বঙ্গবন্ধুর ডাকে দেশটা স্বাধীন করেছি, অথচ আজ নিজেই পরাধীন

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বারের আক্ষেপ

শিকলে বাঁধা স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার জোয়াদ্দারের জীবন। পায়ে পরা শিকল আর তালায় বন্দি জীবন তার। বড় ছেলে লাভলু জোয়াদ্দারের আধা পাকা ঘরে দিন রাত বন্দি থাকেন তিনি। রাত হলে দরজার বাইরে আরও একটি তালা ঝুলে। খাওয়ার কষ্ট আর বিনা চিকিৎসায় খুব কষ্টে আছেন রণাঙ্গনের এই যোদ্ধা।

সরকারি ভাতাপ্রাপ্ত এই হতভাগা বীর মুক্তিযোদ্ধা টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার পাইস্কা ইউনিয়নের ভাতকুড়া গ্রামের মৃত জামাল উদ্দিন জোয়াদ্দারের ছেলে। ০১১৮০৮০০৬৩ মুক্তি বার্তা নম্বর আর ৬০১৭ গেজেট নম্বরের বীর মুক্তিযোদ্ধা জব্বার এক সময়কার সম্পদশালী সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। কিন্তু জীবনচক্রে এখন অসহায় পরাধীন তিনি।

আব্দুল জব্বার ১৯৭১ সালে ঢাকার আশরাফ জুট মিলে মেকানিক সেকশনে মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন। যুদ্ধ শুরু হলে বাড়িতে না জানিয়ে তিনি কারখানা থেকে সরাসরি পালিয়ে মেসের চৌকি, বিছানাপত্র মাত্র ৩২ টাকায় বিক্রি করে ভারতে গিয়ে নগেন্দ্র বাবুর কাছে প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরে ১১ নম্বর সেক্টরে আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন তিনি।

স্থানীয়রা জনান, স্বাধীনতার ৫ বছরের মাথায় এলাকায় ঘটে আলোচিত (নগর সরকার পরিবার) হত্যাকাণ্ড। সে ঘটনায় তিনি দুই নম্বর আসামি হিসেবে জেলে যান। টানা ১৩ বছর জেল খাটেন। আদালতে দোষ প্রমাণে ফাঁসির আদেশ হয়। এরশাদের শাসনামলে রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমতার আওতায় প্রাণভিক্ষার আবেদনে ক্ষমা পেয়ে জেল থেকে মুক্ত হন। এই মামলায় অনেক সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যান তিনি। প্রথম স্ত্রী বেঁচে থাকলেও দ্বিতীয় স্ত্রী বেঁচে নেই। দুপক্ষের তিন ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে জব্বারের। জেলে যাওয়ার পর পৈতৃক সম্পত্তি স্থানীয় প্রভাশালীদের দ্বারা বেহাত হয়ে যায়। অনেক কষ্টে কিছু জমি উদ্ধার হয়েছে। সেখানেই তিন ছেলে বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করেছেন। বড় ছেলে লাভলুর ঘরেই তার বন্দি জীবন কাটে।

জানা গেছে, তিন ভাই মিলে প্রভাবশালীদের বিশেষ সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধা বাবার ভাতা গ্রহণ করে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন। ৮ লাখ টাকা লোন তোলা হয়েছে। সেটিও তিন ভাগ হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *