে। যিনি ১৫তম বিজেএসসি পরীক্ষায় সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশ প্রাপ্ত। আজীবন ভাইয়ের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব।

নূর আরো বলেন, ইমন ভাই আমাকে মানসিকভাবে অনুপ্রাণিত করত। বলতেন, নূর তুমি পারবে। তিনি আমার আপন ভাইয়ের মতো সহযোগিতা করেছেন। সবথেকে বেশি কৃতজ্ঞ থাকব আমার মায়ের কাছে, সেই ছোট থেকেই আমার প্রতিটা সিদ্ধান্তে তিনি সব সময়ই আমার পাশে ছিলেন। সাহস জুগিয়েছেন। আমার আজকে যা অর্জন তার পুরোটাই আমার মায়ের অর্জন বলে আমি মনে করি।

নূর বলেন, অনেক বছর অপেক্ষায় ছিলাম- মাকে একটা সুসংবাদ জানাব। মায়ের হাসি মুখটা দেখব বলে। অনেক দিন মাকে হাসিমুখে দেখিনি। আল্লাহ আমার ফরিয়াদ কবুল করেছেন।

ইবির এই শিক্ষার্থী বলেন, আজ আমার এই অর্জনে যে মানুষটা সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন, সে মানুষটা আমার বাবা। সেই মানুষটা আজ আর নেই। এটাই আমার সবচেয়ে বড় দুঃখ। এছাড়া আমার কোনো দুঃখ নেই।

পড়াশোনার বিষয়ে নূর বলেন, আমি ফজরের নামাজ পড়ে পড়াশুনা শুরু করতাম। যতক্ষণ ক্লান্ত না হতাম ততক্ষণ পড়ার চেষ্টা করতাম। সবসময় চেষ্টা করেছি বুঝে পড়ার। একটা বিষয় কয়েকবার পড়ার চেষ্টা করেছি। সর্বোপরি মায়ের ইচ্ছে পূরণে নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করেছি। আর আল্লাহ কাছে সাহায্য চেয়েছি। সবার দোয়া আর নিজের প্রচেষ্টার সম্মিলিত প্রয়াস আজকের এই সফলতা।

এই সফলতার পেছনে বিভাগের শিক্ষকদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন নূর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *