কলেজছাত্র হৃদয়কে হত্যার কারণ জানাল অভিযুক্তরা

চট্টগ্রামের রাউজানে কলেজছাত্র শিবলী সাদিক হৃদয়কে হত্যার পর হাড় থেকে মাংস আলাদা করে পাহাড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখার ঘটনায় আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। র্যাব বলছে, কর্মস্থলে দ্বন্দ্বের জেরে তাকে ‘উচিত শিক্ষা দিতে অপহরণ করা হয়’। এরপর হত্যা করে মরদেহ গুম করতে চেয়েছিলেন অভিযুক্তরা। তাদের লক্ষ্য ছিল, মরদেহ যাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শনাক্ত করতে না পারে। তবে মাংস খাওয়ার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

রোববার (১ অক্টোবর) সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৭-এর অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মো. মাহবুব আলম এসব তথ্য জানান। এ সময় র্যাব-৭-এর অধিনায়ক বলেন, হৃদয়কে হত্যার পর মাংস খেয়ে ফেলেছে এমন একটি খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা গ্রেপ্তার দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তারা বলেছে, এ ব্যাপারে তারা জানে না। তবে শরীরের মাংস আলাদা করে ফেলে দেওয়া হয়েছিল এটি সত্য। তবে মাংস খাওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

গত ২৮ আগস্ট রাতে রাউজানের কদলপুর ইউনিয়নের পঞ্চপাড়া গ্রাম থেকে অপহরণের শিকার হন শিবলী সাদিক হৃদয় (২০)। কদলপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র শিবলী পড়ালেখার পাশাপাশি একই গ্রামের সিকদারপাড়ায় মুরগির খামারে চাকরি করতেন। ১০ সেপ্টেম্বর তাকে খুনের ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর তাদের নিয়ে অভিযান চালিয়ে ১১ সেপ্টেম্বর রাউজান-রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী রঙিন পাহাড় থেকে দেহাবশেষ উদ্ধার করে পুলিশ। এদিকে ফেরার পথে পুলিশের কাছ থেকে ঘটনায় জড়িত আসামি উমংচিং মারমাকে ছিনিয়ে নেয় গ্রামবাসী। পরে উত্তেজিত গ্রামবাসীর মারধরে তার মৃত্যু হয়। এ ছাড়া সুইচিং মং মারমা ও অংথুইমং মারমা আদালতে ঘটনার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

এরপর শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাতে র্যাবের একটি দল নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ও শাহ আমানত সেতু এলাকায় অভিযান চালিয়ে উচিংথোয়াই মারমা (২৩) ও ক্যাসাই অং চৌধুরীকে (৩৬) গ্রেপ্তার করে।

হৃদয়কে খুনের বর্ণনা দিয়ে র্যাব-৭-এর অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মো. মাহবুব আলম বলেন, মুরগির খাবার বাইরে বিক্রি করে দিতেন খামারে কর্মরত বাকি ছয় থেকে সাতজন শ্রমিক। এ নিয়ে প্রতিবাদ করেন পোলট্রি খামারের ম্যানেজার শিবলী সাদিক হৃদয়। এ কারণে খামারে কর্মরত ওই শ্রমিকদের সঙ্গে কয়েক দফা তর্কাতর্কি হয়। তখন থেকে শ্রমিকরা সিদ্ধান্ত নেন হৃদয়কে উচিত শিক্ষা দেবেন। আর উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য তাকে খামার থেকে অপহরণ করে চট্টগ্রামের রাউজান-রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী রঙিন পাহাড়ে নিয়ে যান। সেখানে গলা কেটে হত্যা করে লাশ কলাপাতা দিয়ে ডেকে দেন। লাশ যাতে শনাক্ত না হয় এ জন্য ছুরি দিয়ে হাড় থেকে মাংস পৃথক করা হয়। এ কাজে ৮ থেকে ৯ জনের একটি দল অংশ নেয়।

র্যাব-৭ এর অধিনায়ক আরও বলেন, ‘হৃদয়কে খুনের পর তার বাবার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করেন খুনিরা। মুক্তিপণের দুই লাখ টাকা থেকে উচিংথোয়াই দেড় লাখ এবং বাকিদের ৫০ হাজার টাকা ভাগ করে দেওয়া হয়।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *