কর্মসূচি দুই সপ্তাহ টেনে নিতে চায় বিএনপি

আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় কমপক্ষে আরও দুই সপ্তাহ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এরই মধ্যে দলের তৃণমূল এবং দায়িত্বশীল নেতাদের হাইকমান্ডের নতুন এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা বাস্তবায়নে নেতাদের যথাসম্ভব গ্রেপ্তার এড়িয়ে রাজপথে থাকার কথা বলা হয়েছে। বিএনপির কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। দায়িত্বশীল ওই নেতারা জানিয়েছেন, তাদের প্রত্যাশা-কর্মসূচি

আগামী দুই সপ্তাহ টেনে নিয়ে গেলে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক করতে পশ্চিমা বিশ্বের অব্যাহত চাপে এ সময়ের মধ্যে কোনো সমঝোতামূলক পরিস্থিতির তৈরি হতে পারে। এতে করে পেছাতে পারে তপশিল।‘একতরফা’ তপশিলের প্রতিবাদ এবং সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফাদাবিতে কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে রয়েছে বিএনপি।

দুই দফা হরতালের পর আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। কর্মসূচি অনুযায়ী, আগামীকাল বুধবার (২২ নভেম্বর) সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) সকাল ৬টা পর্যন্ত দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার সর্বাত্মক অবরোধ পালন করবে বিএনপি। গতকাল বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির

রিজভী নতুন এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। যুগপৎভাবে এই কর্মসূচি পালিত হবে। গতকাল একই কর্মসূচি ঘোষণা করে জামায়াতে ইসলামীও।আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ গত রোববার থেকে সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টা হরতালের কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি ও যুগপতের শরিকরা, যা আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টায় শেষ হয়েছে। এর আগে গত ২৯ অক্টোবর থেকে দেশব্যাপী পাঁচ ধাপে ১১ দিন অবরোধ এবং এক দিনের হরতাল পালন করে বিএনপি ও এর

মিত্ররা।এদিকে দাবি আদায়ে বিএনপির চলমান কর্মসূচি ঢিলেঢালাভাবে পালন নিয়ে সারা দেশের নেতাকর্মীর মধ্যে এক ধরনের আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসা, ঢাকায় মহাসমাবেশের আগে প্রায় এক বছর ধরে ঢাকাসহ সারা দেশে হাজার হাজার এমনকি লক্ষাধিক নেতাকর্মী নিয়ে সফলভাবে সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার অভিযান চললেও সব

নেতাকর্মী তো গ্রেপ্তার হয়নি। তাহলে বাইরে থাকা নেতাকর্মীরা কেন রাজপথে নেমে শক্তভাবে কর্মসূচি পালন করতে পারছেন না, কেন ঝটিকা মিছিলে কর্মসূচি পালন করতে হচ্ছে। জনমনেও উঁকি দিচ্ছে এমন প্রশ্ন। তবে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, ২৮ অক্টোবরের পরে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। মহাসমাবেশকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

পুরো বিষয়টি মাথায় রেখেই কর্মসূচি চালিয়ে যেতে হচ্ছে। একই সঙ্গে কর্মসূচি বাস্তবায়নের ধরনও সে অনুযায়ী নির্ধারণ করতে হচ্ছে।ঢাকায় মহাসমাবেশে সংঘর্ষের ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার, খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সসহ দলটির প্রথম সারির বেশিরভাগ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আন্দোলন কৌশলের অংশ হিসেবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিকভাবে দলের দ্বিতীয় সারির নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কৌশল অনুযায়ী, কেউ গ্রেপ্তার হলেই তার পরের জন দায়িত্ব নিয়ে নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আন্দোলন অব্যাহত

রাখবেন। বিএনপির জেলা পর্যায়ে এরই মধ্যে অনেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক গ্রেপ্তার হয়েছেন। সেখানে বিকল্প নেতৃত্বের মাধ্যমে আন্দোলন চলছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলীয় কৌশলের অংশ হিসেবে কর্মসূচি বাস্তবায়নে নেতাকর্মীদের একযোগে মাঠে না নামার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দলটি মনে করছে, সবাই একত্রে রাজপথে নামলে সেখানে পুলিশের পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। তা ছাড়া দলের প্রত্যাশা অনুযায়ী, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে

পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন না হলে আন্দোলনকে তখন নির্বাচন পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়া লাগতে পারে। তাই নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার এড়িয়ে কর্মসূচি পালন করতে বলা হয়েছে।বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ৪৮০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের আগে-পরে অদ্যাবধি ১৪ হাজার ২০০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়এদিকে অব্যাহত গ্রেপ্তারের মধ্যে কর্মসূচি এখন পর্যন্ত যেভাবে

পালিত হচ্ছে, তাতে বিএনপির হাইকমান্ড আপাতত সন্তুষ্ট বলে জানা গেছে। চলমান আন্দোলনকে এভাবে আরও দুই সপ্তাহ টেনে নিতে পারলে রাজনৈতিক পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে প্রত্যাশা দলের। তবে কী পরিবর্তন আসতে পারে সেটা স্পষ্ট না করলেও বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা ধারণা দিয়েছেন, এ সময়ের মধ্যে ঘোষিত তপশিল পেছানো হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের অব্যাহত চাপে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে

অংশগ্রহণমূলক করতে কোনো সমঝোতামূলক পরিস্থিতির তৈরি হতে পারে। কারণ, রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়াই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষিত হওয়ায় সমঝোতামূলক পরিস্থিতি তৈরি এবং নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক করতে সামনে সরকারের ওপর বিদেশিদের চাপ আরও বাড়তে পারে, যা ক্ষমতাসীনদের পক্ষে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নাও হতে পারে।

বিএনপির হাইকমান্ডের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগে থাকা দলটির এক দায়িত্বশীল নেতা জানিয়েছেন, হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদের হতাশ না হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। আশাবাদ ব্যক্ত করে বলা হয়েছে, আন্দোলন অব্যাহত রাখতে পারলে আগামী ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে।

তবে প্রয়োজনে আন্দোলন কর্মসূচি নির্বাচন পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়া লাগতে পারে বলেও ধারণা দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে ২০১৪ সালের মতো আসন্ন জাতীয় নির্বাচনও বয়কট করে ভোট প্রতিহত করতে লাগাতার আন্দোলনে নামতে পারে বিএনপি ও শরিকরা। তখন হরতাল-অবরোধের সঙ্গে অসহযোগ আন্দোলনেও যেতে পারে দলটি। এদিকে ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের পর থেকে বিএনপির

পক্ষ থেকে শুধু দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গণমাধ্যমে কথা বলছেন, দলের অবস্থান তুলে ধরছেন। এমন অবস্থায় সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে বিদেশিদের দৃষ্টি আকর্ষণে হাইকমান্ডকে দলের ভয়েজ আরও বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে রিজভীর পাশাপাশি দলের সিনিয়র পর্যায়ের আরও কিছু নেতা যেন সরকারের অত্যাচার-নির্যাতন, গ্রেপ্তার

ইস্যুতে সরব হয়, হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে সহসাই সে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। একদফা দাবিতে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎভাবে আন্দোলন করছে গণঅধিকার পরিষদ। দলটির একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, দাবি আদায়ে আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করছি, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আমাদের পরিষ্কার দাবি, সরকারকে পদত্যাগ

করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে। হরতাল-অবরোধের পর প্রয়োজনে আমাদের অসহযোগ কর্মসূচির ঘোষণা আসবে, যেখানে সরকারি কর্মচারীরাও আমাদের সঙ্গে রাজপথের আন্দোলন থাকবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *