
চলমান এক দফার সংগ্রাম আরও বেগবান করতে ঐক্যবদ্ধভাবে থাকার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, জামায়াতের দায়িত্বশীল হিসেবে সংগঠনের প্রতিটি পরিকল্পনাকে অনুধাবন করে ময়দানে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। এ জন্য নিজেদের যোগ্যতা অর্জন ও দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে।
কোয়ানটিটির চেয়ে কোয়ালিটি সম্পন্ন অর্থাৎ যোগ্য জনশক্তি সকলক্ষেত্রে নিশ্চিত করতে হবে। গতদিন আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস পালিত হয়েছে। যে পরিমাণ মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন তারচেয়ে বেশি মানুষ বাংলাদেশে আজ হত্যার শিকার হয়েছে। আইন ও সাংবিধানিক অধিকারের কোনোরূপ তোয়াক্কা না করে পরিকল্পিতভাবে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। গুম হচ্ছে খুনের চেয়েও বেশি মারাত্মক। এটা জঘন্যতম একটি অপরাধ অথচ আওয়ামী সরকার বিরোধী দল ও মতকে দমনের হাতিয়ার হিসেবে গুমকে ব্যবহার করছে। বিগত একযুগে সাবেক সামরিক কর্মকর্তা, ব্যারিস্টার, জনপ্রতিনিধি, তরুণ, যুবক, ছাত্র, সাংবাদিকসহ প্রায় ছয় শতাধিক মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন। গুম-খুনের সাথে জড়িতদের একদিন মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচার করা হবে।
বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) রাতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত থানা আমীর-সেক্রেটারি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আবদুস সবুর ফকির ও ড. হেলাল উদ্দিন, দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান, মাওলানা আবু সাদিক। আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী যথাক্রমে দেলাওয়ার হোসাইন, কামাল হোসাইন, ড. আব্দুল মান্নানসহ ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্যবৃন্দ।
ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, গুম হচ্ছে একটি মানুষকে প্রতিদিন হত্যা করার সমান। গুম একটি পরিবারকে মুহূর্তের মধ্যে তছনছ করে দিয়ে দিকহারা করে ফেলে। একটি স্বাভাবিক মৃত্যু পরিবার সহজেই মানিয়ে নিতে পারে কিন্তু কোনো ব্যক্তির গুম হয়ে যাওয়া পরিবারের জন্য সারাক্ষণ যন্ত্রণার কারণ হয়ে থাকে। গুম হয়ে যাওয়া মানুষগুলোকে ফিরে পাওয়ার আকুতি আহাজারি আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবসে আরও বেশি জোর দাবি হয়ে সামনে এসেছে। বাংলাদেশে গুম ও অবৈধ খুনের কালচার দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেই একটি গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে শুরু করেছিল। জহির রায়হান আজও গুম হয়ে আছে, সাবেক এমপি আব্বাস গুম হয়েছে। স্বাধীনতার পরেই অসংখ্য মানুষকে গুম করে ফেলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত যাদের খোঁজ মেলেনি।
আর অবৈধ খুন তো অহরহই আমরা দেখেছি, সিরাজ শিকদারসহ অসংখ্য জাসদ নেতাকর্মীদের খুন করতে দেখেছি, ইসলামপন্থি ব্যক্তিদের খুন করতে দেখেছি। সুতরাং আজকে যারা ক্ষমতায় আছে এটা তাদের সব সময়ের চরিত্র। এটা তাদের দেশ শাসনের ও বিরোধীদের দমন করার একটি স্থায়ী অস্ত্র। বিগ্রেডিয়ার আব্দুল্লাহহিল আমান আযমী, ব্যরিস্টার আরমান, শিবির নেতা ওয়ালিউল্লাহ, আল মুকাদ্দাস ও জাকিরকে দীর্ঘদিন ধরে গুম করে রাখা হয়েছে। আমরা এখনো দাবি জানায় যতো মানুষকে আপনারা গুম করে রেখেছেন সবাইকে নিজ নিজ পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিন। পরিবারের কাছে ফেরত দিতে না পারলে তাদের সবাইকে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সামনে রেখে যান, নামাজ শেষে মুসল্লিরা তাদের বাড়িতে পৌঁছিয়ে দিবে।
প্রত্যেকটি খুন-গুম ও অন্যায়ের সাথে যারা জড়িত তাদেরকে এর জবাবদিহি করতে হবে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সর্বোত্তম বিচারক তিনি প্রতিটি অন্যায়ের সূক্ষ্ম বিচার করবেন ইনশাআল্লাহ। আজকে এই অবৈধ সরকারের কাছে দাবির চেয়ে উত্তম হবে এই জুলুমবাজ, স্বৈরাচার ফ্যাসিবাদকে দেশের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে ফেলা।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আগামীর বাংলাদেশ সুষ্ঠুধারায় পরিচালনার লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামীর থানা পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। সংগঠনকে শক্তিশালী ও বিজয়ী আন্দোলনে পরিণত করতে হলে গণমুখি হিসেবে নিজেদেরকে গড়ে তুলতে হবে। সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিতসহ সমাজের সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষের কাছে জামায়াতের দাওয়াত পৌঁছাতে হবে। একইসাথে ন্যাচারাল লিডার হিসেবে যারা গড়ে ওঠে তাদেরকে ইসলামী আন্দোলনে সম্পৃক্ত ও আন্দোলনের নেতৃত্বে নিয়ে আসতে হবে।
শক্তিশালী ও মজবুত সংগঠন গড়ে তুলে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করে যেতে হবে। এই বছর নির্বাচনের বছর সেটা মাথায় রেখে গণ-আন্দোলনকে আরও গতিশীল করতে হবে। জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সম্মুখে থেকে বলিষ্ঠ ভুমিকা পালন করতে হবে।