বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানকে ঘিরে আবারও সক্রিয় হচ্ছেন নেতাকর্মীরা। দলটির ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ঘিরে এমন গুঞ্জন জোরেশোরেই। দীর্ঘদিন ধরেই চট্টগ্রাম বিএনপির বেশকিছু নেতাকর্মীকে সক্রিয়ভাবে দলীয় কোনো কর্মকাণ্ডে দেখা যায়নি। দলীয় বড় কোনো সমাবেশেও তাদের দেখা মিলছে দায়সারাভাবে। কিন্তু গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রামে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে মাঠ গরম করেছে নোমান সমর্থকরা। সেখানে চট্টগ্রাম বিএনপির এই বর্ষীয়ান নেতাকে প্রধান অতিথি করায় তৃণমূল থেকে সমাবেশস্থল—সবখানেই চোখে পড়েছে এমন দৃশ্য।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে চট্টগ্রামের রাজনীতিতে আলোচনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) আব্দুল্লাহ আল নোমান। দীর্ঘ সময় মাঠে না থাকলেও সরকার পতনের ‘একদফা’ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হতে দেখা যায় তাকে। বিএনপিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে দীর্ঘসময় রাজনীতির মাঠের বাইরে অনেকটা নির্বিকার ছিলেন তিনি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ছাড়া আরেক বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ ও আব্দুল্লাহ আল নোমানকে একত্রে কোনো সমাবেশে উপস্থিত হতে দেখা যায়নি। সবশেষ দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন নোমান। যদিও সে অনুষ্ঠানে ছিলেন না সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ। তিনি কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে তখন ঢাকায় ছিলেন। নগরীর বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ড পর্যায়ে ঘুরে জানা যায়, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ভালো অবস্থান এই দুই প্রবীণ নেতার।
নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেমও দীর্ঘদিন ধরে মাঠে কাজ করলেও কমিটি গঠনসহ নানা কারণে বিতর্ক তাদের পিছু ছাড়ছে না। গতকাল শুক্রবার প্রতিষ্ঠারবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া বেশিরভাগ নেতার হাতে আব্দুল্লাহ আল নোমানের ছবি সংবলিত ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড, বিভিন্ন ধরনের ব্যানার ছাড়াও তাদের পরনে টুপি ও গেঞ্জি দেখা যায়। ওয়ার্ড ও উপজেলা পর্যায় থেকে আসা নেতাদের ব্যানারে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এবং চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পাশাপাশি ছিল নোমানের ছবি।
দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, চলতি বছর সরকার পতনের দাবিতে শুরু হওয়া সব ধরনের কর্মসূচি ও দলীয় সভায় অংশ নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল নোমান। এর আগে অসুস্থতাসহ নানা কারণে নিষ্ক্রিয় ছিলেন তিনি। এ ছাড়াও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনেক কর্মসূচিতে তাকে প্রধান অতিথি করা হয় এবং সব কর্মসূচিতে তার অংশগ্রহণে চট্টগ্রাম বিএনপির রাজনীতিতে কোন্দল কিছুটা কমতে শুরু করেছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতাদের একজন আব্দুল্লাহ আল নোমান। শুরুতে বাম রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও জিয়াউর রহমানের হাত ধরে নাম লেখান বিএনপির রাজনীতিতে। ছিলেন সংসদ সদস্য, একাধিকবার পালন করেছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও। বর্তমানে তিনি দলটির ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। এক সময় মহানগর উত্তর-দক্ষিণ প্রায় সব জায়গায় তার নেতৃত্ব ছিল। কেন্দ্রীয়ভাবে শ্রমিক দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে বেশ কিছুদিন ধরে চট্টগ্রামে বিএনপির আরেক নেতা ডা. শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে কোন্দলে রাজনীতির মাঠে অনেকটা নিষ্ক্রিয় ছিলেন তিনি।
একাধিক দলীয় নেতাকর্মী জানান, নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত ওয়ার্ড এবং ইউনিট পর্যায়ে কমিটি ঘোষণা না করায় স্থানীয়ভাবে দলীয় কার্যক্রম সমন্বয়হীনভাবে চলছিল। অভিযোগ আছে, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীমের ইন্ধনে রাজনীতির মাঠে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন আমীর খসরুসহ অনেক প্রবীণ নেতার সমর্থকরা। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আব্দুল্লাহ আল নোমানকে প্রধান অতিথি করায় নেতাকর্মীরা নতুন করে উজ্জীবিত হয়েছেন। এতে নগরের ওয়ার্ড এবং থানা পর্যায়ে ডা. শাহাদাতের দাপট এবং কোন্দল কিছুটা কমতে শুরু করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
খালেদা জিয়া জেলে থাকার সময় দলের বড় একটি অংশ বিভিন্ন কারণে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। আব্দুল্লাহ আল নোমান তাদেরই একজন। প্রকৃত রাজনীতিবিদদের বাদ দিয়ে হাইব্রিড ও ব্যবসায়ী নেতাদের মূল্যায়ন করা হয়েছে তখন। এসব কারণে অনেক সিনিয়র নেতা রাজনীতির মাঠে বাইরে ছিলেন। এতে কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েন।
যদিও কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সময় শীর্ষ নেতাদের মতবিরোধ ও ভেদাভেদ ভুলে তৃণমূল নেতাকর্মীরা প্রতিটি থানা-ওয়ার্ড থেকে মিছিল সহকারে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন।
এদিকে, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, মানুষ বক্তৃতা শুনতে চায় না, অ্যাকশন চায়। জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বের কাছে চায়। শুক্রবার বিকালে কাজীর দেউড়ি নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে নুর আহম্মেদ সড়কে বিএনপির ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মহানগর বিএনপির র্যালি-পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
নোমান বলেন, সারা দেশের মানুষ হারানো গণতন্ত্র ফিরে পেতে চায়। নিজের ভোট নিজে দিতে চায়। একদফার আন্দোলনের জোয়ারে সরকার পালাবে। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না তাই তাদের পদত্যাগ করতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কোনো বিকল্প নেই।