আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় মসলা জাতীয়’ পণ্য পেঁয়াজের নতুন দুইটি জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের’ (বিনা) বিজ্ঞানীরা। দীর্ঘ দু বছরের প্রচেষ্টায় বিনাপেঁয়াজ-১ ও বিনাপেঁয়াজ-২ জাত উদ্ভাবনের পর তা সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার নানা’ পরিকল্পনা করছে বিজ্ঞানীরা। বিনাপেঁয়াজ-১ ও ২ জাতের উদ্ভাবক বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা’ ইন্সটিটিউটের প্রশাসন ও সাপোর্ট সার্ভিসের পরিচালক ড. মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন আমাদের উদ্ভাবিত এই দুই জাতের পেঁয়াজ’ হেক্টর প্রতি ৮ থেকে ১০ টন উৎপাদন হবে।
যেহেতু কৃষকরা শীতকালে পেঁয়াজ চাষাবাদ’ করেও চাহিদা পূরণ করতে পারছেন না সেহেতু এই জাতটি সব কৃষক চাষাবাদ করলে বিদেশি পেঁয়াজ আর প্রয়োজন হবে না। দেশের’ টাকা দেশেই থাকবে। পাশাপাশি কৃষকও লাভবান হবেন। ড. মো. আবুল কালাম আজাদের’ সাথে সহযোগী গবেষক হিসেবে ছিলেন ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কামরুজ্জামান ও ফাহমিনা ইয়াসমিন। বিনা সূত্রে জানা যায় শুধুমাত্র’ শীতকালে পেঁয়াজ উৎপাদন করে দেশে পেঁয়াজ চাহিদা মেটানো সম্ভব না। এ জন্য গ্রীষ্মকালে’ পেঁয়াজ উৎপাদন করতে এই জাতটি উদ্ভাবন করা হয়েছে।
খরিফ-১ মৌসুমে অর্থাৎ কন্দ উৎপাদন মৌসুমে এ দুই জাতের পেঁয়াজে তেমন’ কোনো পোকা-মাকড় ও রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ হয় না। এ জাত অন্য জাতের চেয়ে অধিক’ কন্দ ও বীজ উৎপাদনে সক্ষম। এ ছাড়া এগুলোর কন্দের সংরক্ষণকাল স্বাভাবিক অবস্থায় দুই মাস বা তার চেয়ে বেশি এবং একই বছরে বীজ থেকে’ বীজ উৎপাদন করা সম্ভব যা দেশে অন্য জাতের ক্ষেত্রে দেখা যায় না। এ জন্য এই পেঁয়াজ’ উৎপাদনে লাভবান হবেন কৃষক।
নতুন দুই জাত উদ্ভাবনঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ফাহমিনা ইয়াসমিন বলেন দেশে সারা বছর পেঁয়াজ চাষাবাদ’ না হওয়ায় চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।
শুধুমাত্র শীতকালে’ পেঁয়াজ চাষ করে বিপুল জনসংখ্যার জন্য পেঁয়াজ চাহিদা মেটানো সম্ভব না। এ জন্য গ্রীষ্মকালে পেঁয়াজ উৎপাদন করতে ২০০৬ সাল থেকে গবেষণা’ শুরু হয়। তিনি বলেন প্রথমে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ জাত বারিপেঁয়াজ-২ এর বীজে’ গামা রশ্মি প্রয়োগ করা হয়। এরপর পেঁয়াজের বংশগতিতে স্থায়ী পরিবর্তনের মাধ্যমে ইচ২/৭৫/২ ও ইচ২/১০০/২ নামক দু’টি মিউট্যান্ট’ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে কৃষক ও মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষা করে দেখা যায় মিউট্যান্ট দুটি বেশিরভাগ’ ক্ষেত্রে মাতৃজাত বারিপেঁয়াজ-২ ও চেকজাত বারিপেঁয়াজ-৩ এর চেয়ে অধিক কন্দ ও বীজ’ উৎপাদনে সক্ষম।
এ ছাড়া এগুলোর কন্দের সংরক্ষণকাল স্বাভাবিক অবস্থায় দুই মাস বা তার চেয়ে বেশি এবং একই বছর বীজ থেকে বীজ উৎপাদন’ করা হয়। যা দেশে প্রচলিত জাতে এমনটি দেখা যায় না। ফলে মিউট্যান্ট দুটিকে জাতীয়’ বীজ বোর্ড ২০১৮ সালে বাণিজ্যিকভাবে খরিফ-১ মৌসুমে চাষাবাদের জন্য বিনাপেঁয়াজ -১ ও বিনাপেঁয়াজ-২ নামে অনুমোদন দেয়। রোগবালাই’ বিষয়ে জানতে চাইলে ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন এ জাতের’ কন্দ উৎপাদন মৌসুমে তেমন কোনো পোকা-মাকড় ও রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ হয় না। তবে সতর্কতা হিসেবে পার্পল ব্লচ ও কাণ্ড পঁচা’ রোগ থেকে রক্ষা পেতে সুস্থ ও নীরোগ বীজ ও চারা ব্যবহার করতে হবে।
তিনি বলেন পার্পল’ ব্লচ রোগ দেখা দিলে প্রতি লিটার পানির সঙ্গে ২ গ্রাম রোভরাল বা অটোয়াল এবং ২ গ্রাম রিডোমিল গোল্ড মিশিয়ে ৭ থেকে ১০ দিন অন্তর’ ৫ থেকে ৬ বার স্প্রে করতে হবে। এ ছাড়া কাণ্ড পঁচা যদি ধরে তাহলে ভিটাভেক্স-২০০ অথবা’ ব্যাভিস্টিন প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে গাছের গোড়ায় গ্রয়োগ করতে হবে। তাহলে এই জাতের পিঁয়াজ’ চাষে সফলতা পাওয়া যাবে। তিনি বলেন এই জাত দুটি কৃষকদের কাছে ছড়িয়ে দিতে কাজ করা হচ্ছে। এ ছাড়া এই জাতের বীজ যে কেউ’ সরাসরি বিনা থেকে সংগ্রহ করতে পারবে। যদি কৃষকরা এসব পেঁয়াজ চাষে উৎসাহ পায় এবং গ্রীষ্মকালে’ চাষ করেন তাহলে দেশে পেঁয়াজ চাষে বিপ্লব ঘটবে। অন্য পেঁয়াজসহ এই দুই জাতের পেঁয়াজ দিয়ে’ চাহিদা মেটানো সম্ভব। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন বিনাপেঁয়াজ-১ ও বিনাপেঁয়াজ-২ জাতটি’ সম্পর্কে কৃষকরা এখনও জানেন না। কৃষকদের দোরগোড়ায় জাতটি ছড়িয়ে দিতে প্রচেষ্টা’ চলছে। আশা করছি সব কৃষক এই জাতটি চাষ করে পেঁয়াজের চাহিদা মেটাতে অবদান রাখবেন।