এবার চূড়ান্ত আন্দোলনে নামছে বিএনপি ও যুগপতের শরিকরা।

সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবি আদায়ে এবার চূড়ান্ত আন্দোলনে নামতে যাচ্ছে বিএনপি ও যুগপতের শরিকরা, যা দুই ধাপে অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত প্রথম ধাপের আন্দোলন চলবে। এরই মধ্যে আন্দোলনের এ ধাপের কর্মসূচি প্রণয়ন করেছে বিএনপি। এর মধ্যে থাকছে সমাবেশ ও রোডমার্চ। এ ছাড়া এ সময় ঢাকায় ছাত্র ও শ্রমিক কনভেনশনও রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটি, সাংগঠনিক সম্পাদক ও অঙ্গ-সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের যৌথ বৈঠকে চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রথম ধাপের এ কর্মসূচি তৈরি করা হয়েছে। গণতন্ত্র মঞ্চসহ যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে শিগগির তা চূড়ান্ত করা হবে। চূড়ান্ত করা এ কর্মসূচি আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করা হবে।

বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, আগামী ৩ অক্টোবরের পর আন্দোলনের দ্বিতীয় তথা চূড়ান্ত ধাপ শুরু হবে, যা মধ্য অক্টোবর কিংবা অক্টোবর জুড়ে

চলতে পারে। আন্দোলনের এই ধাপের কর্মসূচি হবে ঢাকাকেন্দ্রিক। এ সময়ে ঢাকায় ঘেরাওসহ টানা অবস্থানের কর্মসূচি দিতে পারে বিএনপি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগেই এ আন্দোলনের মাধ্যমে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে চায় দলটি। বিএনপির অনেকে মনে করেন, তপশিল ঘোষণা হয়ে গেলে নির্বাচন ঠেকানো কঠিন হয়ে যাবে। নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে আগামী জাতীয় নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করা হবে।

গত ১২ জুলাই থেকে একদফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে বিএনপি ও এর শরিকরা। ঢাকায় জুলাই মাসের শেষদিকে মহাসমাবেশ ও ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচির পর এখন অবধি গণমিছিল এবং সমাবেশের কর্মসূচিতেই রয়েছে তারা। তবে অক্টোবরের প্রথম থেকে লাগাতার আন্দোলনে যাওয়ার চিন্তায় কর্মসূচি প্রণয়নে দফায় দফায় বৈঠক করছে বিএনপি।

একদফা আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার পতনের ‘একদফা’ দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করা হবে।

এদিকে একদফা দাবির আন্দোলনের অংশ হিসেবে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে যৌথভাবে দুটি ‘তারুণ্যের রোডমার্চ’ করবে বিএনপির তিন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। আজ শনিবার রংপুর থেকে দিনাজপুর এবং আগামীকাল রোববার বগুড়া থেকে রাজশাহী এ রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে। শনিবার সকাল ১০টায় রংপুরে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে এ কর্মসূচি শুরু হবে। প্রায় ৯০ কিলোমিটারব্যাপী এ রোডমার্চ সৈয়দপুর-দশমাইল হয়ে দিনাজপুরে গিয়ে শেষ হবে। এ ছাড়া, আগামীকাল রোববার সকাল ৯টায় বগুড়া চার রাস্তার মোড় থেকে দ্বিতীয় রোডমার্চ শুরু হবে। প্রায় ১২৯ কিলোমিটারব্যাপী ওই রোডমার্চ সান্তাহার-নওগাঁ হয়ে রাজশাহী গিয়ে শেষ হবে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি হিসেবে দুটি রোডমার্চেরই উদ্বোধন করবেন।

জানা যায়, একদফার আন্দোলনের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণে গত মঙ্গলবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত নিয়ে সমাবেশ ও রোডমার্চের কর্মসূচির একটি প্যাকেজ প্রস্তাবাকারে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে পাঠিয়েছিলেন। এরপর গত বৃহস্পতিবার সেই প্রস্তাব নিয়ে স্থায়ী কমিটি, সাংগঠনিক সম্পাদক ও অঙ্গ-সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেন তারেক রহমান। সেখানে আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত একদফা আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়।

ওই বৈঠক থাকা একজন নেতা জানান, আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকাসহ ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে সমাবেশ ও রোডমার্চের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। তবে অন্য একটি সূত্র বলছে, বৃহত্তর ১৯ জেলায় সমাবেশ হতে পারে। এমনকি এই জেলার সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এ ছাড়া, ঢাকার বাইরে জেলা পর্যায়ে রোডমার্চ কর্মসূচিও আসতে পারে। ওই সূত্রটি আরও বলছে, ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে তারুণ্যের রোডমার্চ হবে। অন্য আরও তিন বিভাগে এ রোডমার্চ করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। দুই বা পাঁচ বিভাগ যেটাই হোক, সে ক্ষেত্রে অন্য বিভাগগুলোতে বিএনপির ব্যানারে রোডমার্চ করার প্রস্তাব আছে। তবে এ ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

একদফা আন্দোলনের শরিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রথম ধাপে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ঢাকায় শ্রমিক ও ছাত্র কনভেনশন হতে পারে। মূলত আন্দোলনে সমাজের সব স্তরের লোকদের অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করার জন্য এ দুটি কনভেনশন করার চিন্তা করা হচ্ছে। শ্রমিক কনভেনশনটি ২৯ বা ৩০ সেপ্টেম্বর আর ছাত্র কনভেনশনটি ২৪ কিংবা ২৫ সেপ্টেম্বর করার চিন্তা আছে। যুগপতের শরিক দলগুলোর ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনের সমন্বয়ে এই কনভেনশন ডাকা হবে। এ ছাড়া, ঢাকায় প্রথমে ধাপের আন্দোলনে পদযাত্রা, গণমিছিলের মতো কর্মসূচির ঘোষণাও দেওয়া হতে পারে।

জানতে চাইলে গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক কালবেলাকে বলেন, ‘আশা করছি, বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে আমাদের বৈঠকটি আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর হবে। সেখানে একদফা আন্দোলনের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হবে। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির সঙ্গে আমাদের প্রতিনিয়ত মতবিনিময় হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আন্দোলনের যতগুলো ফর্ম রয়েছে, সেগুলো আমাদের বিবেচনায় আছে। প্রয়োজন হলে সবগুলোই আমরা নেব। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বাধ্য করব আমাদের একদফা দাবি মেনে নিতে। তবে এটি ঠিক, সরকারের আচরণই নির্ধারণ করবে, আন্দোলনের ধরন কেমন হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *