ছেলের মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ মা, বলা হয়নি স্বামীও চলে গেছেন

বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে তেলবাহী ট্যাংকারে ইঞ্জিন রুমে বিস্ফোরণের ঘটনায় সীতাকুণ্ডের মো. ফারদিন আরাফাত স্বাধীন (২২) নিহত হওয়ার চার দিনের মাথায় তার পিতা জাহাজের চিফ ড্রাইভার মো. কুতুব উদ্দিন ভাসানীও (৬৫) মারা গেছেন। রবিবার (১৫ মে) রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিট আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

জানা যায়, গত ১১ মে বিকালে যশোরের কীর্তনখোলা নদীতে নোঙর করা অবস্থায় হঠাৎ ওই জাহাজের তেলের ট্যাংকারে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে যায়। এতে ঘটনাস্থলে সীতাকুণ্ডের কুমিরা ইউনিয়নের নিউ রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা কতুব উদ্দিনের ছেলে স্বাধীনসহ সাতজন নিহত হন। এছাড়া গুরুতর আহতদের তালিকায় ছিলেন তার বাবা কতুব উদ্দিনসহ আরো অনেকে। কুতুব উদ্দিন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের নিউ রাজাপুর গ্রামের মৃত ছালে আহমদের পুত্র।

বাবা-ছেলে্র এক সাথে মৃত্যুর ঘটনায় সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে। নিহত স্বাধীনের তিন বোন ও মা আছে। বোনেরা বিবাহিত। তাই শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। ফলে এ ঘটনার পর তাদের বৃদ্ধা মা একা হয়ে গেলেন। তবে লাশ এখনো পোস্টমর্টেমে থাকায় বাড়িতে আনা যায়নি।

স্বাধীনের নিকটাত্মীয়রা জানান, চার দিন আগে ছেলে স্বাধীনকে হারিয়ে এখনো বাকরুদ্ধ হয়ে আছেন মা। এবার মারা গেলেন তার স্বামীও। কিন্তু এত শোক তিনি সইতে পারবেন কিনা এ ভয়ে কেউ তাকে এখনো (সোমবার বিকাল পর্যন্ত) স্বামীর মৃত্যুর খবর দেননি। তবে বাড়িতে একের পর এক আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা আসতে থাকায় তিনি বার বার জানতে চাইছেন এখানে এত মানুষ কেন?

স্বাধীনের মামা নিয়াজ মোরশেদ জানান, বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রথম দিন আমার ভাগিনা নিহত হয়। একমাত্র পুত্রকে হারিয়ে আমার বোন বাকরুদ্ধ। তারমধ্যে ভগ্নিপতি মারা যায় গতরাতে। এখনো আমার বোন জানেন না যে তার স্বামী মারা গেছে। কি বলে স্বান্তনা দেবো বোনকে, ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।

কুমিরা এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান মোর্শেদ হোসেন চৌধুরী বলেন, মাত্র চার দিনের মধ্যে বাপ-ছেলের মৃত্যুতে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আর পরিবারটিতে বৃদ্ধ মা ছাড়া আর কেউ রইল না। ছেলে স্বাধীনের লাশ পরদিন দাফন হয়। কিন্তু এখনো কুতুবউদ্দিনের লাশ বাড়িতে আসেনি। আমরা তাদেরকে স্বান্তনা দেবার কোনো ভাষা পাচ্ছি না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *