ইসরাইল যদি আগাম সতর্কতা ঘোষণা না করে গাজা উপত্যকায় বোমা হামলা চালায়,
তবে তারা যুদ্ধবন্দিদের হত্যা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস।
সোমবার (১০ অক্টোবর) রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য দেওয়া হয়।
হামাসের সশস্ত্র শাখা ইজেদ্দিন আল-কাসাম বিগ্রেডের এক বিবৃতির উদ্ধৃতি দিয়ে এএফপি জানায়, ‘হুঁশিয়ারি না দিয়ে আমাদের জনগণের ওপর প্রতিবার টার্গেট করা হয়ে প্রতিবার একজন করে বেসামরিক যুদ্ধবন্দিকে হত্যা করা হবে।
তিনি বলেন, ‘শত্রু মানবতার ভাষা, নীতি-নৈতিকতা বোঝে না। ফলে আমরা তারা যে ভাষা বোঝে, সে ভাষাতেই কথা বলব।’
হামাস এবং গাজাভিত্তিক আরেক সংগঠন ইসলামিক জিহাদ প্রায় ১৩০ ব্যক্তিকে ইসরাইল থেকে ধরে আনার দাবি করেছে। তারা দাবি করছে, এরা পণবন্দি নয়, বরং যুদ্ধবন্দি। এদের মধ্যে সৈন্য, বেসামরিক নারী, পুরুষ ও প্রবীণ ব্যক্তি রয়েছে।
এদিকে ইসরাইল অব্যাহতভাবে গাজায় বোমা ও গোলাবর্ষণ করে যাচ্ছে। তারা ইতোমধ্যেই গাজাকে পুরোপুরি অবরুদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। গাজায় কোনো ধরনের খাবার, বিদ্যুৎ, পানি সরবরাহ না করার কথা ঘোষণা দিয়েছে।
ইসরাইল জানিয়েছে যে তারা গাজায় হামাসের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাচ্ছে, তবে ওই হামলায় বেসামরিক মানুষ হতাহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজার দুটি শরণার্থী শিবির- আল-শাতি (বিচ ক্যাম্প নামেও পরিচিত) এবং জাবালিয়া ক্যাম্পে- ইসরাইল বিমান হামলা চালিয়েছে, এতে বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
জাবালিয়া থেকে অনলাইনে শেয়ার হওয়া এক ভিডিওতে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা হতে দেখা যায়, যার মধ্যে একজন ব্যক্তির লাশ নিয়ে যেতে দেখা যায় যা রক্ত ও ধুলোয় ঢেকে ছিল।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে গাজায় জাতিসংঘের একটি স্কুলে বিমান হামলা চালানো হয়েছে যেখানে শিশু ও বৃদ্ধসহ শত শত বেসামরিক মানুষ অবস্থান করছিল।
জাতিসংঘ হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছে, স্কুলটি ‘মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে’, কিন্তু এতে কেউ নিহত হয়নি।
একটি মসজিদের পাশাপাশি বাড়িঘরও হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের সংগঠন হামাসের হামলার পর উত্তপ্ত ইসরায়েল। পাল্টাপাল্টি হামলা চালাচ্ছে দুপক্ষই। এসব হামলায় নিহতের সংখ্যাও বাড়ছে হু হু করে। এই যুদ্ধে এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ১৫০০ ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে আল জাজিরা। আহত হয়েছেন ৬ হাজারেরও বেশি মানুষ।
খবরে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও ইসরাইলি স্বাস্থ্যসেবা কর্তৃপক্ষ সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
তথ্য অনুসারে, নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে গাজায় ৬৮৭ জন ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে ১৭ জন, ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন ৮০০ জন। এ নিয়ে মোট নিহতের সংখ্যা দাড়িয়েছে অন্তত ১৫০৪ জনে। আহতদের মধ্যে গাজায় অন্তত ৩ হাজার ৮০০ জন এবং পশ্চিমতীরে ৯০ জন। এ ছাড়া ইসরায়েলি আহত হয়েছে ২ হাজার ২৪৩ জন।
শনিবার হঠাৎ করেই বিপুলসংখ্যক রকেট হামলা চালানোর পর বেড়া ভেঙে ইসরাইলে ঢুকে পড়ে গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের যোদ্ধারা।
স্বাধীনতাপন্থি এ গোষ্ঠীটি ইসরায়েলের ভেতরে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের আক্রমণে নিহত ইসরায়েলিদের মধ্যে ৭৩ জন সেনা সদস্য রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
এদিকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে নতুন অস্ত্র ব্যবহার শুরু করেছে ফিলিস্তিনি গ্রুপ আল কাসেম ব্রিগেড। সোমবার গাজা থেকে এ তথ্য জানিয়েছেন আলজাজিরার প্রতিনিধি জামিলেহ আবু জানুনা।
ওই গ্রুপের এক বিবৃতি সূত্রে আল জাজিরার ওই প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তারা গাজায়ই ওই অস্ত্রগুলো তৈরি করেছে। এখন ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে সেগুলো ব্যবহার করছে। নতুন এ অস্ত্র হলো কাঁধে বহনকারী এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম।