ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার হুমকি এরদোয়ানের

ভূরাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয় ও রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের জেরে বেশ কয়েক বছর ধরেই আমেরিকা ও ইউরোপের সঙ্গে সময়টা ভালো যাচ্ছে না তুরস্কের। এক সময়কার ইউরোপের রুগ্ণ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত তুরস্ক এখন অঞ্চলটির বেশ প্রভাবশালী রাষ্ট্র। তাই কারো চোখে চোখ রেখে কথা বলতে দ্বিধা করেন না দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।

সম্প্রতি ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে তুরস্কবিষয়ক একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। সেখানে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তুরস্কের সমালোচনা করা হয়েছে। এ ছাড়া ইউরোপীয় মূল্যবোধ থেকে ক্রমেই দূরে সরছে বলেও উল্লেখ করা হয় সেই প্রতিবেদনে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় জোটটির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার হুমকি দেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান।

স্থানীয় সময় শনিবার জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে যাত্রার আগে রাজধানী আঙ্কারায় তুর্কি প্রেসিডেন্ট জানান, প্রয়োজন হলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করতে প্রস্তুত আছে তুরস্ক। এমনকি পরিস্থিতি বিবেচনা করে জোটের সদস্যপদের আবেদনও প্রত্যাহার করতে পারে আঙ্কারা, এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন এরদোয়ান।

তিনি বলেন, আপনার যদি আমার কাছ থেকে পরিষ্কার মূল্যায়ন জানতে চান, তাহলে বলতে হয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমরা এই ধরনের পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করে নিজেদের মূল্যায়ন প্রকাশ করব। প্রয়োজনে আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়েনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারি।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়, তুরস্কের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশটিকে জোটের সদস্যপদ দেওয়া যৌক্তিক নয়। বিপরীতে আঙ্কারার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে একটি বাস্তবসম্মত ও সমান্তরাল কাঠামো প্রণয়নের প্রস্তাব দেয় ইউরোপীয় পার্লামেন্ট।

এর আগে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়া জানায়। মন্ত্রণালয় বলে, এই প্রতিবেদনে তুরস্কের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ইইউর সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক নিয়ে একটি অগভীর ও অদূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেয়েছে।

১৯৬৪ সালে সর্বপ্রথম তৎকালীন ইউরোপিয়ান ইকোনোমিক কমিউনিটির সদস্যপদের জন্য আলোচনা করে তুরস্ক। পরে ১৯৮৭ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদের আবেদন করে তুরস্ক। ১৯৯৯ সালে দেশটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সদস্যপ্রার্থী রাষ্ট্রের মর্যাদা দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত সেটি আর আলোর মুখ দেখেনি। এরদোয়ানের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে বেশ কয়েকবার তুরস্কের সদস্যপদ অনুমোদন নিয়ে আলোচনা উঠলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়ে ওঠেনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *