কী অপরাধে নাতিডার কাল্লাডা লদীত ফালা দিলো?’

নিষ্পাপ নাতিডার অপরাধ কী? তার কাল্লাডা (মাথা) করতোয়া লদীত ফালা দিল ক্যা? অর ফাঁসি চাই। মেয়েডাক জবাই করলো, অবুঝ নাতিডাক জবাই করলো, অর বিচার না হলে আল্লা বেজার (অখুশি) হবি। মা-বাবাসহ ওই পাষণ্ডটার বিচার চাই।

বগুড়া শাজাহানপুরের একটি আবাসিক হোটেলে স্ত্রী আশামনি ও শিশুপুত্র আব্দুল্লাহ হেল রাফীকে হত্যা করে শিশুপুত্রের মাথা করতোয়া নদীতে ফেলেছেন সেনা সদস্য আজিজুল হক। আশামনির মা গোলাপী বেগম বিলাপ করতে করতে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।

গোলাপী বেগম জানান, তাদের বড় ছেলে শুভ সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে চাকরি করে। ছেলের সঙ্গেই প্রথম পরিচয় হয় আজিজুলের। এরপর ফেসবুকে ছবি দেখে আশামণিকে পছন্দ করেন আজিজুল। এরপর পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে দেন তারা। বিয়ের পর আশামণি শ্বশুরবাড়িতেই থাকত। চুন থেকে পান খসলেই শ্বশুর-শাশুড়ির নির্যাতন সহ্য করতে হতো। আজিজুলকে জানানোর পর মা-বাবার পক্ষ নিয়ে আশামণিকে উল্টো নির্যাতন করত। মা-বাবা ও ছেলে পূর্বপরিকল্পনা করে আশামণিকে হত্যা করেছেন।

আশামণির বাবা আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘বিয়্যার সময় জামাই কচলো, যৌতুক দেওয়া লাগবি না। জামাইয়ের কতাত খুশি হয়্যা হামমি লিজত থ্যাকে শহরত তিন শতক জায়গা কিনে দিবার চাচনু। পরে জমির বদল জামাই পাঁচ লাখ টেকা চাচলো। ধারদেনা করে এক লাখ টেকা দিচনু। বাকি চার লাখ টেকার জন্যি হামার মেয়েডাক জামাই আর শ্বশুর-শাশুড়ি মিলে নির্যাতন করিচ্ছিল। নাতিডার কথা চিন্তা করে সব সহ্য করচিনু। কিন্তু হামার মেয়েডাক এভাবে গরুর মতো জবাই দিল, নাতিডাক ছাগলের মতো জবাই করে মাথাডা নদীত ফ্যালে দিল। মেয়ে আর নাতিক হারানোর এই শোক হামরা ক্যামনে মানে নিমু?

এদিকে শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম জানান, সোমবার আজিজুল হককে আদালতে সোপর্দ করা হলে বিচারকের সামনে পারিবারিক ও দাম্পত্য দ্বন্দ্বের কারণে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

ওসি বলেন, মামলায় হত্যার কারণ অজানা দেখিয়ে নিহত আশামনির স্বামী আজিজুল হক ও তার বাবা হামিদুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে। আশামনির বাবা আশাদুল বাদী হয়ে শাজাহানপুর থানায় মামলা করেন।আজিজুলের দেওয়া তথ্যমতে, করোতোয়া নদীতে ফেলে দেওয়া শিশু আব্দুল্লাহর দেহ বিচ্ছিন্ন মাথা এখনও খুঁজে পায়নি ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল।

এর আগে শনিবার রাতে শহরের বনানী এলাকায় শুভেচ্ছা আবাসিক হোটেলে আশামনি ও তার ১১ মাস বয়সী শিশু আব্দুল্লাহ গলাকেটে হত্যার ঘটনা ঘটে। রোববার সকালে পুলিশ ওই হোটেল কক্ষ থেকে সেই সেনাসদস্যের স্ত্রীর বিবস্ত্র এবং সন্তানের মাথাবিহীন মরদেহ উদ্ধার করে।

পুলিশের তথ্যের বরাতে জানা যায়, আজিজুল একজন সেনাসদস্য। স্ত্রী ও সন্তানকে হোটেল কক্ষে শনিবার সন্ধ্যা ৭ টা থেকে ৯টার মধ্যে পরিকল্পতভাবে হত্যা করেন তিনি। ঘটনাস্থল থেকে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি ও রামদা উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আজিজুল জানান, হত্যার পর করোতোয়া নদীতে শিশু রাফির মাথা ফেলে দিয়েছেন তিনি। পরে বউ ও ছেলে হারিয়ে গেছে বলে শ্বশুরকে সঙ্গে নিয়ে বগুড়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজাখুঁজি করেন।

তদন্তে পুলিশের সিআইডি, ডিবিসহ একাধিক টিম ও সেনাবাহিনীর একটি দল কাজ করছে। শিশুটির মাথা উদ্ধারে কাজ করছে ডিবি ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল। এ দিকে ঠিক কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড তা জানা যায়নি। স্বজনরা জানান, তাদের মধ্যে কোনো কলহ ছিল না। তবে আশামনির বাবা আশাদুল ইসলামের অভিযোগ, যৌতুকের জন্য তার মেয়ে ও নাতিকে খুন করেছে আজিজুল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *