চাঁনডারে ডাক্তর বানাইবাম, জীবনডা দিয়া চেষ্টা করবাম!

সারাবাংলা
প্রকাশ: ২৩ আগস্ট, ২০২৩ ১০:২২
‘চাঁনডারে ডাক্তর বানাইবাম, জীবনডা দিয়া চেষ্টা করবাম!’
রিকশাচালকের মেয়ে তামান্না পেল জিপিএ-৫
আলম ফরাজী, আঞ্চলিক প্রতিনিধি (ময়মনসিংহ)
‘চাঁনডারে ডাক্তর বানাইবাম, জীবনডা দিয়া চেষ্টা করবাম!’

একজোড়া ভালোমানের জুতা কিনবেন বলে মেয়েকে নিজের রিকশায় চড়িয়ে স্থানীয় বাজারে নিয়ে এসেছেন গিয়াস উদ্দিন (৫৩)। জুতা কিনে বাড়িতে যাওয়ার সময় মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) বিকালে দেখা হয় স্থানীয় এক বিত্তশালীর বাগানবাড়িতে। সেখানে মেয়েকে বেড়াতে নিয়ে এসেছেন বাবা। তখন কথা হয় তার সাথে।

জানতে চাইলে গিয়াস উদ্দিন গর্ব করে করে বলেন, ‘আমার এই চাঁনডা (চাঁদ) এইবার জিপি (জিপিএ-৫) পাইছে। অহন তারে ভর্তি করবাম ভালা কলেজে। এর লাইগ্যা আগে থাইক্যাই কাপড়, জুতা ও একটা বোরকা কিনার চেষ্টা করতাছি। এরপর তারে ডাক্তার বানাইবাম।

তয় এইডা কি পারবাম! তারপরও জীবনডা দিয়া চেষ্টা করবাম।’ এভাবেই নিজের স্বপ্নের কথা বলেন রিকশাচালক গিয়াস উদ্দিন।
প্রায় ৩০ বছর থেকে রিকশা চালিয়ে সংসার চালান জহুরুল। ছয় শতকের বাড়িটিই তার ঠিকানা।

গিয়াস উদ্দিনের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইর উপজেলার খারুয়া ইউনিয়নের নরেন্দ্রপুর গ্রামে। আবাদি জমি এক শতকও নেই। ঘুম ভাঙলেই সংসার চালানোর চিন্তা। তিন সন্তানের জনক গিয়াস উদ্দিন সন্তানদের লেখাপড়া চালাচ্ছেন রিকশা চালিয়েই।
এই অভাব ও সংকটের সাথে সংগ্রাম করা রিক্শাচালকের মেয়ে সামিয়া জাহান তামান্না এবার এসএসসি পরীক্ষায় স্থানীয় খারুয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে।

জানা গেছে, ৮১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ওই বিদ্যালয় থেকে চারজন জিপিএ-৫ পেয়েছে। তারমধ্যে তামান্না একজন।
বাবা স্বপ্ন দেখছেন মেয়েকে চিকিৎসক বানাবেন। এদিকে, সন্তান তামান্নাও স্বপ্ন দেখছেন লেখাপড়া শেষ করে পিতা-মাতা ও শিক্ষকদের মুখে হাসি ফোটাবেন। এখন তার চিন্তা একটাই পারবে কি এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে?

তার স্ত্রী কাঁথা সেলাই করে কিছু টাকা আয় করেন। তা দিয়ে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ বহন করা ওই পিতা-মাতার পক্ষে দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। গিয়াস উদ্দিন কষ্টে সংসার চালালেও এই দ্রব্যমূল্যের বাজারে এসে কিছুটা নির্বিকার। তবুও আশা করছেন সন্তানের পড়া-লেখা শেষ না হওয়া পর্যন্ত একটি বৃত্তির ব্যবস্থা কেউ করলে মন্দ হয় না।

মঙ্গলবার তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একটি জীর্ণ কক্ষে তার পড়-লেখা করার টেবিল, এলোমেলো বই-খাতা। সে সময় কথা হয় তামান্নার সাথে সাথে। তামান্না বলে, আমি সকল বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছি আমার একান্ত চেষ্টা থেকে। বাবা রিক্শা চালালেও এবং আমার মা কাঁথা সেলাই ছাড়াও মাঝে মধ্যে অন্যের কাজ করলেও আমি বাধ্য সন্তান। আমার বাবা-মা যেভাবে আমার কাছে আশা করছিলেন, আমি চেষ্টা করেছি মাত্র।

তামান্না আরো বলে, আমার শিক্ষাজীবনের সকল স্যারদের দোয়া ও আশির্বাদে এইটুকু পথ পাড়ি দিয়েছি, সামনে এর থেকেও বড় পথ আছে। আমি সকলের কাছে দোয়া ও আশির্বাদ কামনা করছি যেনো সেই পথগুলোও সঠিকভাবে পাড়ি দিতে পারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *