এবার বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে ইইউর উদ্বেগ, পার্লামেন্টে প্রস্তাব পাস

এবার বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে উত্থাপিত একটি প্রস্তাব পাস করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্টে। বাংলাদেশ ছাড়া আজারবাইজান এবং গুয়াতেমালার বিরুদ্ধেও একই ধরনের প্রস্তাব পাস করে ইইউ পার্লামেন্টে।

বুধবার স্থানীয় সময় (১৩ সেপ্টেম্বর) ইইউর ওয়েবসাইট থেকে এ তথ্য জানা যায় এর আগে ফ্রান্সের স্ত্রাসবুর্গে প্রস্তাবটি নিয়ে পার্লামেন্ট অধিবেশনের বিতর্কে ছয় সদস্য অংশ নেন।

যৌথ প্রস্তাবে নাগরিক অধিকার চর্চার বিষয়ে আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুসরণে দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে ইইউ পার্লামেন্ট সদস্যরা বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে সরকারের প্রতি এনজিও, মানবাধিকার সংস্থা এবং কর্মী, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন। এতে বলা হয়, বাংলাদেশকে অবশ্যই তাদের আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার, বিশেষ করে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলো মেনে চলতে হবে। সুশীল সমাজের সংগঠনগুলো যেন বিদেশি অনুদান গ্রহণ করতে পারে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই তা নিশ্চিত করতে হবে।

  • হারুন-সানজিদা বিয়ে করেছেন কিনা জানালেন সানজিদার বোন
  • বিবৃতিতে বিশেষভাবে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর দুই নেতা আদিলুর রহমান খান এবং এ এস এম নাসিরুদ্দিন এলানের বিরুদ্ধে কারাদণ্ডের রায়ের নিন্দা জানানো হয়েছে। পাশাপাশি অবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা।

    বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের জন্য ‘এভরিথিং বাট আর্মস’ (ইবিএ) সুবিধা আরও বর্ধিত করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এমন অবস্থায় ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা বলেন, অধিকারের সঙ্গে হওয়া এ বিষয়টি দুঃখজনকভাবে একটি পশ্চাদগামী পদক্ষেপ। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ইবিএ সুবিধা অব্যাহত রাখা উচিত কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ইইউ পার্লামেন্ট সদস্যরা।

    আর আগে বৃহস্পতিবার মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর দুই নেতা আদিলুর রহমান খান এবং এ এস এম নাসিরুদ্দিন এলানের বিরুদ্ধে কারাদণ্ডের রায়ের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

    যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিবৃতিতে বলে-যুক্তরাষ্ট্র মানুষের অধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার প্রচার ও সুরক্ষায় মানবাধিকারকর্মী এবং সুশীল সমাজ সংগঠনগুলোর কার্যক্রমকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে। আমাদের ‘২০২২ কান্ট্রি রিপোর্ট অন হিউম্যান রাইটস ইন বাংলাদেশ’ প্রতিবেদনে ‘অনলাইন এবং অফলাইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা’ এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো ‘বিশেষ সরকারি বিধিনিষেধের সাথে পরিচালিত’ হওয়ার কথা তুলে ধরা হয়েছে। এ অবস্থায় ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস মানবাধিকার সংগঠন অধিকার’-এর সম্পাদক আদিলুর রহমান খান এবং পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানের বিরুদ্ধে আজকের রায়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং মনে করছে এটি মানবাধিকারকর্মী এবং সুশীল সমাজের গুরুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক ভূমিকা পালনের সদিচ্ছাকে আরও দুর্বল করে দিতে পারে।

    বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যেই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, অধিকার কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছে এবং প্রতিবেদন তৈরি করেছে। গণতন্ত্রের অপরিহার্য অংশ হিসেবে আমরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং প্রাণবন্ত নাগরিক সমাজকে অব্যাহতভাবে সমর্থন করি এবং মৌলিক অধিকার নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টার বিরোধিতা করি।

    এই ঘটনায় এর আগে বিবৃতি দিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক অফিসের সামাজিকমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রতিক্রিয়ায় এ তথ্য জানিয়েছে।

    প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়েছে, এক দশকের পর রাষ্ট্র কর্তৃক অভিযোগ ও নিপীড়নের মুখোমুখি হওয়ার পর আজ ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনাল মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের নেতা আদিলুর রহমান খান এবং এ এস এম নাসিরুদ্দিন এলানকে কড়া আইসিটি আইনে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে।

    অধিকার ২০১৩ সালে প্রতিবাদের প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্র কর্তৃক পরিচালিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের নথিভুক্ত একটি তথ্য-অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করার পরে মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল। অধিকার এবং এর নেতাদের ওপর রাষ্ট্রের নিরলস দমন ক্ষমতার কাছে সত্য বলার অধিকারের ওপর একটি আক্রমণ।

    মানবাধিকার লঙ্ঘনের নথিভুক্ত করা কোনো অপরাধ নয়। আমরা বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে এবং নিঃশর্তভাবে খান ও এলানকে মুক্তি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।

    এর আগে বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত এ রায় ঘোষণা করেন।

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *