ছাত্রলীগ নেতাকে নির্যাতনকারী পুলিশ সদস্যরা ছিলেন মুখোশধারী

ডিএমপির রমনা জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশীদের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন নাঈমকে ১০-১২ জন পুলিশ সদস্য নির্যাতন করেন। তারা সবাই ছিলেন মুখোশধারী এবং তাদের পোশাক থেকে সরানো ছিল নেমপ্লেট।

নাঈম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক কারণে অনেক পুলিশ কর্মকর্তাকে চিনি। আর শাহবাগ থানার তো প্রায় সবাই চেনা। কিন্তু ওই রাতে আমি এডিসি হারুন ছাড়া কাউকে চিনতে পারছিলাম না।’

তিনি বলেন, এডিসি হারুন ছাড়া সবাই ছিলেন পোশাক পরা। কারও নেমপ্লেট ছিল না পোশাকে। ‍হয়তো খুলে রাখা হয়েছিল। মুখোশে ও বড় মাস্কে ছিল সবার মুখ ঢাকা। আমি মুখোশ টেনে ওসি তদন্ত মোস্তফাকে চিনতে পারি।

ছাত্রলীগ নেতা বলেন, জ্ঞান হারানোর আগে আমি নিজের পরিচয় দিই। বলি আমি ছাত্রলীগ করি। আমি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। ফজলুল হক হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি। পরিচয় দেওয়ার পর এডিসি হারুন আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ছাত্রলীগকে গালাগাল করে মারতে থাকেন। ১০-১২ পুলিশ সদস্য আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। তারা ১০-১৫ মিনিট বুট দিয়ে আমাকে মারতে থাকেন।

থানার কক্ষে ঢোকার পরই এডিসি হারুন নিজেই প্রথম মারধর শুরু করে। তবে বেশি মারধর করেছে ওসি তদন্ত। মার খেতে খেতে আমি ফ্লোরে পড়ে যাই। এডিসি হারুন ওসি তদন্তকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, ওরে ধর, আমার গায়ে হাত দিয়েছিল। অথচ আমি কিছুই করিনি, বলেন নাঈম।

তিনি বলেন, কেউ কেউ হাত-পা দিয়েও মারতে থাকে। এর মধ্যে এডিসি হারুন নিজের পিস্তল দিয়ে আঘাত করে আমার মুখ থেঁতলে দেন। মার খেতে খেতে আমি একটা সময় জ্ঞান হারাই।

  • আতঙ্কের এক নাম এডিসি হারুন
  • এ ঘটনার পর আহত নাঈমকে প্রথমে ঢামেক হাসপাতাল, এরপর মালিবাগের ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) রাতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ডেন্টাল বিভাগে ভর্তি করা হয় তাকে।

    এদিকে নির্যাতনের অভিযোগে এডিসি হারুনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রত্যাহার করে তাকে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট ( পিওএম) বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির এক কর্মকর্তা।

    এ ছাড়া নির্যাতনের ঘটনায় তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ডিএমপি। এ কমিটিকে আগামী দুদিনের মধ্যে তদন্ত করে ডিএমপি কমিশনার বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

    এর আগে শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর শাহবাগ থানায় ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে পুলিশ নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।

    আহত ব্যক্তিরা হলেন- ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফজলুল হক হলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ।

    ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, এডিসি হারুন শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাতে আরেক নারী পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বারডেম হাসপাতালে আড্ডা দিচ্ছিলেন। ওই সময় নারী কর্মকর্তার স্বামী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে যান। নারী কর্মকর্তার স্বামীও একজন সরকারি কর্মকর্তা। তার সঙ্গে এডিসি হারুনের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়।

    পরে এডিসি হারুন দুই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাকে শাহবাগ থানায় তুলে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করেন। এরপর অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়লে ওই দুজনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। অবশ্য পুরো ঘটনাই অস্বীকার করেন এডিসি হারুন। তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘আমি এসব কিছু জানি না।’

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *