আলিয়া মাদ্রাসায় মধ্যরাতে ছাত্রলীগের সভাপতি–সেক্রেটারি গ্রুপে সংঘর্ষ, কমিটি বিলুপ্ত

রাজধানীর বকশীবাজারস্থ সরকারি মাদ্রাসা–ই–আলিয়াতে শাখা ছাত্রলীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মুরাদ হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম বরকতের অনুসারীরা মধ্যরাতে ককটেল বিস্ফোরণ, লাঠি, রামদা ও পিস্তল নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান।

বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ৩টার দিকে মাদ্রাসার আল্লামা কাশগড়ি (রহ) হলে এ ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের ৫০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ ঘটনার পর আলিয়া মাদ্রাসা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগ। মহানগর দক্ষিণ বিলুপ্ত করার আগে কমিটি স্থগিত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

এদিকে কোনো ধরনের নোটিশ না দিয়ে হল বন্ধ রেখেছে মাদ্রাসা প্রশাসন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মুরাদ হোসাইনের নেতৃত্বে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ–সভাপতি ও মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগে পদপ্রত্যাশী আজিমুদ্দিন আল আজাদ, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাইসুল আল নাঈম, বর্তমান কমিটির সহ–সভাপতি হাসান মাহমুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু জিহাদ, কর্মী মাসুম বিল্লাহ ও আল ইমরান রাজুসহ ৩০–৪০ জন দেশীয় অস্ত্রসহ দলবল নিয়ে রাত আড়াইটার দিকে কাশগড়ি হলে বরকত নিয়ন্ত্রিত কক্ষগুলোতে গিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। পরে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তবে মুরাদ হোসেনের গ্রুপের পূর্বপ্রস্তুতি থাকায় সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা বেশি মার খেয়েছে। ভোর ৪টার পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, মাদ্রাসার অধ্যক্ষও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তিনি সংঘর্ষ থামাতে ব্যর্থ হন। সিসিটিভি ক্যামেরাগুলোও ভেঙে দিয়েছে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা।

হলের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় আজকের পত্রিকার এ প্রতিবেদকের। তাঁরা জানান, হলে থাকলে ছাত্রলীগের মিছিল, প্রোগ্রামে থাকতে হয়। তাঁদের নিয়ম অনুযায়ী চলতে হয়। ওই রাতের ঘটনায় যারা আহত হয়েছেন তাঁদের বেশির ভাগই ছাত্রলীগের পদে নেই। তাঁরা ছাত্রলীগ নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় থাকে। ওই ঘটনার পর বিনা নোটিশে হল বন্ধ করে দিয়েছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।
সংঘর্ষে বেশি আহতদের মধ্যে রয়েছেন—কামিলের ছাত্র আবুল হাসান সাবেরী, অনার্স চতুর্থ বর্ষের মোহাম্মদ হোসাইন, ফাজিল তৃতীয় বর্ষের তোহা ইমাম, ফাজিল দ্বিতীয় বর্ষের আবু বকর ও মো. শোয়াইব, ফাজিল প্রথম বর্ষের ছাত্র মাহবুব হোসেন, সালমান ফারসি ও তাওহীদ। তাঁরা বরকতের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

সংঘর্ষে আহত হয়েছেন কামিল শ্রেণির রমজান আলী। তিনি বলেন, ‘মুরাদ ভাই পিস্তল নিয়ে পুরো হলে তাণ্ডব চালায়। তার সঙ্গে বহিরাগত অনেকে ছিল। ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আমাকে রুমে এসে সভাপতির অনুসারীরা মারধর করে। পুরো হলে সভাপতির অনুসারীরা তাণ্ডব চালায়। পরে পুলিশ এসে নিয়ন্ত্রণ করে।’

মাদ্রাসা শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম বরকত বলেন, ‘মুরাদ হোসাইনের নেতৃত্বে বহিরাগতদের সঙ্গে নিয়ে আধিপত্য বিস্তার করতে এ হামলা করা হয়েছে। তার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে শিক্ষার্থীরা তার ওপর ক্ষুব্ধ। দীর্ঘদিনের ক্ষোভ মেটাতে ও আধিপত্য বিস্তার করতেই ঘুমন্ত শিক্ষার্থীদের ওপর এ হামলা করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মুরাদ হোসাইন বলেন, ‘রাতে সামান্য ঝামেলা হয়েছে, পুলিশ আসলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।’

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুর রশীদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মিটিং করে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, আপাতত কিছু বলছি না।’

সার্বিক বিষয়ে ডিএমপির চকবাজার জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার জায়েন উদ্দীন মুহাম্মদ যিয়াদ বলেন, ‘রাতে আলিয়া মাদ্রাসার হলে ঝামেলা হয়েছিল, পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।’

এদিকে এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ‘শৃঙ্খলা পরিপন্থী ও সংগঠনের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয় এমন কাজে জড়িত’ অভিযোগে মাদ্রাসা–ই–আলিয়া ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এরপর রাত ৮টার দিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি রাজিবুল ইসলাম বাপ্পি ও সাধারণ সম্পাদক সজল কুণ্ডু স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।

গত ২০ জুলাই মুরাদ হোসাইনকে সভাপতি ও রাকিবুল ইসলাম বরকতকে সাধারণ সম্পাদক করে আলিয়া মাদ্রাসা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *