অনেক ছোট থাকতে এটিকে এনেছিলাম। আমিই বড় করেছি। ও আমার অনেক আদরের। আমাদের ওখানে এখন বিমান হামলা চলছে। ওকে রেখে আসব কী করে!’
গাজার খান ইউনুসের আশ্রয় শিবিরে খুব মনোযোগ দিয়ে পোষা পাখিটিকে খাওয়াচ্ছিল বছর তেরোর আজমি দিয়াব। আর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ক্যামেরার সামনে বলছিল কথাগুলো।
গাজায় এখন ইসরায়েলের বিমান হামলা চলছে। বোমা বিস্ফোরণে মাঝে মাঝেই কেঁপে উঠছে পুরো এলাকা। এরই মধ্যে স্থল অভিযানের ঘোষণা দিয়ে উত্তর গাজার ১১ লাখ বাসিন্দাকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল।
আজমি দিয়াবের পরিবারসহ শত শত পরিবার এখন খান ইউনুসের বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে খোলা আকাশের নিচে দিন যাপন করছে। জাতিসংঘ বলছে, গাজার মানুষদের আশ্রয় দেওয়ার মতো যথেষ্ট স্থান ও ব্যবস্থা নেই। জাতিসংঘের আশ্রয় কেন্দ্রগুলোর ধারণক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। খাবার ও পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
দিয়েছে।
আশ্রয় শিবিরে পোষা পাখিটিকেও এনেছে ফিলিস্তিনি শিশু দিয়াব। ছবি: রয়টার্স
খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নেওয়া বহু পরিবারের মধ্যে দিয়াবের পরিবার একটি। তার মতোই অনেক শিশুকেও এই অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যেতে হচ্ছে।
এমন সংকট সময়ে দিয়াবের অন্তত একটা অবলম্বন হয়েছে—পোষা পাখিটি। এর সঙ্গেই সময় কাটছে তার।
দিয়াব রয়টার্সের প্রতিবেদককে বলে, ‘এটি যখন অনেক ছোট, তখন আমি এনেছিলাম। এটাকে আমি বড় করেছি। ওদিকে বিমান হামলা চলছে। রেখে এলে সেও মারা যাবে, তাই নিয়ে এসেছি। এটা আমার অনেক আদরের। এটাকে ছোট থেকে আমি বড় করেছি, সব সময় আমার সাথেই থাকে।’
ছোট্ট দিয়াব তার পোষা পাখিটির জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। সে বলে, ‘বোমাবর্ষণ তো মানুষ আর প্রাণী আলাদা করতে পারে না। কিন্তু ওদেরও তো প্রাণ আছে!’
আশ্রয় শিবিরে পোষা পাখিটিকেও এনেছে ফিলিস্তিনি শিশু দিয়াব। ছবি: রয়টার্স
দিয়াবের পাখিটির মতোই, গাজার লাখ লাখ মানুষ এখন জীবন সংশয়ে রয়েছে। হামাসকে শায়েস্তা করার নামে নির্বিচারে বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এর মধ্যে স্থল অভিযানের ঘোষণা দিয়ে বাসিন্দাদের এলাকা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
যে যা পারছে, তাই নিয়ে আশ্রয় খুঁজছে গাজার মানুষ। ইসরায়েলি হামলার মুখে বাস্তুচ্যুত এই ফিলিস্তিনিদের স্থানীয় স্কুল ও অন্যান্য অবকাঠামোতে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছে জাতিসংঘ। বাড়িঘর ছেড়ে আসা মানুষজন সেখানেই মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। প্রতিদিনই বাড়ছে শরণার্থীর সংখ্যা।
আজমি দিয়াব বলে, ‘পরিস্থিতি আসলেই অনেক কঠিন। আমরা পড়ালেখা ছেড়েছি, সব জিনিসপত্র ফেলে এসেছি। আমি জানি না, আমার বন্ধুরা কোথায় আছে—তারা কি বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে! জীবন অনেক কঠিন। কোনো বিদ্যুৎ নেই, ইন্টারনেট নেই, কারও সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না। আমাদের বাড়ি থেকে চলে আসতে বাধ্য করা হয়েছে। রকেটের শব্দে আমি খুবই ভয় পেয়েছিলাম, খুবই শক্তিশালী ছিল সেগুলো।’
ছোট্ট এই আশ্রয়কেন্দ্রের এখানে সেখানে পোষা পাখিটিকে সঙ্গে নিয়েই ঘুরছে দিয়াব। প্রিয় পাখির সঙ্গ তাকে হয়তো অনেকখানি মানসিক শান্তি দিচ্ছে। কিন্তু এই পরিস্থিতি থেকে কবে নাগাদ মুক্তি মিলবে—তা জানে না কেউ।