‘লাব্বাইক ধ্বনিতে ‘মুখর’ আরাফাতের ময়দান!

মুসলিমদের পবিত্র হজের আরাফাতের ‘ময়দানে’ থাকার দিন আজ। সেলাইবিহীন সাদা কাপড়ে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সারাবিশ্ব থেকে সমবেত ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আজ সেখানে হাজির হয়েছেন। ‘পাপমুক্তি’ ও আত্মশুদ্ধির আকুল বাসনা নিয়ে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নিতে শুক্রবার আরাফাতের ‘ময়দানে’ সমবেত হয়েছেন তারা।

লাখো হাজির লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক ইন্নাল হামদা ওয়াননি মাতা লাকা ‘ওয়াল’ মুলক লা শারিকা লাক অর্থাৎ আমি হাজির হে আল্লাহ আমি হাজির তোমার কোনো ‘শরিক’ নেই সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই সব সাম্রাজ্যও তোমার-এই ধ্বনিতে মুখর হয়েছে উঠেছে আরাফাতের ময়দান। ‘অন্যান্য’ বছর ৯ জিলহজের দিনটিতে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হতেন আনুমানিক ২৫ লাখ হাজি।

তবে ‘করোনা’ মহামারির কারণে গত দুই বছর সীমিত পরিসরে হজ হয়েছে। গতবার ৬০ হাজার মানুষ হজ পালন করেছেন। এবার সেই ‘নিষেধাজ্ঞা’ তুলে নেওয়ায় ১০ লাখ হাজির পদচারণায় মুখর হয়েছে আরাফাতের ময়দান।
মিনায় ‘মুসল্লিদের’ জড়ো হওয়ার মধ্য দিয়ে পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ৮ জিলহজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও ‘বুধবার’ রাতেই হাজিরা মিনার তাঁবুতে পৌঁছে যান। হজযাত্রীর সংখ্যা বিবেচনায় সৌদি ‘মুয়াল্লিমরা’ আগের রাত থেকেই হজযাত্রীদের তাঁবুর শহর মিনায় নেওয়া শুরু করেন।

হজযাত্রীরা বুধবার এশার পর থেকে ‘মক্কার’ নিজ নিজ আবাসন থেকে ইহরাম বেঁধে মিনায় রওয়ানা হন। বৃহস্পতিবার সারাদিন মিনার তাঁবুতে ‘অবস্থান’ করেছেন হাজিরা। তাঁবুর এই শহর মুখরিত হয়ে উঠেছিল লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক ধ্বনিতে। সারা দিন ও রাত তারা মিনায় কাটান ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে। আল্লাহর নৈকট্য ‘লাভের’ আশায় মশগুল ছিলেন জিকির ও তালবিয়াতে। নামাজ আদায় করেন জামাতের সঙ্গে। ‘সৃষ্টিকর্তার’ কাছে হাজিরা দিয়ে আত্মশুদ্ধি, মাগফিরাত ও রহমত চাইতে আসা এই মুসলমানরা আজ জড়ো হন আরাফাতের ময়দানে।

আরাফাত’ ময়দানের তিন দিক পাহাড়বেষ্টিত। মাঝে দুই মাইল দৈর্ঘ্য ও দুই মাইল প্রস্থের এই সমতল ভূমি। ‘জাবাল’ মানে পাহাড়। জাবালে রহমত হলো রহমতের পাহাড়। হজরত মুহাম্মদ (সা.) জাবালে রহমত পাহাড়ের কাছে দাঁড়িয়ে বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। একে কেউ কেউ দোয়ার ‘পাহাড়ও’ বলে থাকে। বলা হয়ে থাকে এই পাহাড়ে হজরত আদম (আ.) ও হজরত ‘হাওয়ার’ (আ.) দেখা হয়েছিল। হজের তিনটি ফরজের মধ্যে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আরাফাতের ‘ময়দানে’ উপস্থিত না হলে হজ হবে না।

আরাফাতের ময়দানে খুতবার পর জোহর ও আসরের নামাজ আদায় ‘করবেন’ মুসল্লিরা। এ ছাড়া আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকবেন হাজিরা। সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতে অবস্থানের পর হাজিরা মুজদালিফায় গিয়ে ‘মাগরিব’ ও এশার নামাজ আদায় করবেন। রাতে সেখানে অবস্থান করবেন খোলা মাঠে। মিনার’ জামারায় শয়তানকে প্রতীকী পাথর মারবেন। মুজদালিফায় ফজরের নামাজ আদায় করে হাজিরা মিনায় ফিরবেন। মিনায় বড় শয়তানকে সাতটি পাথর মারার পর পশু কোরবানি দিয়ে ‘মাথার’ চুল ছেঁটে (ন্যাড়া করে) গোসল করবেন। সেলাইবিহীন দুই টুকরা কাপড় বদল করবেন।

এরপর ‘স্বাভাবিক’ পোশাক পরে মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে পবিত্র কাবা শরিফ সাতবার তাওয়াফ করবেন। কাবার সামনের দুই পাহাড় সাফা ও ‘মারওয়ায়’ সাঈ (সাতবার দৌড়ানো) করবেন। সেখান থেকে তাঁরা আবার মিনায় যাবেন। মিনায় যত দিন ‘থাকবেন’ তত দিন তিনটি (বড় মধ্যম ছোট) শয়তানকে ২১টি পাথর নিক্ষেপ করবেন। আবার মক্কায় বিদায়ি ‘তাওয়াফ’ করার পর নিজ নিজ দেশে ফিরবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *