নূহের সহিংসতায় ৩০০ জন গ্রেপ্তারকৃতের ২৯৪ জনই মুসলিম, হিন্দু ৬

সম্প্রতি ভারতে বিজেপিশাসিত হরিয়ানার নূহে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার জেরে এ পর্যন্ত যারা গ্রেফতার হয়েছে তাদের ৯৮ শতাংশই মুসলিম বলে জানা গেছে। একইসঙ্গে ওই ইস্যুতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যেসব বাড়িঘর ও দোকানপাট বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সেগুলোর অধিকাংশই মুসলিমদের।

সম্প্রতি গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে এক তদন্ত প্রতিবেদনে ওই তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে।

গত ৩১ জুলাই উগ্রহিন্দুত্ববাদী বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ব্রজমণ্ডল যাত্রার সময় নূহে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার জেরে মসজিদের একজন ইমাম সাহেব, দু’জন হোমগার্ডসহ ৬ জন নিহত হয়েছিলো। পরিস্থিতি সামাল দিতে নূহ, ফরিদাবাদ, পালওয়ালসহ অনেক জায়গায় ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। এছাড়া নূহতে কারফিউ জারি করতে হয়। পরে ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রশাসন মোট ১ হাজার ২০৮ টি বাড়ি, এবং পাকা ও কাঁচা দোকান গুঁড়িয়ে দিয়েছে। দাঙ্গায় জড়িত থাকার অভিযোগে ওই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

৪ থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত গুঁড়িয়ে দেওয়ার কাজ চলে। প্রথম দিনে যাদের দোকানপাট ভাঙা হয় তাদের মধ্যে আবদুল রসিদ ওরফে নবাবও রয়েছেন। নূহ মেডিকেল কলেজের সামনে তার জমিতে ২০টি দোকান ছিল। নবাব বলেন, ‘দোকান ভাঙায় আমার এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।’

গত ৭ আগস্ট পাঞ্জাব-হরিয়ানা হাইকোর্ট প্রশাসনের পদক্ষেপে স্থগিতাদেশ দেয়। ততক্ষণে ৩৫৪ জনের স্থায়ী বাড়িঘর বা দোকানপাট ধ্বংস হয়ে গেছে। এর মধ্যে ২৮৩ জন মুসলিমের এবং ৭১ জন হিন্দুর।

সহিংসতার এক মাস পরে গণমাধ্যমের এক তদন্ত প্রতিবেদনে প্রকাশ পায়-

১) নূহ সহিংসতার পর প্রশাসন ১২০৮টি বাড়িঘর ও দোকানপাট ভেঙে দিয়েছে, অনেক জায়গায় নোটিশও দেওয়া হয়নি।

২) ৪৪৩ টি বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়, যার মধ্যে ২৮৩টি মুসলিম এবং ৭১টি হিন্দুদের। জবরদখলের অভিযোগে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে দাবি।

৩) ভেঙ্গে দেওয়া দুটি বাড়ি প্রিয়দর্শিনী প্রকল্পের ছিল। আদালতের স্থগিতাদেশ থাকা সত্ত্বেও কিছু বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে।

৪) ক্ষতিগ্রস্তদের বক্তব্য- ঘর ভাঙার আগে মালামাল বের করার সময়ও দেওয়া হয়নি।

৫) সহিংসতার জেরে ৬১টি এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়েছে এবং ৩০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যার মধ্যে ২৯৪ জন মুসলিম এবং মাত্র ৬ জন হিন্দু।

হিন্দুদের মধ্যে ৬ অভিযুক্তের সবাই জামিন পেয়েছেন।

প্রশাসনের বুলডোজার সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়েছে ফিরোজপুর ঝিরকা ও নাগিনায়। নলহার থেকে সহিংসতা শুরু হয়েছিল। এই তিনটি এলাকা থেকে সর্বোচ্চ গ্রেফতারও করা হয়েছে।

শহীদ হাসান খান মেওয়াতি কলেজ বা নূহ মেডিকেল কলেজের সামনের রাস্তার দুই পাশে মুহাম্মদ আরিফ, আব্দুল রশিদ ওরফে নবাব ও হাজী শরীফের পরিবারের জমিজমা রয়েছে। এসব জমিতে নবাবের ২০টি, আরিফের ২২টি এবং হাজী শরীফের ১১টি দোকান ছিল। আরিফ, নবাব ও শরীফের মতে, তাদের ৫৩টি দোকানের মধ্যে ৪০টি প্রশাসন অবৈধভাবে ভেঙে দিয়েছে।

অন্যদিকে, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সিদ্ধার্থ দাহিয়া বলেন, ৩৮টি দোকান ভাঙা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশ দোকানদার ছিল হিন্দু এবং ৪৫ শতাংশ মুসলিম। এছাড়া ১০টি অস্থায়ী দোকান ভেঙে দেওয়া হয়েছে। দোকানদাররা বলেন, কোনো নোটিশ না দিয়েই আমাদের দোকানগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে। নূহের সহিংসতার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক ছিল না। ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় কর্মকর্তারা এসে ৪,৪০০ বর্গফুট এলাকা বুলডোজ করা শুরু করে।

ঘরবাড়ি ভাঙার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নারীরা। এখানে বসবাসকারী শাহিনা নামে এক ক্ষতিগ্রস্ত নারী বলেন, ‘সহিংসতার পর গ্রামের সব পুরুষ বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে। একা বাজারে যেতে হয়, সন্ধ্যায় ফেরার সময় ভয় পায়। ২০ দিন থেকে রেশন নেই। প্রতিবেশীরা খাবার দিলে তারা খায়।

নূহের সহিংসতায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৩০০ জনকে গ্রেফতারের কথা বলা হলেও স্থানীয়রা বলছেন এর চেয়েও বেশি গ্রেফতার হয়েছে। সহিংসতার বেশিরভাগ এফআইআর ১৪৮, ১৪৯, ৩২৩, ৩৪১, ৪২৭, ৩৭৯, অস্ত্র আইন এবং আইপিসির ৫০৬ ধারার অধীনে নথিভুক্ত করা হয়েছে। গ্রেফতারের বিষয়ে নূহের ডিএসপি অশোক কুমার বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্তের জন্য বিশেষ তদন্তকারী টিম (সিট) গঠন করা হয়েছে। এর বিভিন্ন টিম কাজ শুরু করেছে।

সূত্র: পার্স টুডে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *