মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা ঘিরে কক্সবাজারের চকরিয়ায় সংঘর্ষের ঘটনায় অস্ত্র হাতে যুবলীগের এক নেতার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। আজ বুধবার সকাল থেকে ওই যুবলীগ নেতার গুলি করার ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে চকরিয়ায় সংঘর্ষে ফোরকানুর রহমান (৫০) নামের জামায়াতের এক কর্মী নিহত হন। ওই সময় জামায়াতের নেতারা গুলিতে নিহতের অভিযোগ করলেও চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ মাহমুদ সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছিলেন, তাঁরা কোনো গুলিবর্ষণ করেননি। ওসির বক্তব্যের পর প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল, তাহলে কীভাবে ফোরকান কাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন।
নিউজগুলো সবার আগে পেতে আমাদের Telegram এবং WhatsApp জয়েন করুন 👇https://t.me/BartarBazarNews
https://chat.whatsapp.com/JJ0aPiQavfsDbOGfI0CzpE
মঙ্গলবারের সংঘর্ষের ঘটনায় তিনটি ছবি ও একটি ভিডিও প্রথম আলোর হাতে এসেছে। ছবি ও ৩৬ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, চকরিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীরের নেতৃত্বে একটি মিছিল পৌর শহরের মহাসড়ক দিয়ে পুরোনো বাসস্ট্যান্ড থেকে বায়তুশ শরফ সড়কের দিকে যাচ্ছে। ওই সময় বেলাল উদ্দিনকে হেলমেট পরা অবস্থায় গুলি করতে দেখা যায়। মিছিলে ৬০ থেকে ৭০ জন ছিলেন।
ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা অস্ত্র ও লাটিসোঁটা হাতে দৌড়াচ্ছেন। প্রথম সারিতে অস্ত্র হাতে চকরিয়া পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি বেলাল উদ্দিন, পাশে তাঁর ভাই প্রবাসী মিরাজ উদ্দিন। তাঁদের পেছনে আরও ১০-১২ জন আছেন। তাঁদের মধ্যে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীর ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী আমিন চৌধুরীকেও দেখা যায়।
এ বিষয়ে জানতে যুবলীগের নেতা বেলাল উদ্দিন ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীরের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও নম্বরগুলো বন্ধ পাওয়া যায়।
চকরিয়া পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি বেলাল উদ্দিনের একটি ছবি আজ সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে অস্ত্র হাতে থাকা ব্যক্তির শারীরিক গঠন বেলালের মতো। আমি চট্টগ্রামে চিকিৎসাধীন থাকায় বিস্তারিত খোঁজ নিতে পারিনি। তবে যুবলীগ অস্ত্রবাজিকে প্রশ্রয় দেয় না। প্রমাণ হলে অবশ্যই তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কক্সবাজার শহর জামায়াতের আমির আবদুল্লাহ আল ফারুক বলেন, চকরিয়ায় শান্তিপূর্ণভাবে গায়েবানা জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজা শেষে বাড়িতে ফেরার পথে বায়তুশ শরফ সড়কের মাথায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের লোকজন প্রকাশ্যে গুলি করেন। এতে জামায়াতের কর্মী ফোরকান নিহত হন। আহত হন অনেকে। এ সময় অনেককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। গুলিবর্ষণকারীরা চিহ্নিত বলে তিনি দাবি করেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে চকরিয়া থানার ওসি জাবেদ মাহমুদকে কল করা হলে তিনি ‘এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি নন’ জানিয়ে ফোন রেখে দেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা পড়তে অনুমতি দেয়নি উপজেলা প্রশাসন। এরপর তিনবার জানাজার স্থান বদল করা হয়। সর্বশেষ চকরিয়া পৌরসভার নামারচিরিংগা এলাকার মামা-ভাগিনার মাজার-সংলগ্ন স্থানে গায়েবানা জানাজা পড়ার সিদ্ধান্ত হয়। জানাজা পড়তে বিকেল চারটার দিকে মানুষ মামা-ভাগিনার মাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। আবার অনেকে ফেরত আসছিলেন। ওই সময় বায়তুশ শরফ সড়ক দিয়ে গাড়ি নিয়ে ঢোকেন চকরিয়া থানার ওসি জাবেদ মাহমুদ ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শোভন দত্ত। ওই সড়ক দিয়ে তাঁদের যেতে দেখে জানাজায় অংশ নেওয়া মানুষ উত্তেজিত হয়ে স্লোগান দেন এবং ওসি ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তার গাড়িতে হামলা করেন। পরে ২০-৩০ জন হেলমেট ও মুখোশ পরা ব্যক্তি ঘটনাস্থলে যান। এ সময় পুলিশ, মুখোশ পরা ব্যক্তি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এতে জামায়াত কর্মী ফোরকানুর রহমান নিহত হন।
নিহত ফোরকানুর রহমানের লাশ উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে ময়নাতদন্ত করেছে পুলিশ। এরপর আজ বেলা ১১টার দিকে তাঁর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বেলা আড়াইটার দিকে চকরিয়া পৌরসভার আবদুল বারীপাড়ায় জানাজা শেষে ফোরকানুরের লাশ দাফন করা হয়।
ফোরকানুরের ভাতিজা সাহাবউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ফোরকানুর রহমানের পরিবার কোনো মামলা করেননি। তবে তাঁর স্ত্রী নুরুচ্ছফার কাছ থেকে গতকাল রাতে হাসপাতালে ও থানায় পুলিশ একাধিক স্বাক্ষর নিয়েছে বলে তিনি জানান। স্বাক্ষর নেওয়ার বিষয়ে জানতে ওসি জাবেদ মাহমুদকে কল করা হলেও তিনি কথা বলতে রাজি হননি।