আমি কইছলাম স্যার হেয় বাঁচত না, এর পরও পুলিশ মামলা নিল না

এমন মাইরও মানুষরে মানুষ মারে না। মারতে মারতে মাডিত ফাইলায়া মারছে। এরপর অচেতন অইলে কয় মইর‌্যা গেছে। পরে তুইল্যা নিয়া হাসপাতালে ভর্তি করাই।

থানায় দরখাস্ত দেওয়ার সময় কইছলাম, স্যার হেয় বাঁচত না, এর পরও পুলিশ মামলা নিল না। আমারে কয় আগে চিকিৎসা, পরে মীমাংসা অইতাম। অহন তো মইর‌্যাই গেছে। আমার মতো গরিবের কথা কেউ হুনল না।

প্রতিবেশীদের মারধরে জরায়ু ফেটে ব্যাপক রক্তক্ষরণে গুরুতর আহত হওয়ার ১৭ দিন পর একরকম বিনা চিকিৎসায় আজ মঙ্গলবার বিকেলে মারা যান লাল মিয়ার স্ত্রী মোছাম্মৎ শরিফা আক্তার। এ অবস্থায় স্ত্রীর লাশের পাশে বসে আহাজারি করে স্বামী লাল মিয়া ওপরের কথাগুলো বলেন। এমন ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার নান্দাইল সদর ইউনিয়নের ভাটি সাভার গ্রামে।

স্থানীয় সূত্র ও থানায় দেওয়া লিখিত অভিযোগে জানা যায়, ওই গ্রামের দিনমজুর লাল মিয়া ফকিরের (৫০) সাথে প্রতিবেশী জালাল উদ্দিন (৪৫), শফিকুল ইসলাম (২৫), সালাম মিয়া (৪৫), সোহেল মিয়াসহ (২৭) আরো কয়েকজনের বাড়ির সীমানা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল।

এ নিয়ে সালিসে ঘটনা মীমাংসা হলেও মানেনি জালাল উদ্দিনের লোকজন। এ অবস্থায় তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে প্রায়ই মারামারির ঘটনা ঘটত।
লাল মিয়া জানান, গত ১ সেপ্টেম্বর রাতে জালালের উঠানে কিছু পানি জমাসহ মাছের কাঁটা পড়ে থাকে। তা দেখে জালাল উদ্দিন ক্ষুব্ধ হয়ে তার স্ত্রী মোছাম্মৎ শরিফা আক্তারকে (৪৫) দোষারপ করে গালাগাল শুরু করেন। এক পর্যায়ে স্ত্রী শরিফা এগিয়ে গিয়ে প্রতিবাদ করলে শরিফার চুলের মুঠি ধরে জালাল কিলঘুষি দিতে দিতে টেনেহিঁচড়ে কিছু দূরে নিয়ে যান।

পরে তার লোকজন মিলে শরিফার তলপেটে লাথি ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লাঠি দিয়ে আঘাত করলে অচেতন হয়ে যান তিনি।
তিনি আরো জানান, পরে ব্যাপক রক্তক্ষরণ হতে থাকলে শরিফাকে উদ্ধার করে নান্দাইল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে দুই দিন চিকিৎসা শেষে অবস্থার অবনতি হলে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ঘটনার পরদিনই তিনি বাদী হয়ে আটজনকে অভিযুক্ত করে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ তদন্তে গেলেও মামলা নেয়নি। এদিকে রক্তশূন্যতায় শরিফার অবস্থা খারাপের দিকে চলে যায়। এ অবস্থায় ১৩ দিন চিকিৎসা শেষে শরিফাকে বাড়িতে নিয়ে এলেও অবস্থার উন্নতি হয়নি।

আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে শরিফা আক্তারের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকলে তাকে ফের নান্দাইল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক জরুরি দুই ব্যাগ রক্ত দিতে বলেন। রক্তের ব্যবস্থা করা অবস্থায় বিকেলে তিনি মারা যান।

লাল মিয়ার অভিযোগ, পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে হয়তো তার স্ত্রী মানসিকভাবে অনেকটা ভালো থাকতেন। মামলা না নেওয়ায় অভিযুক্তদের ভয়ে তিনি ঠিকমতো স্ত্রীর চিকিৎসাও করাতে পারেননি।

এ বিষয়ে অভিযোগটির তদন্ত কর্মকর্তা নান্দাইল থানার উপপরিদর্শক মো. আব্দুল কাদের জানান, মারধরের ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে জড়িত নন এমন অনেককেই অভিযুক্ত করায় তাদের বাদ দিয়ে নতুন অভিযোগ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু বাদী নতুন অভিযোগ না দেওয়ায় মামলা নেওয়া যায়নি।

মীমাংসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় চেয়ারম্যান মীমাংসা করেছিলেন বলে শুনেছিলাম।’

তবে নান্দাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, ‘আমি কোনো মীমাংসা করিনি। দারোগা সাহেব ভুল তথ্য দিয়েছেন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *