এমপি হতে মোসাদকে পাশে চায় হিরো আলম

নাম তার আশরাফুল হোসেন আলম; কিন্তু মানুষ এই ইউটিউবারকে চেনে হিরো আলম নামে। এই ব্যক্তি কোনো না কোনো কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সবসময় আলোচনায় থাকেন। রাজনীতিতে জড়িয়েছেন কয়েক বছর আগে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে অংশ নিয়েছেন একাধিকবার। যদিও তিনি কোনোবারই জয়ের দেখা পাননি। তাই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে কোনো মূল্যে এমপি হতে চান। তাই তিনি আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। এরই অংশ হিসেবে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সান্নিধ্য লাভের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন তিনি।

জানা গেছে, মোসাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে তিনি সখ্য গড়ার চেষ্টা করছেন আলোচিত চরিত্র শিপন কুমার বসুর সঙ্গে। এই শিপন কুমার ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্ট হিসেবে পরিচিত মেন্দি এন সাফাদির ঘনিষ্ঠ। তবে হিরো আলমের দাবি, শিপন কুমারের সঙ্গে আগামী নির্বাচনে এমপি হওয়ার ইচ্ছার বিষয় প্রকাশ করলেও আন্তর্জাতিক সাহায্য চাওয়া নিয়ে কোনো কথা হয়নি।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে মেন্দি এন সাফাদির নাম আলোচনায় আসে ২০১৬ সালে।

মোসাদের এজেন্ট হিসেবে সবাই তাকে চেনেন। যদিও তিনি নিজেকে ইসরায়েলের লিকুদ পার্টির নেতা এবং সাফাদি ফাউন্ডেশনের কর্ণধার পরিচয় দেন। সে সময় সাফাদির পাশাপাশি আরেকটি নামও বেশ আলোচনায় আসে—সেটি হচ্ছে শিপন কুমার বসু। ফেসবুকে তার পরিচয় দেওয়া আছে ওয়ার্ল্ড হিন্দু স্ট্রাগলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে।

২০১৬ সালে ভারতের আগ্রায় একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ভারতে আসেন সাফাদি। ওই সময় শিপন কুমারের মধ্যস্থতায় সাফাদির সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাতে ইসরায়েলিদের সঙ্গে আঁতাত করতেই ওই বৈঠক হয়েছিল। সাফাদির সঙ্গে সাক্ষাতের খবর প্রকাশ হওয়ার পর ওই বছরের ১৫ মে আসলামকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এক বছর পর তিনি জামিনে মুক্তি পান। পরে তার বিরুদ্ধে দুদকের দুর্নীতি মামলাসহ একাধিক মামলা হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে।

সম্প্রতি গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক নুরুল হক নুরের সঙ্গে সাফাদির বৈঠকের বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে এই দুটি নাম আবারও আলোচনায় আসে। নুর প্রথমে সাফাদির সঙ্গে বৈঠকের কথা অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে সাফাদির বৈঠকের বিষয়টি উঠে আসে।

কথিত আছে, বাংলাদেশের সঙ্গে সাফাদির যোগাযোগের সূত্র বাংলাদেশি নাগরিক শিপন কুমার। তিনি বাংলাদেশের নাগরিক হলেও বেশিরভাগ সময় থাকেন কলকাতায়। সাফাদি সেন্টারের ফেসবুক পেজে শিপনের সঙ্গে মেন্দি এন সাফাদির অনেক ছবি রয়েছে। তিনি এক ভিডিও বার্তায় শিপনকে তার মুখপাত্র হিসেবে ঘোষণাও দেন। তবে চলতি বছরের ৭ এপ্রিল তিনি ফেসবুকে আরেকটি পোস্টে বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় শিপন আমার নাম ভাঙিয়ে ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকদের কাছে থেকে টাকা নিয়েছে। এ সম্পর্কে আমি কিছু জানি না এবং আমি এসবের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। আমি সবাইকে সতর্ক করতে চাই, আমার পক্ষ হয়ে কথা বলার জন্য আমি কাউকে দায়িত্ব দিইনি। আশা করি, উপযুক্ত লোকজন দিয়ে আমি বাংলাদেশিদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে সক্ষম হব এবং পরিবর্তন আনব।

হিরো আলমের বিষয়ে এই প্রতিবেদক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যোগাযোগ করেন শিপন কুমারে সঙ্গে। এরপর তিনি ফোনে কালবেলাকে বলেন, হিরো আলম আমার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেছেন। তিনি যখন দুবাইয়ে আরাভ খানের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন, সেখান থেকেও আমাকে একাধিকবার ফোন দিয়েছিলেন।

হিরো আলম কী চান—জানতে চাইলে শিপন কুমার বলেন, উনি সামনের নির্বাচনে এমপি হতে চান। তার মতে, আমার সঙ্গে ভারত সরকার, ইসরায়েলের মোসাদ এবং জাতিসংঘের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। তাকে যেন আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিই। আওয়ামী লীগ, বিএনপি কিংবা যে কোনো দল থেকে যেন নমিনেশন পাইয়ে দেওয়া হয়। হিরো আলম আমাকে বলেছে, দাদা আপনিই শেষ ভরসা। তবে আমি তাকে নমিনেশন দেওয়ার নিশ্চয়তার বিষয়ে কিছু বলিনি। আমি কেবল তাকে শুভকামনা জানিয়েছি।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে হিরো আলম কালবেলাকে বলেন, শিপন কুমারের সঙ্গে আমার একবার কথা হয়েছে। তাকে আমি ভালো করে চিনি না। আমার অফিসে একজন লোক এসেছিলেন। ওই লোককেও আমি ভালো করে চিনি না। তিনি এসে বললেন শিপন কুমারের সঙ্গে কথা বলার জন্য। পরে আমি কথা বলি। বিভিন্ন কথার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি জানতে চেয়েছেন আমার পরবর্তী ইচ্ছা কী। আমি বলেছি, আমার একটাই ইচ্ছা—সেটি হচ্ছে এমপি হওয়া। শুধু এতটুকুই বলেছি। শিপন কুমারকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, না না, এমন কিছু বলিনি। এটা তিনি এক লাইন বাড়িয়ে বলেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *