বাজারে প্রতি কেজি ছাগলের (খাসির) মাংসের বর্তমান মূল্য এক হাজার টাকা। তবে, অবিশ্বাস্য হলেও নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরবরাহ করা প্রতি কেজি খাসির মাংসের মূল্য মাত্র ২০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির মাংস ২০ টাকা, চিনি, চিড়া, সেমাই, মিষ্টি, প্রতি লিটার দুধ ও প্রতি পিস ডাবের মূল্য মাত্র ১০ টাকা। এমন অদ্ভুত মূল্যেই খাবার সরবরাহ করছে হাসপাতালে খাবার (পথ্য) সরবরাহকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাইদুল ট্রেডার্স।
অথচ, সরবরাহ করা খাবারের মূল্য স্থানীয় বাজারমূল্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকার সরকারি নির্দেশনা আছে। সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে, নিয়ম বহির্ভূতভাবে বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০২১-২২ অর্থবছরে পাবনা জেলার মেসার্স সাইদুল ট্রেডার্সকে রোগীদের পথ্য সরবরাহের কাজ দেওয়া হয়।
মেয়াদ শেষে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে খাবার (পথ্য) সরবরাহের দরপত্র আহ্বান করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। দরপত্র যাচাই বাছাই ও মূল্যায়ন কমিটি বাগাতিপাড়ার মেসার্স ইমন ট্রেডার্সকে নিম্ন দরদাতা হিসেবে নাটোর জেলা সিভিল সার্জন অফিসে পাঠায়। কিন্তু, সিভিল সার্জন অফিস পুনর্মূল্যায়নের জন্য নির্দেশ দেন। সেই মোতাবেক গঠিত ৫ সদস্যের পুনর্মূল্যায়ন কমিটি পুনরায় যাচাই-বাছাই শেষে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। সেখানে উল্লেখ করেন, খাসির মাংসের স্থানীয় বাজার দর প্রতি কেজি ৮শ টাকা কিন্তু ঠিকাদারের দাখিলকৃত দর ২৮ টাকা, জ্বালানি খড়ির দাপ্তরিক বাজার দর ১০ টাকা, ঠিকাদারের দর ২০ টাকা, সোনালি মুরগির দাপ্তরিক বাজার দর ২শ টাকা ঠিকাদারের দাখিলকৃত দর ৪শ টাকা, যা পিপিআর-২০০৬ এর ১৯/১ ধারার বহির্ভূত। ফলে, ইমন ট্রেডার্সকে স্থগিত করে পুনর্মূল্যায়ন কমিটি।
অথচ, পূর্বের ২০২১-২২ অর্থবছরে ২০ টাকা কেজি দরে খাসির মাংস সরবরাহকারী সাইদুল ট্রেডার্সকে আবারও খাবার (পথ্য) সরবরাহ ও অন্যান্য কাজ সম্পাদনের জন্য বলা হয়।
এ ব্যাপারে ইমন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আব্দুল মমিন বলেন, আমি ২০১৬ সাল থেকে দীর্ঘসময় হাসপাতালে পথ্য সরবরাহকারী। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাজারদরের সাথে মিল রেখে টেন্ডার জমা দিই। কারণ, টেন্ডার জমাদানের ক্ষেত্রে বাজারদরের চেয়ে অতি উচ্চ এবং কম মূল্য গ্রহণযোগ্য নয় বলে উল্লেখ আছে। কিন্তু বাজারদরের চেয়ে কম মূল্য দেওয়া পাবনার মেসার্স সাইদুল ট্রেডার্সকে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজ দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ।
অথচ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে একটি পণ্যের বাজারমূল্যের চেয়ে আমার জমা দেওয়া মূল্য কম হওয়ায় আমাকে কাজ দেওয়া হয় না।
বর্তমানে পথ্য সরবরাহের দায়িত্বে থাকা মেসার্স সাইদুল ট্রেডার্সের পরিচালক কালবেলাকে বলেন, সরকারি হাসপাতালে খাবার সরবরাহের কাজ পাওয়ার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বাধ্য হয়েই সর্বনিম্ন দাম দিতে হয়। পথ্য সরবরাহের টেন্ডার পেতে হলে যার পণ্যের দর কম তাকেই কাজ দেওয়া হয়। কাগজ-কলমে বাজারদরের সাথে সামঞ্জস্য থাকার নিয়ম থাকলেও তা কার্যকর হয় না।
বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বছরে দুই-তিন দিন হাসপাতালে খাসির মাংস সরবরাহ করা হয়। তাই, পথ্য সরবরাহের টেন্ডার পাওয়ার ক্ষেত্রে মূল্যায়ন কমিটি খাসির মাংসের বাজারদর মূল্যায়ন করেন না। অনিয়মিত পণ্যের পাশাপাশি নিয়মিত যেসব খাবার সরবরাহ করা হয় ইমন ট্রেডার্স সেসব খাবারের দর বেশি দেয়। যার ফলে, পুনর্মূল্যায়ন কমিটি তার খাবার সরবরাহের অনুমতি বাতিল করে। এ ছাড়া, খাসির মাংস সরবরাহের দিনগুলোতে নিজে উপস্থিত থেকে তদারকি করেন বলে জানান তিনি।