বেশ কিছুদিন ধ’রে অবাধ, সুষ্ঠু’, নিরপেক্ষ ও ‘ নির্বাচনের ‘দাবিতে নানা বক্তব্য দিলেও শেষ পর্যন্ত বিদ্যমান পরিস্থিতিতে”ই নির্বাচনে যাচ্ছে “জাতীয় পার্টি। তবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে” সমঝোতা করে নাকি পৃথক অবস্থানে থেকে নি”র্বাচনে যাবে—”সে বিষয়ে দলটির
নীতিনির্ধারক”রা এখনো দ্বিধাবিভক্ত। বর্তমান সংসদের প্রধান বিরোধী দল” জাতীয় পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে, “বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদসহ পার্টির বর্তমান সংসদ সদস্যদের একটা বড় অংশও আওয়ামী লীগের “সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে। তবে আরে”ক পক্ষ চায়, স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে। শেষ পর্যন্ত “যদি বিএনপি নির্বাচনে না আসে তাহলে আলাদাভাবে “নির্বাচন করলে জাপা সমঝোতার তুলনায়
বেশি আসন পাবে বলে”ও মনে করেন অনেকে এদিকে বাংলাদেশে”র বড় তিনটি দলকে চিঠি দিয়ে ‘পূর্বশর্ত ছাড়া সংলা”পে বসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশি”য়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু-এর চিঠির পর “রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে এ সংলাপের উদ্যোগ নেও”য়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এ”ম কাদের। গতকাল মঙ্গলবার রাত ৮টার পর রাষ্ট্র”পতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বঙ্গভবনে যান জি এম কা””দের। আর বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে আসেন রাত ৯টা
১২ মিনি”টে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতে সংলাপের উদ্যোগ নেওয়া”র আহ্বান জানান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। জাতীয় পার্টির “নির্ভরযোগ্য সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বিশেষ দূত মাশরুর মাওলা সংলাপের বি”ষয়টি অস্বীকার করে কালবেলাকে বলেন, রাষ্ট্রপতি সিঙ্গাপুর যাওয়ার আগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানকে নিয়ে বঙ্গভবনে চায়ের দাওয়াত দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে আমরা বঙ্গভবনে গিয়েছিলাম। এটি সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল
। এর বাইরে কিছু নয়। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি হিসেবে ইতোমধ্যে ৩০০ আসনে খসড়া তালিকা হয়েছে। নির্বাচনী ইশতেহারও প্রায় প্রস্তুত। সর্বশেষ সারা দেশের নেতাকর্মীদের মতামত নিতে গতকাল মঙ্গলবার দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠক হয়েছে। রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে দিনব্যাপী ওই
বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে তিন ধরনের মতামত এসেছে। এগুলো হলো—আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা, এককভাবে নির্বাচন অংশ নেওয়া এবং পরিবেশ না থাকায় বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশ না নেওয়া। কেউ কেউ বলেছেন, রাজনৈতিক বাস্তবতায় শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে হলে ১২০টি আসন ও ১০ জন মন্ত্রী আগে থেকেই নিশ্চিত করতে হবে। তবে গত ১৫ বছরে পাওয়া না পাওয়ার ইস্যুতে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বেশিরভাগ নেতা। তবে দিনশেষে নির্বাচনে যাওয়া
না যাওয়া প্রশ্নে নির্বাহী কমিটি দলের চেয়ারম্যানকে এককভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার দিয়েছে।অবশ্য নির্বাহী কমিটির সভার সমাপনী বক্তব্যে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, ‘নির্বাচনের বিষয়ে আমি একক সিদ্ধান্ত নেব না, দলের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা করে তা চূড়ান্ত করব। ভোটে অংশ নেওয়া বা না নেওয়ার বিষয়ে
সবদিক আমরা বিবেচনা করছি। দলের জন্য যা ভালো হবে তাই করব।’ সংলাপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চিঠির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যুতে আমেরিকার সরকারি ভাষ্য এখন অফিসিয়ালি জানিয়েছে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কী কী সমস্যা নিয়ে আমাদের নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তা ভাবছি। আমরা ঘরে বসে নেই। সব জায়গায় যোগাযোগ রক্ষা করছি, কথা বলছি। দলকে একটু স্বস্তিকর পরিস্থিতিতে নেওয়ার চেষ্টা
করছি।’ জানা গেছে, আজ অথবা কাল জাতীয় পার্টির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামের বৈঠক ডাকা হতে পারে। সেখানে আলোচনা শেষে নির্বাচনে কোন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবেন, সে বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা দেবেন জি এম কাদের। ইতোমধ্যে একাধিক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে জাপার অন্য অংশ ও দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। দলীয় নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচন কমিশন তপশিল ঘোষণার পরই নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি পরিষ্কার করতে চায় জাপা। ১৬ নভেম্বরের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে পরদিন বিষয়টি পরিষ্কার করা হতে পারে। দলের অন্য
একটি সূত্র বলছে, বিএনপি নির্বাচনে এলে জাপার অবস্থান এক, না এলে অন্যরকম। সংলাপে রাজনৈতিক টানাপোড়েন মিটমাটের মধ্য দিয়ে বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিলে জাপা আবারও পুরোনো রাজনৈতিক মিত্র আওয়ামী লীগের সঙ্গে হাত মেলাবে। সেক্ষেত্রে তাদের কত আসন দেওয়া হবে, তাও এক”টি বড় বিষয়। দলীয় সূত্র জানায়, গত ৫ অক্টোবর জা”পা মহাসচিব মুজিবুল
হক চুন্নুর গুলশানের বাসভবনে পার্টির” কো-চেয়ারম্যানদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সে বৈঠ”কে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরসহ ছয়জন কো-চেয়ারম্যানই উপস্থিত ছিলেন। তিন ঘণ্টার ওই বৈঠকে মহা”সচিব মুজিবুল হক চুন্নু এবং কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসে”ন বাবলা ছাড়া বাকিরা নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার পক্ষে” অবস্থান তুলে ধরেন। তবে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারি”স্টার আনিসুল ইসলাম
মাহমুদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া, না নে”ওয়ার বিষয়ে আরও ভাবার পরামর্শ দেন। বৈঠকে নির্বাচ”ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার একক ক্ষমতা দেওয়া হয় জিএম” কাদেরকে। জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচন যাব না—এটা কখনো বলিনি। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হলে নির্বাচনে যাব। আমরা নির্দিষ্ট কোনো দলকে ক্ষমতায় বসা”নোর জন্য নির্বাচনে যাব না। যদি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনে”র নিশ্চয়তা পাই, তখন জাতীয় পার্টি ভেবে দেখবে নির্বাচ”নে যাবে কী যাবে না।’ তিনি বলেন,
‘আমাদের ” যাও”য়ার প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে ইশতেহারসহ প্রার্থী তালিকা” করা হয়েছে। প্রয়োজনে আজ বুধবার পার্টির সর্বোচ্চ” নীতিনির্ধারণী প্রেসিডিয়ামের বৈঠক ডেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত” নেওয়া হবে। আমরা এজন্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ত”পশিল ঘোষণার অপেক্ষায় আছি।’ দ্রুত সময়ের মধ্যে জাপা নির্বাচনের অংশগ্রহণের বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার করবে বলেও জানান দলের এই নেতা। জাপার কো-চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য আবু হোসেন বাবলা কালবেলাকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
দলের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে সবকিছু পরিষ্কার করা হবে।’ তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষেও জাতীয় পার্টিতে একটি জো”রালো মত রয়েছে। দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আলমগীর সিক”দার লোটন কালবেলাকে বলেন, ‘দলের একটি অংশ সরকা”রের সঙ্গে থেকে নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় নির্বাচনে অংশ নিতে “চায়। আরেক অংশ এককভাবে নির্বাচনের পক্ষে। যারা দীর্ঘদি”ন ধরে মন্ত্রী, এমপি ও ভালো পদ-পদবি নিয়ে সুবিধা ভোগ করছেন, তারা দল থেকে সরে না যাওয়া পর্যন্ত; জাতী
য়” পার্টি কোনোদিন স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। অর্থা”ৎ সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের মতামতের বাস্তবায়ন হবে না।” আমরা একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চাই।’ জাতীয় ,পার্টির গঠনতন্ত্র ‘অনুযায়ী যে কোনো সিদ্ধান্ত” “নেওয়ার ব্যাপারে চেয়ারম্যানকে একক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি জাপা”র কো-চেয়ারম্যান, প্রেসিডিয়াম, যুগ্ম-সমহা”সচিবসহ সংসদ সদস্যদের বৈঠকেও নির্বাচনে অংশ নেওয়া”র বিষয়ে পার্টির চেয়ারম্যানকে এককভাবে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত” নেওয়ার এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে।