ভূমিকম্পে ৮২০ জন নিহত

উত্তর আফ্রিকার দেশ মরক্কোতে ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ৮২০ ছাড়িয়েছে। পর্যটকদের হটস্পট মারাকেশে এই ভূমিকম্পের ঘটনায় কিছু আগেও এই সংখ্যা ছিল ৬০০ বা তার কিছু বেশি। কর্তৃপক্ষের বরাতে বিকেল ৪টায় ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপির সর্বশেষ তথ্য বলছে, সেই সংখ্যা বেড়ে এখন অন্তত ৮২০। আল জাজিরার খবরেও মৃতের সংখ্যা ৮২০ জনের কথা বলেছে।

  • ভূমিকম্পে ৬৩২ জন নিহত.
  • দেশটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, স্থানীয় সময় শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টা ১১ মিনিটে হওয়া ভূমিকম্পটির রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ছয় দশমিক আট। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) তথ্য মতে, পর্যটননগরী মারাকেশ শহরের ৭২ কিলোমিটার বা ৪৫ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল। এর গভীরতা ছিল ১৮ দশমিক পাঁচ কিলোমিটার। ভূমিকম্পের জেরে কেঁপে উঠে উপকূলীয় শহর রাবাত, কাসাব্যালন্স ও ইসাওরিয়াও। এএফপি তার ৪টার প্রতিবেদনে বলছে, এ ঘটনায় আরও ৬৭২ জন আহত হয়েছে, যার মধ্যে ২০৫ জন গুরুতর।

    মারাকেশ শহরের ৩৩ বছর বয়সী বাসিন্দা আব্দেলহাক এল আরমানি ফোনে এএফপিকে বলেন, ‘আমরা একটি শক্তিশালী কম্পন অনুভব করেছি। ভবন নড়ছিল, তা আমি দেখতে পারছিলাম। এরকম পরিস্থিতিতে আগে কোনোদিন পড়িনি। এরপর আমি বাইরে চলে যাই। সেখানে অনেক লোক ছিল। সবাই আতঙ্কে ছিল। শিশুরা কাঁদছিল।’

    আরমানি আরও বলেন, ‘১০ মিনিটের জন্য বিদ্যুৎ চলে গিয়েছিল। একই ঘটনা ঘটেছিল টেলিফোন লাইনেও। তবে, দ্রুতই সেগুলো চলে আসে। কিন্তু, আমরা ঘরে ফিরতে সাহস পাইনি। সবাই বাইরে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়।’

    ৪৩ বছর বয়সী মাইকেল বিজেট বলেন, মনে হচ্ছিল আমার বিছানা উড়ে যাচ্ছে। আমি অর্ধনগ্ন হয়ে বাইরে বেরিয়ে পড়ি। বেরিয়ে দেখি পুরো বিশৃঙ্খল অবস্থা। ফরাসি এ নাগরিকের তিনটি বাড়ি রয়েছে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মারাকেশ শহরে।

    প্রকৌশলী ফাইসাল বাদ্দুর বলেন, ‘ভূমিকম্পের সময় আমার ভবনটি তিনবার কেঁপে ওঠে। আতঙ্কিত হয়ে আমার এলাকার সবাই ভয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে। অনেক পরিবার রাস্তায় রাত কাটায়।’

    মারাকেশ শহরের পুরাতন এলাকায় থাকা ৪৩ বছর বয়সী ফরাসি নাগরিক মাইকেল বিজেট বলেন, ‘ভূমিকম্পের সময় আমি বিছানায় শুয়ে ছিলাম। আমার মনে হচ্ছিল, আমার বিছানা উড়ছে। অর্ধ নগ্ন হয়েই আমি রাস্তায় চলে যায়।’

    এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি ভবনের ভিডিওতে দেখা যায়, একটি সরু গলির মধ্য দিয়ে উড়ে যাচ্ছে ধ্বংসাবশেষ। আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, ভূমিকম্পের সময় তাক থেকে ঘরের জিনিসপত্র পড়ে যাচ্ছে।

    মরক্কোর ভূমিকম্পে রক্তদানের আহ্বান জানিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। সাংবাদিক ইউনিস ইজ্জোহির মারাকেশের একটি রক্ত সঞ্চালন কেন্দ্র থেকে আল জাজিরাকে বলেছেন যে কর্তৃপক্ষের রক্তদানের আহ্বানের পর হাসপাতালের সামনে রক্তদাতার লাইন পড়ে গেছে।

    “এখন পর্যন্ত, প্রায় ১৩০ জন কেন্দ্রে রক্তদান করেছেন এবং প্রায় ২০০ জন এখনও ভবনের বাইরে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করছেন,” তিনি বলেছিলেন।

    ভূমিকম্পের প্রাথমিক প্রভাব সম্পর্কে জানানো সংস্থা ইউএসজিএসের সিস্টেম থেকে অরেঞ্জ অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহত হলেই এই অ্যালার্ট জারি করা হয়।

    মরক্কোর স্থানীয় গণমাধ্যম এটিকে এখন পর্যন্ত দেশটিতে আঘাত হানা সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প বলে জানিয়েছে। শক্তিশালী ভূমিকম্পটির কারণে কম্পন অনুভূত হয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ আলজেরিয়াতেও। তবে, এতে ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছে দেশটি।

    সূত্র: এএফপি, আল জাজিরা

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *