একদফার আন্দোলন নিয়ে বিএনপিকে কী পরামর্শ দিলো শরিকরা

চলমান আন্দোলন সফল করতে বিএনপিকে ‘কৌশল’ বদলানোর পরামর্শ দিয়েছে যুগপতের শরিকরা। বড় ধরনের কর্মসূচি ঘোষণার আগেই সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীদের ঢাকায় নিয়ে আসতে চান তারা। একদফা আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঠিক করতে গত রোববার অনুষ্ঠিত বৈঠকে শরিক দল ও জোটের নেতারা এমন পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করছে প্রায় অর্ধশত দল। এরই মধ্যে পদযাত্রা, ঢাকায় মহাসমাবেশ, ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান ও গণমিছিলের মতো কর্মসূচি পালন করেছে তারা। আগামীকাল শুক্রবার ও পরদিন শনিবার ঢাকাসহ দেশব্যাপী কালো পতাকা গণমিছিলের কর্মসূচি রয়েছে। বিএনপি বলছে, নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তারা সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবি আদায় করবে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে একদফার যুগপৎ আন্দোলন গতি লাভ করবে। আর সেপ্টেম্বরের শেষদিকে গিয়ে আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নেবে। ওই সময় ঢাকায় ফের মহাসমাবেশ, গণসমাবেশ বা বড় ধরনের কর্মসূচির চিন্তা রয়েছে দলের নীতিনির্ধারকদের। এর মধ্য দিয়ে আন্দোলনের ‘শেষ ধাপ’ শুরু হবে, যা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চলমান থাকবে। সেই পর্যায়ে বিচারালয়ের সামনে অবস্থান ছাড়াও নির্বাচন কমিশন, গণভবন, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় বা সচিবালয় ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি দেওয়া হবে। থাকবে টানা অবস্থান কর্মসূচি। চূড়ান্ত আন্দোলনের সেই ‘শেষ ধাপ’ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই বিএনপিকে কৌশল বদলানোর পরামর্শ দিয়েছেন যুগপতের শরিকরা।

nagad
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আন্দোলনের কৌশল নিয়ে শরিক দলের নেতারা বিএনপিকে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তারা মনে করেন, ঢাকাকেন্দ্রিক ‘বড় কর্মসূচি’ ঘোষণার আগেই সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীদের ঢাকায় নিয়ে আসতে হবে। তারপর কর্মসূচি ঘোষণা করতে হবে। আন্দোলন সফলের জন্য এই কৌশল অবলম্বন করতে হবে। কারণ সময় দিয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করলে সরকার ও পুলিশ প্রশাসন তখন সতর্ক হয়ে যায়। নেতাকর্মীদের ঢাকায় প্রবেশের পথগুলোতে তখন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ক্ষেত্রে তারা ২০১৩ সালে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচির উদাহরণ সামনে আনছেন।

শরিকদের আরও পরামর্শ, নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসার পর তাদের থাকার যথোপযুক্ত ব্যবস্থাও করতে হবে। কোনোভাবেই তারা যাতে হোটেলে না ওঠেন, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। কারণ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ তখন হোটেলগুলোতে সাঁড়াশি অভিযান চালায়। গত মাসে ঢাকার মহাসমাবেশের আগে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল বলে তাদের মূল্যায়ন।

যুগপৎ আন্দোলনের অন্যতম শরিক গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু কালবেলাকে বলেন, ‘সরকারের পতন ঘটিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি আদায়ই চলমান আন্দোলনের একমাত্র লক্ষ্য। আন্দোলনকে চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে গণতান্ত্রিক উপায়ে যা যা করণীয় আমরা তা করতে প্রস্তুত। এ ক্ষেত্রে শরিক দলগুলো যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে রাজপথে থাকবে।’

এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘একদফা দাবিতে বিএনপি ও শরিকরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছে। কিন্তু সরকারি দল ও পুলিশ শান্তিপূর্ণ সেই আন্দোলনেও হামলা চালাচ্ছে, গুলি করছে, মামলা দিচ্ছে। কারণ চলমান আন্দোলনে জনগণের সম্পৃক্ততা দেখে ক্ষমতাসীনরা ভীত-সন্ত্রস্ত।’

তিনি দাবি করেন, ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেই এই সরকারের পতন ঘটবে। তারপর নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার ও নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনে দেশে গণতন্ত্র ও জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে।’

এর আগে গত ২২ জুলাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ করে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী তিন সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। ওই সমাবেশ থেকে ২৮ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত, ঢাকায় ‘মহাসমাবেশ’ ও ‘তারুণ্যের সমাবেশ’-এর কর্মসূচি ছিল বিএনপির সুচিন্তিত আন্দোলন পরিকল্পনার অংশ। কারণ মহাসমাবেশের কর্মসূচি সফল করার জন্য তারুণ্যের সমাবেশকে বেছে নিয়েছিল দলটি। ফলে ওই কর্মসূচিকে ঘিরেই নেতাকর্মীরা ঢাকায় প্রবেশ করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, তারুণ্যের সমাবেশে আসা নেতাকর্মীদের বেশিরভাগই ঢাকায় থেকে যান, যারা পাঁচ দিন পরে অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন।

সব মিলিয়ে কয়েক লাখ নেতাকর্মী যোগ দেন নয়াপল্টনের ওই মহাসমাবেশে। এরপর মহাসমাবেশ থেকে পরদিন ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। সে সময় দলটির পরিকল্পনা ছিল, ঢাকায় অবস্থান করা কয়েক লাখ নেতাকর্মীকে সম্পৃক্ত করে ঢাকাকেন্দ্রিক ধারাবাহিক কর্মসূচির মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে আন্দোলনকে লক্ষ্যে পৌঁছানো। সে কারণে পুলিশের অনুমতি ছাড়াই অবস্থান কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেয় হাইকমান্ড। কিন্তু নেতাকর্মীরা ব্যাপক হারে রাজপথে না নামায় ওই অবস্থান কর্মসূচি ব্যর্থ হয়। ফলে হঠাৎ চাপে পড়ে যায় বিএনপি, বাধ্য হয় আন্দোলন পরিকল্পনা বদলাতে। তবে সেই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে শিগগির নতুন করে আন্দোলন জোরদার করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *